আমার দেশ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক আরও জোরদার ও টেকসই হবে

সৈয়দ মিজানুর রহমান
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩১
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ১১

তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী প্রফেসর ওমের বোলাত গত ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসেন। ৩০ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে একটি বিশেষ বিমানে তার বাংলাদেশ সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। ৯ জানুয়ারি রাতে তিনি তুরস্কে ফিরে যান। বাংলাদেশ সফরের সময় আমার দেশ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেন বাংলাদেশ ও তুরস্কের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য পরিকল্পনা নিয়ে। তুরস্কের বানিজ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজনেস এডিটর সৈয়দ মিজানুর রহমান।

আমার দেশ: ওমের বোলাত, আপনাকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। মাত্র ২৪ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশে এসে এত ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি আমার দেশকে সময় দিয়েছেন। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা কী? বাণিজ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেখা যায়?

বিজ্ঞাপন

ওমের বোলাত: আপনাকে ধন্যবাদ। আমি জেনেছি দৈনিক আমার দেশ দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকার পর নতুন করে আবার প্রকাশনায় এসেছে। আপনার পত্রিকার সম্পাদক একজন সাহসী ও সৎ সাংবাদিক বলে আমরা জানি। আমি আপনাদের নতুন পথচলাকে অভিবাদন জানাই।

আপনি হয়তো জানেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৫ ভাগ বেশি। তবে বাণিজ্য ভারসাম্য বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। তুরস্কের রপ্তানি ৪২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশ থেকে ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি হয়।

বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি খাতে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি খাত, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক যানবাহন ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতে তুরস্কের উন্নত স্বাস্থ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) ক্ষেত্রেও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্প এবং আইসিটি সমাধান বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্যোগ, যেমন সোলার ও উইন্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। হালাল খাদ্যপণ্য ও স্বাস্থ্য পর্যটন, টেকনিক্যাল কনসালটেন্সি, টিভি সিরিজ ও চলচ্চিত্র প্রযোজনা এবং শিক্ষা খাতে পরিষেবা রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। প্রতিরক্ষা খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে উঠে এসেছে। তুরস্ক বর্তমানে বাংলাদেশে সাঁজোয়া যান রপ্তানি করছে এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও দক্ষতা প্রদান করছে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য কাজ চালিয়ে যাব এবং উভয় দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র বিকাশে প্রচেষ্টা চালাব।

আমার দেশ: বাংলাদেশ ও তুরস্কের বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে উভয় দেশের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

ওমের বোলাত: বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, শুধু তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভর না করে ভারী যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক যানবাহন, ইলেকট্রনিকস এবং খাদ্যপণ্যের মতো খাত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনগুলোর (JEC) ভূমিকা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ২০২৫ সালে ঢাকায় আসন্ন বৈঠক আমাদের বাণিজ্য উন্নয়নের বিষয়গুলোর সমাধানে সহায়ক হবে। বাংলাদেশে তুর্কি কোম্পানির জন্য নির্ধারিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) প্রতিষ্ঠা বিনিয়োগ বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারে।

বাণিজ্যের সরলীকরণ, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক কাঠামোগুলো সহজ করার মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব কমানো সম্ভব। এছাড়া পেমেন্ট বিলম্ব ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মতো ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে উভয় দেশের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত, যা পারস্পরিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। বাণিজ্য প্রতিনিধিদল, মেলা ও ব্যবসায়িক ফোরাম আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।

তুরস্কের পক্ষ থেকে আমরা অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ চালিয়ে যাব, যা বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।

এই পদক্ষেপগুলো আমাদের দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করবে এবং পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে। একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তুরস্ক ও বাংলাদেশ তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার ও টেকসই করতে পারবে।

আমার দেশ: তুরস্কের জন্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে। আপনি কি মনে করেন যে, ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে? কীভাবে?

ওমের বোলাত: তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে টেক্সটাইল খাতে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে তুরস্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণে তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে। এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে তুরস্কের কাঁচামাল সরবরাহ, যেমন তুলা, টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য, যা বাংলাদেশের পোশাক উৎপাদনে অত্যাবশ্যক।

টেকসই ফ্যাশনের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিবেশসম্মত পণ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশ বৈশ্বিক বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে।

এছাড়া উভয় দেশের উচিত পরিপূরক সুযোগগুলো অন্বেষণ করা এবং তৃতীয় দেশের বাজারের উদ্দেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে একসঙ্গে কাজ করা। এ খাতে তাদের শক্তিশালী টেক্সটাইল ভ্যালু চেইন ব্যবহার করে আরও বিস্তৃত বৈশ্বিক ক্ষেত্রে পৌঁছানো সম্ভব।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ডিজিটালাইজেশন ও ই-কমার্স ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্প উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের অংশীদারত্ব আরও গভীর করা যেতে পারে। এ খাতে যৌথ লক্ষ্য পূরণ করে তুরস্ক ও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতে আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারে এবং একটি পরিপূরক ও শক্তিশালী সহযোগিতার উদাহরণ তৈরি করতে পারে।

আমার দেশ: কৃষি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ ও তুরস্ক কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে কী কী নতুন বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে?

ওমের বোলাত: তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ কৃষি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাত পর্যন্ত বিস্তৃত। তুরস্ক আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ ব্যবস্থা ও সার রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কোল্ড স্টোরেজ লজিস্টিকসে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য মূল্য সংযোজন করা ও সরবরাহ-শৃঙ্খল আরও উন্নত করা সম্ভব।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ক্ষেত্রে অংশীদারত্ব বাংলাদেশের উদীয়মান টেক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে সমর্থন করতে পারে। তুর্কি আইটি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ডিজিটাল উদ্যোগে বিনিয়োগের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবকাঠামো, যেমন সৌর প্যানেল উৎপাদন ও উইন্ড ফার্ম স্থাপন এবং বিনিয়োগের জন্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে এলএনজি টার্মিনাল উন্নয়নে তুরস্কের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আমার দেশ: বাংলাদেশের চাহিদায় তুরস্কের কোন রপ্তানি পণ্যগুলো বিশেষভাবে রয়েছে এবং এগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি?

ওমের বোলাত: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের কাছে তুরস্কের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল তুলা ও টেক্সটাইল ফাইবার, টেক্সটাইল-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য ও প্রতিরক্ষা পণ্য। এই রপ্তানির চাহিদা বাড়ানোর জন্য তুরস্ক বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রদর্শনী, যেমন ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট মেশিনারি প্রদর্শনীতে (DTG) সক্রিয় অংশগ্রহণ। এই প্রদর্শনী তুরস্কের উন্নতমানের পণ্য প্রদর্শনের একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।

এছাড়া তুরস্কের বাণিজ্য মিশনগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টর, যেমন যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জাম তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়, যা সম্ভাব্য ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ায়।

আমার দেশ: বাংলাদেশের বাজারে তুর্কি পণ্য, বিশেষ করে টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি, সিরামিক ও অন্যান্য শিল্পজাত পণ্যের সফলতা নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

ওমের বোলাত: বাংলাদেশে তুর্কি পণ্যগুলোর সফলতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দূরবর্তী দেশ কৌশল’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী, কিন্তু উচ্চ সম্ভাবনাময় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই কৌশল তুরস্কের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করা এবং একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়ক।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজারে তুর্কি পণ্যের প্রতিষ্ঠার জন্য বিনিয়োগকে অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তুর্কি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে উভয় দেশের সম্ভাবনা বিবেচনা করলে এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত। এজন্য আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য ক্রমাগত উৎসাহ ও সমর্থন প্রদান করছি।

বাংলাদেশের ১৭৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা তুর্কি বেসরকারি খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আসে, যা স্কেলের অর্থনীতির সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারে। পাশাপাশি আমাদের দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘পারস্পরিক বিনিয়োগ প্রচার ও সুরক্ষা চুক্তি’ এবং ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়েডেন্স এগ্রিমেন্ট’ তুর্কি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশি বাজারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির (BIDA) উদ্যোগে তুরস্কে একটি রোডশো আয়োজন করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরা হলে, তা তুর্কি বেসরকারি খাতকে তথ্য প্রদানে ও সম্পৃক্ত করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

৭. তৈরি পোশাক, চিংড়ি ও চামড়াজাত পণ্যের বাইরে তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য কোন কোন খাতে সুযোগ রয়েছে?

তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক খাতে সম্ভাবনা রয়েছে। টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং সরঞ্জাম, কৃষি যন্ত্রপাতি ও সেচ ব্যবস্থায় বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নির্মাণ ও ভারী যন্ত্রপাতি, গহনা, অটোমোটিভ স্পেয়ার পার্টস, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রসাধনী, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিজাত পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতে মনোযোগ দেওয়া হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও শক্তি বাড়বে।

পণ্যের বাণিজ্যের বাইরেও বিভিন্ন সেবা খাতে সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য পর্যটনের ক্ষেত্রে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ দেশটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা ও বিশেষজ্ঞ সেবা সরবরাহে নেতৃত্ব দিচ্ছে। লজিস্টিক খাতে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করার সুযোগ রয়েছে, যা বাণিজ্য প্রবাহ বাড়িয়ে পণ্যের মসৃণ পরিবহন নিশ্চিত করবে। এছাড়া চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক শিল্পগুলোয়ও সম্ভাবনা রয়েছে। টিভি শো ও চলচ্চিত্রের যৌথ প্রযোজনা ও সম্প্রচারের মাধ্যমে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও দৃঢ় করা যেতে পারে।

আমার দেশ: বাংলাদেশের কৃষি খাত তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে। এ খাতে সহযোগিতা ও বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে?

ওমের বোলাত: তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে আধুনিকায়ন, বিনিয়োগ ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে। উন্নত কৃষি সরঞ্জাম যেমন ট্র্যাক্টর, সেচ ব্যবস্থা ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রপাতি রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে মূল্য চেইনে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, বিশেষ করে তৃতীয় দেশের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে। তুরস্কের কৃষি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশি কৃষক ও কৃষি পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে পারে, যা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে এবং খাতের কর্মক্ষমতা উন্নত করবে।

আমার দেশ: তুরস্ক ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কী সহযোগিতার সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান?

ওমের বোলাত: তুরস্ক ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় দেশের বিশেষত্বপূর্ণ খাতে যৌথ প্রকল্প উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের আদান-প্রদান এবং জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। কৃষি, অটোমোটিভ, স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণ ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশীদারিত্ব উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।

বিরূপ ব্যুরোক্র্যাটিক প্রতিবন্ধকতা এবং ভিন্ন ভিন্ন বাণিজ্য মানের মতো সমস্যাগুলো মাঝে মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে উভয় দেশ এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হয়ে উভয় দেশ বাণিজ্য সম্পর্কের লক্ষ্য পূরণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আমার দেশ: তুরস্ক ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কী? তুরস্ক ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কী পরিকল্পনা করছে?

ওমের বোলাত: তুরস্ক ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উল্লেখযোগ্য গতিশীলতা অর্জন করেছে, যা উভয় দেশকে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে। তৈরি পোশাক, নির্মাণ সামগ্রী, টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি, অটোমোটিভ ও খাদ্যশিল্পের মতো খাতে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা হয়েছে। এই সম্পর্ক প্রতিদিন আরও গভীর হচ্ছে, যা পারস্পরিক সুবিধার জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করছে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা এই বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করার প্রত্যাশা করছি। তুরস্ক বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্প এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি মনোনিবেশ করবে। এছাড়া, কৃষি, প্রযুক্তি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবার মতো কৌশলগত খাতে বৃহত্তর অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সরকার ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় একত্রে কাজ করতে থাকবে এবং বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আমার দেশ: তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, যা খাদ্যদ্রব্যের মূল্যে প্রভাব ফেলছে। তুরস্কের জনগণ এটি কীভাবে মোকাবিলা করছে এবং মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে আপনি কী আশাব্যঞ্জক বার্তা দিতে চান?

ওমের বোলাত: তুরস্ক অতীতের মতোই দৃঢ় সংহতি ও দৃঢ়সংকল্প নিয়ে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের সরকার মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার ও কাঠামোগত পরিবর্তন নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করেছে।

বাংলাদেশের বন্ধুদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, তুরস্ক একটি শক্তিশালী অর্থনীতি ও বিপুল সুযোগ-সম্ভাবনাসম্পন্ন দেশ। বাণিজ্য ও সহযোগিতা উভয় দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। আমরা বাংলাদেশি বন্ধুদের তুরস্ক পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানাই।

আমার দেশ: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বিনিয়োগ-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে বিশাল সম্ভাবনা আছে, দুই দেশই তা কাজে লাগাবে।

ওমের বোলাত: আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি ভবিষ্যতে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে আসব। তখন সবার সঙ্গে আরও খোলামেলা কথা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত