হোম > আমার দেশ স্পেশাল

ভোটকেন্দ্রে অবাধ প্রবেশাধিকার চায় সশস্ত্র বাহিনী

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন

গাজী শাহনেওয়াজ

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মোবাইল কোর্ট আইনের আওতায় বিচারিক ক্ষমতা এবং ভোটের দিন সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধি বিষয়টি উত্থাপন করেন। তবে সভায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সাংবিধানিক সংস্থাটি। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী বিচারিক ক্ষমতার আওতায় দায়িত্ব পালন করলেও নির্বাচনি বিধান অনুযায়ী প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী ওই ক্ষমতা পেতে চায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ গতকাল শনিবার মোবাইল ফোনে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। আমার দেশকে তিনি জানান, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে মোতায়েন করেছে। এ দায়িত্বের অংশ হিসেবে আসন্ন নির্বাচনেও তারা দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠকে তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চেয়েছে।

তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত থাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অন্য কাউকে এ ক্ষমতা দেওয়ার সুযোগ নেই। রোববার (আজ) দুপুরে অনুষ্ঠেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হলে কমিশন পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশন। সূচনা বক্তব্যে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রার্থী বা তাদের কর্মী-সমর্থকের কোনো অপরাধ প্রত্যক্ষ হলে কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি সংশ্লিষ্ট বাহিনীর এখতিয়ারের বাইরে হলেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। নির্বাচন কমিশনসহ সমগ্র প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সবাইকে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ নির্বাচনে তিন ধরনের ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ভোট না হওয়ায় স্বাভাবিক উত্তেজনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হতে পারে, যা প্রথম ঝুঁকি। এটাকে দমাতে পারলে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে এবং না পারলে শৃঙ্খলা ভাঙতে পারে। দ্বিতীয় ঝুঁকি হিসেবে একটি পক্ষের পরিকল্পিত নাশকতা এবং তৃতীয় ঝুঁকি হিসেবে কালো টাকা, জাল টাকা ও সীমান্তপারের সংযোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো নির্বাচনে উত্তেজনা থাকে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা জরুরি। তিনি বলেন, আমাদের শক্তি হলো নিরপেক্ষতা ও দৃঢ়তা। এ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হব।

নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ রাজনৈতিক প্রভাব বা সুবিধা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে সতর্ক করেন। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যা বা বিশৃঙ্খলা হলে প্রিসাইডিং অফিসার তাৎক্ষণিক তলব করামাত্রই আপনারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) সহায়তায় এগিয়ে আসবেন বলে সভায় নিদের্শনা দেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ।

অপরদিকে, সভায় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি তার বক্তব্যে মাঠপর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে আবাসন একটি চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। ওই প্রতিনিধি বলেন, নির্বাচনে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত ক্যাম্প স্থাপনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও তিনি নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রে অবাধ প্রবেশের ক্ষমতা দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি আরো জানান, বিদ্যমান বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনে কার্যকর প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হলে মোবাইল কোর্ট আইনের আওতায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।

নির্বিঘ্ন আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার জন্য নৌবাহিনীর প্রতিনিধি ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান। পার্বত্য এলাকায় নির্বাচনি সামগ্রী যথাসময়ে পৌঁছানোর জন্য এ তালিকা আগেই সরবরাহের অনুরোধ জানান বিমান বাহিনী প্রতিনিধি।

নির্বাচনের সময় প্রার্থী ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ চান উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার কিছুটা আক্ষেপ করে সভায় বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে এতে একটি সমস্যা তৈরি হয়। কারণ পুলিশের পক্ষে সব প্রার্থীর জন্য পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব হয় না।

সভায় র‌্যাব ডিজি বলেন, কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে তাকে তাৎক্ষণিক কৈফিয়ত তলব ও ব্যক্তিগত হাজিরার মাধ্যমে ব্যাখ্যা নিতে হবে। এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সভায় ৩৩ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনে এক বাহিনী অন্য বাহিনীকে নিদের্শনা (কমান্ড) দিতে পারবে না। সবকিছুই সমন্বয় হবে সেল কাঠামোর মাধ্যমে। নির্দেশনা থাকবে নিজ নিজ বাহিনীর চেইন অব কমান্ডে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বাহিনী এখতিয়ারের বাইরে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেবে। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় লিড অর্গানাইজেশন হিসেবে কাজ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কৃষক লীগ ক্যাডারের কারবার চালান স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা

চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে হামলার দাবি গুজব

জনসমুদ্রে হাদির জানাজা

শোকে ক্ষোভে উত্তাল দেশ

রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার

চলে গেলেন বিপ্লবী হাদি

সচিবালয়জুড়ে কর্মচারীদের মধ্যে বরখাস্ত-ভীতি

ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ৫০ ব্যক্তি উচ্চ ঝুঁকিতে

বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ চায় দুই মন্ত্রণালয়

অভিবাসনে ব্যয় বেড়েছে, কমেনি হয়রানি