রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল যেন পরিণত হয়েছে আওয়ামীপন্থি শ্রমিক নেতা ও কর্মকর্তাদের এক ধরনের ‘পুনর্বাসন কেন্দ্রে’। সরকার পরিবর্তনের পরও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী সিবিএ নেতাদের চাকরি, হাজিরা ও সুবিধায় কোনো ছেদ পড়েনি। কারাগারে থাকার পরও তাদের অফিসে উপস্থিত দেখানো হচ্ছে, আবার জেল থেকেই নিয়মিত ছুটির আবেদন মঞ্জুর হচ্ছে! এমন নজিরে তোলপাড় এখন পুরো প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি হামলার মামলায় গত ২০ জুলাই বিকালে নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন যমুনা অয়েলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি ও শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন। তার বিরুদ্ধে থানা ভাঙচুরসহ একাধিক মামলা রয়েছে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। এর মাঝে একবার জামিন পেলেও কারাফটক থেকে ফের গ্রেপ্তার হন তিনি। যমুনা অয়েলের প্রধান স্থাপনা টার্মিনাল অফিসে অপারেটর এসটি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
আশ্চর্যজনকভাবে ২০ জুলাই গ্রেপ্তারের দিন থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ২০ কর্মদিবস পর্যন্ত তাকে কর্মস্থলে উপস্থিত দেখানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ১৯ আগস্ট প্রথমবারের মতো এজিএম (টার্মিনাল) মাকছুদুর রহমান প্রধান কার্যালয়কে ১০ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত আবুল হোসেন কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন বলে লিখিতভাবে জানান।
এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে কখনো এক মাস, আবার কখনো ২০ দিন পরপর চিঠি দিয়ে আবুল হোসেনের অনুপস্থিতির বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে অবগত করছেন এজিএম (টার্মিনাল)। একইসঙ্গে কারাগারে থাকার বিষয়টি গোপন করে বিশেষাধিকার ছুটির দরখাস্তও পাঠানো হচ্ছে মানবসম্পদ বিভাগের জিএমের কাছে। জিএম মাসুদুল ইসলামও সেই আবেদন অনুমোদন করছেন প্রতিনিয়ত।
অথচ চাকরিবিধি অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ কিংবা দুর্নীতির কারণে কোনো সরকারি কর্মচারী কারাগারে গেলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম রয়েছে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বরখাস্তই থাকবেন। বিচার চলাকালে কোনো কর্মচারী জামিনে বের হয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে চাইলে তাকে আদালতের নির্দেশনা আনতে হবে। কিন্তু আবুল হোসেনের ক্ষেত্রে এসবের কিছুই হয়নি। সাময়িক বরখাস্ত তো দূরের কথা, কারাগারে থাকাবস্থায় তাকে কর্মস্থলে উপস্থিত দেখানোর মতো নজির তৈরি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন কোম্পানি যমুনা অয়েল।
একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ এয়াকুবের বিরুদ্ধেও রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগের পক্ষে সরাসরি অংশ নেওয়ার অভিযোগ। একাধিক মামলাও দায়ের হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকার পতনের পর টানা কয়েক মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন এয়াকুব। তবে শ্রমিক লীগ নেতা থেকে ভোল পাল্টে এখন শ্রমিক দল নেতা সেজেছেন। এরপর থেকে মাঝেমধ্যে অফিসে এলেও মামলার কারণে নিয়মিত অফিস করেন না তিনি। কিন্তু খাতা-কলমে তাকে একদিনের জন্যও অনুপস্থিত দেখানো হয়নি। মাসে এক থেকে দুবার অফিসে এসে পুরো মাসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন তিনি।
সূত্র জানায়, এইচআর বিভাগের জিএম মাসুদুল ইসলাম কোম্পানি সচিবসহ একাই তিনটি পদ দখল করে আছেন। মূলত তিনিই আওয়ামীপন্থি0 কর্মকর্তাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে আছেন। শুধু সিবিএর সভাপতি-সম্পাদকই নয়, আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাই বীরদর্পে আছেন যমুনা অয়েলে।
এ ব্যাপারে যমুনা অয়েলের মানবসম্পদ ও বিপণন বিভাগের জিএম মাসুদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।