মিনার রশীদ
গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে খালটি কেটেছিলেন, সেই খাল দিয়ে এক কুমির আসার ১৩ দিনের মাথায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হয়েছিলেন! সর্বশেষ হিসাবমতে, সেই কুমিরটি কমপক্ষে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার সাবাড় করেছে।
দেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার কাজ জিয়া শুরু করেছিলেন, তবে শেষ করে যেতে পারেননি। আজ এটা স্পষ্ট হয়েছে, হাসিনা-এরশাদ জুটি সেটা তাকে করতে দেননি। এই জুটির প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা ।
এর সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স হিসেবে রাজনীতিটা ধীরে ধীরে একশ্রেণির দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যায়। এটাকে ব্রেক কষতে শহীদ জিয়ার যোগ্য সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া এগিয়ে এলেন। বিরাট রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে তিনি অপারেশন ক্লিন হার্ট শুরু করেছিলেন, যেখানে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মী ধরা খেয়েছিলেন! এই উদ্যোগটিতে যদি তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজ একটু সহযোগিতা করত, তবে আমাদের ইতিহাস আজ হয়তোবা ভিন্নভাবে লেখা হতো!
পুরো বিষয়টি নিয়ে যখন আমরা চরম হতাশাগ্রস্ত তখন আমাদের জুমার প্রজন্ম (জেন-জি) একটি অসাধ্য সাধন করেছে! তাদের মধ্যে অবশ্য ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরও রয়েছে। তাদের একটি অংশের আলাদাভাবে রাজনীতিতে পা রাখাকে স্বাগত জানাই। তারা যদি সত্যিকার অর্থেই রাজনীতিতে গুণগত কিছু পরিবর্তন আনতে চান, তবে পুরোনো সেই ইতিহাস তাদের জানতে হবে; সময়ের পরিক্রমায় শত্রু-মিত্রকে চিহ্নিত করতে হবে এবং দেশবাসীকেও তা ক্রমাগতভাবে চেনাতে হবে। দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপি যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তারুণ্যের এই পুরো স্রোতকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে বর্তমান নেতা তারেক রহমানও নিজের বাবা-মায়ের মতো ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
কেন জিয়া পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্স ডিফিকাল্ট করতে চেয়েছিলেন?
পলিটিক্স হয়ে পড়েছিল শুধু চমকের খেলা। যিনি যত চমক দেখাতে পারতেন, তিনি তত বড় পলিটিশিয়ান। তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যেত না। কর্মবিমুখ এই লোকগুলো ঢাকায় বসে বসে শুধু বাঘ-ভাল্লুক মারতেন, কেউ সকাল-বিকাল দিল্লি, মস্কো বা ওয়াশিংটন দখল করতেন।
তখনকার এক অবিসংবাদিত নেতা চাটার দল পুষতেন, কিন্তু বাহবা নেওয়ার জন্য মুখে বলতেন, ‘চাটার দল চেটে সব খেয়ে ফেলেছে।’ যুধিষ্ঠিরের মতো চিৎকার মারতেন, ‘আমার ডাইনে চোর, বামে চোর... আমার কম্বলটা কই?’ কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো, তার জীবদ্দশায় একটা চোরকেও পাকড়াও করেননি। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন বড় পীর। আর পীরের এই মুরিদরাই ছিলেন পলিটিশিয়ান। পীরের কথামতোই এরা চোর ও চাটুকার, চাপাবাজ তো বটেই!
এ অবস্থায় দেশের মানুষ সম্পূর্ণ এক নতুন রাজনীতিবিদকে দেখতে পেল। দেশের মানুষ জানত না তার কয় ভাইবোন, তার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের চেহারাও কেউ দেখেনি। তাকে কোথাও অলসভাবে বসে বিদেশি হুক্কায় সুখটান দিতে দেখা যায়নি। প্রায়ই দেখা যেত, এই লোকটি জোরে হাঁটছেন আর পাশের সবাই দৌড়াচ্ছেন! দেশের যে প্রান্তেই গেছেন, সব জায়গায় একই চিত্র। মনে হচ্ছিল, সারা জাতিই তার সঙ্গে এমন করে দৌড়াচ্ছে!
এমনই এক সফরে তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছিলেন। সেসব খণ্ড স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। তখন আমি নজরুল একাডেমি হাইস্কুলের ছাত্র। ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে ত্রিশালেও রাষ্ট্রপতির পথসভা হবে। হাইওয়ের পাশেই মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চের একপাশে মাইক্রোফোন ও টেবিল । অন্যপাশে সংসদীয় আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল মনসুর আহমেদ দাঁড়িয়ে । তার পেছনে অন্য কর্নারে আমি স্কাউটের সদস্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। দলনেতার শিখিয়ে দেওয়া নির্দেশনা অমান্য করে অ্যাটেনশন অবস্থায় খানিকটা কান্নি মেরে দেখি, বেচারা এমপি সাহেবও আমার মতো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মঞ্চে অন্য কোনো নেতা বা পাতিনেতা নেই।
মঞ্চের পাশেই জিপ থেকে তিনি নামলেন এবং সোজা মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করলেন। এমপি সাহেব সালাম দিলেও এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার সাহস করলেন না। আমার স্যালুট আর এমপি সাহেবের সালামের জবাব বোধহয় একসঙ্গেই ছোট্ট করে দিয়েছিলেন।
একটু পরেই অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, যে রাষ্ট্রপতি নিজ দলের এমপির সঙ্গে একটা হ্যান্ডশেক বা দু-একটা মিষ্টি কথা বললেন না, সেই রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা শেষে জনতার উদ্দেশে হাতটি বাড়িয়ে দিলেন। যতক্ষণ বক্তৃতা করলেন, তার চেয়েও বেশি সময় ধরে জনগণের সঙ্গে হাত মেলালেন।
সেই জিয়া যখন বলেছিলেন—‘আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ানস,’ তখন জনগণ সঙ্গে সঙ্গেই তা বিশ্বাস করে ফেলে।
পলিটিক্সের ছাত্র না হলেও আমাদের পলিটিক্সের মূল ব্যারামটি তিনি যথাযথভাবে ডায়াগনোসিস করতে পেরেছিলেন! তার এই ডায়াগনোসিসের সঙ্গে মিলে গেছে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউয়ের ডায়াগনোসিসটি। তিনি তার বিখ্যাত বই ‘ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট’-এর ৩৬৩-৩৬৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “এটি ১৯৭৩ সালে কানাডার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে আমার সফর সম্পর্কে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান নিজের বিশেষ বিমান নিয়ে ‘বিশেষ স্টাইল’-সহ সেখানে পৌঁছেছিলেন।
“আমি যখন অবতরণ করলাম, তখন একটি বোয়িং-৭০৭ বিমানে বড় অক্ষরে লেখা ‘বাংলাদেশ’ দেখতে পেলাম। যখন আমি ফিরে যাচ্ছিলাম, তখনো বিমানটি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল—একটানা আট দিন অলস অবস্থায়, কোনো উপার্জন ছাড়াই সময় পার করছিল!
“আমি যখন হোটেল থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হলাম, তখন দেখলাম দুটি বিশাল ভ্যান বাংলাদেশি বিমানের জন্য প্যাকেজ বোঝাই করছে। অথচ সেই সম্মেলনে মুজিবুর রহমান তার দেশের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন!
“যেকোনো জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ তাকে পরামর্শ দিতেন, আট দিন ধরে বিমান ফেলে রাখা আত্মপ্রচারের জন্য মোটেও ভালো কৌশল নয়। আপনি ভিক্ষা চাইছেন, কিন্তু বিশ্বকে দেখাচ্ছেন উৎকট বিলাসিতা!
“কেনিয়া ও নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতিরাও ব্যক্তিগত জেটে এসেছিলেন। আমি ভাবলাম, তারা কেন বিশ্বের সামনে নিজেদের দারিদ্র্য ও চরম সংকটময় অবস্থা তুলে ধরলেন না?
“আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ব্যাখ্যা করলেন, ‘যে দেশ যত গরিব, তাদের নেতারা তত বড় ক্যাডিলাক গাড়ি ভাড়া করেন!’
“তাই আমি বেছে নিলাম সাধারণ বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে ভ্রমণ করাকে, যা সিঙ্গাপুরের তৃতীয় বিশ্বের অবস্থান অনেক বছর ধরে বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছিল।”
এসব কথা নতুন প্রজন্মের জানা দরকার! আমাদের ছিল গোড়ায় গলদ! সিঙ্গাপুর কেন এত এগিয়ে গেছে, আর আমরা পিছিয়ে রয়েছি—ওপরের এই বর্ণনাটি তার মূল কারণ দেখিয়ে দিচ্ছে! যে আবেগ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মূলমন্ত্র হতে পারত, সেটাই জাতির গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে! বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক এই বিকলাঙ্গ অবস্থা থেকেই আমাদের তুলতে চেয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান!
এ কারণেই তিনি একটি নলেজ-বেইজড সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি রাজনীতি ও প্রশাসনে মেরিটোক্রেসির চর্চা শুরু করেছিলেন। হুবহু একই কাজ করেছেন লি কুয়ান ইউ।
তিনি মানুষকে ভালো আর মন্দ এই দুই ভাগে ভাগ করতেন । একদিকে ভালো, দক্ষ, সৎ ও যোগ্য মানুষ; অন্যদিকে খারাপ, অদক্ষ, অসৎ ও অযোগ্য মানুষ। এর মধ্যে তিনি প্রথম গ্রুপটিকে নিজের কাছে টেনেছেন—কে আস্তিক কে নাস্তিক দেখেননি; কে স্বাধীনতার পক্ষে আর কে বিপক্ষে, তাও দেখেননি।
পুরো জাতিকে তিনি একটা কমফোর্ট জোন বা স্বস্তির জায়গায় (Comfort Zone) নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বস্তির এই জায়গাগুলো ছিল রাজনৈতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক । এই তিনটি স্বস্তি যদি কোনো নেতা তার জনগোষ্ঠীকে দিতে না পারেন, তবে সেই দেশ ও জাতি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও এগোতে পারে না। জিয়া এই কাজটি করতে পেরেছিলেন।
ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উভয়কেই বলিষ্ঠভাবে হৃদয়ে ধারণ করতেন। নিজের সততা, মহানুভবতা কিংবা ধার্মিকতার কোনো প্রদর্শনী তার মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি। ধর্মীয় বিষয়ে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে আলেম সমাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও একেবারে তাদের মাঝে বিলীন হয়ে যাননি। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ থাকলেও সেটা নিয়েও আওয়ামী লীগের স্টাইলে অতিরিক্ত চেতনা প্রকাশ করেননি। রাষ্ট্রপতি জিয়ার এই মধ্যম পন্থা অনেককেই তার পক্ষে টেনেছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জিয়ার সেই ভাবনামতো পুরো রাজনীতি তো দূরের কথা, তার নিজের দলটিও সেভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। পলিটিক্স পলিটিশিয়ানদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়নি, বরং বহুত আরামের বস্তু হয়ে পড়েছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সিটিজেন জার্নালিজম আমাদের সামনে সেই সুযোগটি নিয়ে হাজির হয়েছে! আমরা ইচ্ছা করলে আবার সেই শহীদ জিয়ার ইচ্ছামতো পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্সটা ডিফিকাল্ট করে ফেলতে পারি!
হাতের কাছে দুটি রেডিমেড উদাহরণ মজুত আছে।
বিএনপির এক ডাকসাইটে নেতা মইন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান বানাতে যেরূপ জোর ভূমিকা রেখেছিলেন, গত ১৭ বছরে দলের পাশে তাকে তেমন করে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই বোধহয় একটু বেশি ভক্তি প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। বিষয়টি মুহূর্তেই ভাইরাল কিংবা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়ে যায়। এরপর টপ নেতৃত্ব থেকে এ-জাতীয় ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো হয়। মনের অজান্তে এই কথাটি বলে ফেলার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
অন্য একটি ঘটনায় দলের মহাসচিব ভুল বিবৃতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতির ভবনে বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, পরে দেখা গেছে তা ছিল এসি কম্প্রেসরের বিস্ফোরণ।
এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটিতে একটি শক্তিশালী ফিডব্যাক মেকানিজম গড়ে উঠেছে! এটা খুবই আশাব্যঞ্জক একটি ঘটনা।
নিজের নেতার নাম নেওয়ার আগে বাচ্চালোক ছাত্রদের অজু করার পরামর্শ দিয়ে ওই নেতা মারাত্মক বিপদে পড়ে গেছেন। অথচ চাটার দল তাদের দস্যুরানিকে শুধু নবী হিসেবে ডিক্লেয়ার করতে বাকি রেখেছিল। আশারায়ে মোবাশশারাদের মতো নিশ্চিত বেহেশতের সুসংবাদও শোনানো হয়েছে দুনিয়ায় থাকতেই। অবশ্য এ ব্যাপারে আসল কথা লিখে গেছেন সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মতিউর রহমান রেন্টু! যুগের প্লেটো-সক্রেটিস, ম্যাজিকেল লেডির খেতাব অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু মোহতারামা সেসব খেতাব একটিও উদ্গিরণ করেননি, মোসাহেবদের ন্যূনতম তিরস্কার করেননি। বরং তোহফা হিসেবে এসব নিম্নশ্রেণির মোসাহেবদের কাউকে কাউকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থানে বসানো হয়েছে।
আমি চরম আশাবাদী একজন মানুষ। বিএনপির টপ নেতৃত্বের এই সচেতনতা খুবই আশাব্যঞ্জক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিটিজেন জার্নালিজমের এই প্রসার ও প্রভাব আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে আরেকটু দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারি।
বিএনপির টপ নেতৃত্বের প্রতি আরেকটি পরামর্শ—যতদূর সম্ভব রেগুলার ছাত্র দিয়ে ছাত্রদলকে সাজান। জানি, এই কাজটি রাতারাতি করা সম্ভব হবে না। তবে এর জন্য একটা তাগিদ থাকতে হবে। দেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিটা ইউনিটের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে নিজ ক্লাসে বা ডিপার্টমেন্টে মেধা তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে থাকতে হবে—এরকম একটা নিয়ম চালু করলে নতুন প্রজন্ম রাজনীতির প্রতি উৎসাহ ফিরে পাবে। যদি সেরকম ছাত্র পাওয়া না যায়, তবে এটা স্থায়ী কমিটি হবে না। যতদিন এই শর্ত পূরণ না হবে, ততদিন আহ্বায়ক কমিটি হিসেবেই থাকবে। নতুন প্রজন্মকে গায়ের জোরে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। এখানে জোর না খাটিয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করা উচিত।
ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটিকে স্বাগত জানাচ্ছি একটি প্রত্যাশাসহ। আমরা আগের প্রজন্মের সেই বিষাক্ত রাজনীতি চাই না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শত্রু নন। আগের মতো একজন আরেকজনকে কুত্তা, বিলাই, রগকাটা, টেম্পোস্ট্যান্ড টোকাই—এসব গালাগালি না করে প্রডাক্টিভ সমালোচনা করি। একজন আরেকজনের নীতি বা পলিসির সমালোচনা করি। দেশের বর্তমান ও সামনের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে কার কাছে কী সমাধান আছে, সেসব নিয়ে বিতর্ক করি। প্রতিপক্ষকে নিজের চেয়ে অসুন্দর না বানিয়ে নিজেকে প্রতিপক্ষের চেয়ে সুন্দরভাবে তুলে ধরি।
নতুন প্রজন্ম যদি এই কাজগুলো করতে পারে, তবে তারাও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মতো উচ্চকণ্ঠে বলতে পারবে—‘উই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য সো-কল্ড পলিটিশিয়ানস!’
লেখক: কলামিস্ট
গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে খালটি কেটেছিলেন, সেই খাল দিয়ে এক কুমির আসার ১৩ দিনের মাথায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হয়েছিলেন! সর্বশেষ হিসাবমতে, সেই কুমিরটি কমপক্ষে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার সাবাড় করেছে।
দেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার কাজ জিয়া শুরু করেছিলেন, তবে শেষ করে যেতে পারেননি। আজ এটা স্পষ্ট হয়েছে, হাসিনা-এরশাদ জুটি সেটা তাকে করতে দেননি। এই জুটির প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা ।
এর সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স হিসেবে রাজনীতিটা ধীরে ধীরে একশ্রেণির দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যায়। এটাকে ব্রেক কষতে শহীদ জিয়ার যোগ্য সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া এগিয়ে এলেন। বিরাট রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে তিনি অপারেশন ক্লিন হার্ট শুরু করেছিলেন, যেখানে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মী ধরা খেয়েছিলেন! এই উদ্যোগটিতে যদি তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজ একটু সহযোগিতা করত, তবে আমাদের ইতিহাস আজ হয়তোবা ভিন্নভাবে লেখা হতো!
পুরো বিষয়টি নিয়ে যখন আমরা চরম হতাশাগ্রস্ত তখন আমাদের জুমার প্রজন্ম (জেন-জি) একটি অসাধ্য সাধন করেছে! তাদের মধ্যে অবশ্য ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরও রয়েছে। তাদের একটি অংশের আলাদাভাবে রাজনীতিতে পা রাখাকে স্বাগত জানাই। তারা যদি সত্যিকার অর্থেই রাজনীতিতে গুণগত কিছু পরিবর্তন আনতে চান, তবে পুরোনো সেই ইতিহাস তাদের জানতে হবে; সময়ের পরিক্রমায় শত্রু-মিত্রকে চিহ্নিত করতে হবে এবং দেশবাসীকেও তা ক্রমাগতভাবে চেনাতে হবে। দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপি যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তারুণ্যের এই পুরো স্রোতকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে বর্তমান নেতা তারেক রহমানও নিজের বাবা-মায়ের মতো ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
কেন জিয়া পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্স ডিফিকাল্ট করতে চেয়েছিলেন?
পলিটিক্স হয়ে পড়েছিল শুধু চমকের খেলা। যিনি যত চমক দেখাতে পারতেন, তিনি তত বড় পলিটিশিয়ান। তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যেত না। কর্মবিমুখ এই লোকগুলো ঢাকায় বসে বসে শুধু বাঘ-ভাল্লুক মারতেন, কেউ সকাল-বিকাল দিল্লি, মস্কো বা ওয়াশিংটন দখল করতেন।
তখনকার এক অবিসংবাদিত নেতা চাটার দল পুষতেন, কিন্তু বাহবা নেওয়ার জন্য মুখে বলতেন, ‘চাটার দল চেটে সব খেয়ে ফেলেছে।’ যুধিষ্ঠিরের মতো চিৎকার মারতেন, ‘আমার ডাইনে চোর, বামে চোর... আমার কম্বলটা কই?’ কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো, তার জীবদ্দশায় একটা চোরকেও পাকড়াও করেননি। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন বড় পীর। আর পীরের এই মুরিদরাই ছিলেন পলিটিশিয়ান। পীরের কথামতোই এরা চোর ও চাটুকার, চাপাবাজ তো বটেই!
এ অবস্থায় দেশের মানুষ সম্পূর্ণ এক নতুন রাজনীতিবিদকে দেখতে পেল। দেশের মানুষ জানত না তার কয় ভাইবোন, তার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের চেহারাও কেউ দেখেনি। তাকে কোথাও অলসভাবে বসে বিদেশি হুক্কায় সুখটান দিতে দেখা যায়নি। প্রায়ই দেখা যেত, এই লোকটি জোরে হাঁটছেন আর পাশের সবাই দৌড়াচ্ছেন! দেশের যে প্রান্তেই গেছেন, সব জায়গায় একই চিত্র। মনে হচ্ছিল, সারা জাতিই তার সঙ্গে এমন করে দৌড়াচ্ছে!
এমনই এক সফরে তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছিলেন। সেসব খণ্ড স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। তখন আমি নজরুল একাডেমি হাইস্কুলের ছাত্র। ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে ত্রিশালেও রাষ্ট্রপতির পথসভা হবে। হাইওয়ের পাশেই মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চের একপাশে মাইক্রোফোন ও টেবিল । অন্যপাশে সংসদীয় আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল মনসুর আহমেদ দাঁড়িয়ে । তার পেছনে অন্য কর্নারে আমি স্কাউটের সদস্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। দলনেতার শিখিয়ে দেওয়া নির্দেশনা অমান্য করে অ্যাটেনশন অবস্থায় খানিকটা কান্নি মেরে দেখি, বেচারা এমপি সাহেবও আমার মতো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মঞ্চে অন্য কোনো নেতা বা পাতিনেতা নেই।
মঞ্চের পাশেই জিপ থেকে তিনি নামলেন এবং সোজা মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করলেন। এমপি সাহেব সালাম দিলেও এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার সাহস করলেন না। আমার স্যালুট আর এমপি সাহেবের সালামের জবাব বোধহয় একসঙ্গেই ছোট্ট করে দিয়েছিলেন।
একটু পরেই অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, যে রাষ্ট্রপতি নিজ দলের এমপির সঙ্গে একটা হ্যান্ডশেক বা দু-একটা মিষ্টি কথা বললেন না, সেই রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা শেষে জনতার উদ্দেশে হাতটি বাড়িয়ে দিলেন। যতক্ষণ বক্তৃতা করলেন, তার চেয়েও বেশি সময় ধরে জনগণের সঙ্গে হাত মেলালেন।
সেই জিয়া যখন বলেছিলেন—‘আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ানস,’ তখন জনগণ সঙ্গে সঙ্গেই তা বিশ্বাস করে ফেলে।
পলিটিক্সের ছাত্র না হলেও আমাদের পলিটিক্সের মূল ব্যারামটি তিনি যথাযথভাবে ডায়াগনোসিস করতে পেরেছিলেন! তার এই ডায়াগনোসিসের সঙ্গে মিলে গেছে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউয়ের ডায়াগনোসিসটি। তিনি তার বিখ্যাত বই ‘ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট’-এর ৩৬৩-৩৬৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “এটি ১৯৭৩ সালে কানাডার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে আমার সফর সম্পর্কে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান নিজের বিশেষ বিমান নিয়ে ‘বিশেষ স্টাইল’-সহ সেখানে পৌঁছেছিলেন।
“আমি যখন অবতরণ করলাম, তখন একটি বোয়িং-৭০৭ বিমানে বড় অক্ষরে লেখা ‘বাংলাদেশ’ দেখতে পেলাম। যখন আমি ফিরে যাচ্ছিলাম, তখনো বিমানটি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল—একটানা আট দিন অলস অবস্থায়, কোনো উপার্জন ছাড়াই সময় পার করছিল!
“আমি যখন হোটেল থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হলাম, তখন দেখলাম দুটি বিশাল ভ্যান বাংলাদেশি বিমানের জন্য প্যাকেজ বোঝাই করছে। অথচ সেই সম্মেলনে মুজিবুর রহমান তার দেশের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন!
“যেকোনো জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ তাকে পরামর্শ দিতেন, আট দিন ধরে বিমান ফেলে রাখা আত্মপ্রচারের জন্য মোটেও ভালো কৌশল নয়। আপনি ভিক্ষা চাইছেন, কিন্তু বিশ্বকে দেখাচ্ছেন উৎকট বিলাসিতা!
“কেনিয়া ও নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতিরাও ব্যক্তিগত জেটে এসেছিলেন। আমি ভাবলাম, তারা কেন বিশ্বের সামনে নিজেদের দারিদ্র্য ও চরম সংকটময় অবস্থা তুলে ধরলেন না?
“আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ব্যাখ্যা করলেন, ‘যে দেশ যত গরিব, তাদের নেতারা তত বড় ক্যাডিলাক গাড়ি ভাড়া করেন!’
“তাই আমি বেছে নিলাম সাধারণ বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে ভ্রমণ করাকে, যা সিঙ্গাপুরের তৃতীয় বিশ্বের অবস্থান অনেক বছর ধরে বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছিল।”
এসব কথা নতুন প্রজন্মের জানা দরকার! আমাদের ছিল গোড়ায় গলদ! সিঙ্গাপুর কেন এত এগিয়ে গেছে, আর আমরা পিছিয়ে রয়েছি—ওপরের এই বর্ণনাটি তার মূল কারণ দেখিয়ে দিচ্ছে! যে আবেগ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মূলমন্ত্র হতে পারত, সেটাই জাতির গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে! বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক এই বিকলাঙ্গ অবস্থা থেকেই আমাদের তুলতে চেয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান!
এ কারণেই তিনি একটি নলেজ-বেইজড সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি রাজনীতি ও প্রশাসনে মেরিটোক্রেসির চর্চা শুরু করেছিলেন। হুবহু একই কাজ করেছেন লি কুয়ান ইউ।
তিনি মানুষকে ভালো আর মন্দ এই দুই ভাগে ভাগ করতেন । একদিকে ভালো, দক্ষ, সৎ ও যোগ্য মানুষ; অন্যদিকে খারাপ, অদক্ষ, অসৎ ও অযোগ্য মানুষ। এর মধ্যে তিনি প্রথম গ্রুপটিকে নিজের কাছে টেনেছেন—কে আস্তিক কে নাস্তিক দেখেননি; কে স্বাধীনতার পক্ষে আর কে বিপক্ষে, তাও দেখেননি।
পুরো জাতিকে তিনি একটা কমফোর্ট জোন বা স্বস্তির জায়গায় (Comfort Zone) নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বস্তির এই জায়গাগুলো ছিল রাজনৈতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক । এই তিনটি স্বস্তি যদি কোনো নেতা তার জনগোষ্ঠীকে দিতে না পারেন, তবে সেই দেশ ও জাতি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও এগোতে পারে না। জিয়া এই কাজটি করতে পেরেছিলেন।
ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উভয়কেই বলিষ্ঠভাবে হৃদয়ে ধারণ করতেন। নিজের সততা, মহানুভবতা কিংবা ধার্মিকতার কোনো প্রদর্শনী তার মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি। ধর্মীয় বিষয়ে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে আলেম সমাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও একেবারে তাদের মাঝে বিলীন হয়ে যাননি। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ থাকলেও সেটা নিয়েও আওয়ামী লীগের স্টাইলে অতিরিক্ত চেতনা প্রকাশ করেননি। রাষ্ট্রপতি জিয়ার এই মধ্যম পন্থা অনেককেই তার পক্ষে টেনেছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জিয়ার সেই ভাবনামতো পুরো রাজনীতি তো দূরের কথা, তার নিজের দলটিও সেভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। পলিটিক্স পলিটিশিয়ানদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়নি, বরং বহুত আরামের বস্তু হয়ে পড়েছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সিটিজেন জার্নালিজম আমাদের সামনে সেই সুযোগটি নিয়ে হাজির হয়েছে! আমরা ইচ্ছা করলে আবার সেই শহীদ জিয়ার ইচ্ছামতো পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্সটা ডিফিকাল্ট করে ফেলতে পারি!
হাতের কাছে দুটি রেডিমেড উদাহরণ মজুত আছে।
বিএনপির এক ডাকসাইটে নেতা মইন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান বানাতে যেরূপ জোর ভূমিকা রেখেছিলেন, গত ১৭ বছরে দলের পাশে তাকে তেমন করে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই বোধহয় একটু বেশি ভক্তি প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। বিষয়টি মুহূর্তেই ভাইরাল কিংবা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়ে যায়। এরপর টপ নেতৃত্ব থেকে এ-জাতীয় ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো হয়। মনের অজান্তে এই কথাটি বলে ফেলার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
অন্য একটি ঘটনায় দলের মহাসচিব ভুল বিবৃতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতির ভবনে বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, পরে দেখা গেছে তা ছিল এসি কম্প্রেসরের বিস্ফোরণ।
এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটিতে একটি শক্তিশালী ফিডব্যাক মেকানিজম গড়ে উঠেছে! এটা খুবই আশাব্যঞ্জক একটি ঘটনা।
নিজের নেতার নাম নেওয়ার আগে বাচ্চালোক ছাত্রদের অজু করার পরামর্শ দিয়ে ওই নেতা মারাত্মক বিপদে পড়ে গেছেন। অথচ চাটার দল তাদের দস্যুরানিকে শুধু নবী হিসেবে ডিক্লেয়ার করতে বাকি রেখেছিল। আশারায়ে মোবাশশারাদের মতো নিশ্চিত বেহেশতের সুসংবাদও শোনানো হয়েছে দুনিয়ায় থাকতেই। অবশ্য এ ব্যাপারে আসল কথা লিখে গেছেন সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মতিউর রহমান রেন্টু! যুগের প্লেটো-সক্রেটিস, ম্যাজিকেল লেডির খেতাব অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু মোহতারামা সেসব খেতাব একটিও উদ্গিরণ করেননি, মোসাহেবদের ন্যূনতম তিরস্কার করেননি। বরং তোহফা হিসেবে এসব নিম্নশ্রেণির মোসাহেবদের কাউকে কাউকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থানে বসানো হয়েছে।
আমি চরম আশাবাদী একজন মানুষ। বিএনপির টপ নেতৃত্বের এই সচেতনতা খুবই আশাব্যঞ্জক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিটিজেন জার্নালিজমের এই প্রসার ও প্রভাব আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে আরেকটু দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারি।
বিএনপির টপ নেতৃত্বের প্রতি আরেকটি পরামর্শ—যতদূর সম্ভব রেগুলার ছাত্র দিয়ে ছাত্রদলকে সাজান। জানি, এই কাজটি রাতারাতি করা সম্ভব হবে না। তবে এর জন্য একটা তাগিদ থাকতে হবে। দেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিটা ইউনিটের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে নিজ ক্লাসে বা ডিপার্টমেন্টে মেধা তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে থাকতে হবে—এরকম একটা নিয়ম চালু করলে নতুন প্রজন্ম রাজনীতির প্রতি উৎসাহ ফিরে পাবে। যদি সেরকম ছাত্র পাওয়া না যায়, তবে এটা স্থায়ী কমিটি হবে না। যতদিন এই শর্ত পূরণ না হবে, ততদিন আহ্বায়ক কমিটি হিসেবেই থাকবে। নতুন প্রজন্মকে গায়ের জোরে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। এখানে জোর না খাটিয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করা উচিত।
ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটিকে স্বাগত জানাচ্ছি একটি প্রত্যাশাসহ। আমরা আগের প্রজন্মের সেই বিষাক্ত রাজনীতি চাই না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শত্রু নন। আগের মতো একজন আরেকজনকে কুত্তা, বিলাই, রগকাটা, টেম্পোস্ট্যান্ড টোকাই—এসব গালাগালি না করে প্রডাক্টিভ সমালোচনা করি। একজন আরেকজনের নীতি বা পলিসির সমালোচনা করি। দেশের বর্তমান ও সামনের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে কার কাছে কী সমাধান আছে, সেসব নিয়ে বিতর্ক করি। প্রতিপক্ষকে নিজের চেয়ে অসুন্দর না বানিয়ে নিজেকে প্রতিপক্ষের চেয়ে সুন্দরভাবে তুলে ধরি।
নতুন প্রজন্ম যদি এই কাজগুলো করতে পারে, তবে তারাও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মতো উচ্চকণ্ঠে বলতে পারবে—‘উই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য সো-কল্ড পলিটিশিয়ানস!’
লেখক: কলামিস্ট
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে