হোম > রাজনীতি

শেষ মুহূর্তে জামায়াতের চমক

রকীবুল হক

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে নানা আলোচনা-জটিলতার পর শেষ মুহূর্তে বেশ চমক দেখাল জামায়াতে ইসলামী। আন্দোলনরত আট দলে বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি এবং জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বে থাকা তরুণ যোদ্ধাদের দল এনসিপিকে যুক্ত করে ১০ দলীয় নির্বাচনি সমঝোতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন এ চমক সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আরেক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ও রাওয়া ক্লাবের চেয়ারম্যান আবদুল হককে ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। এটিও সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ আলোচিত হচ্ছে।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্দোলনরত আট দল আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনি রাজনীতির নতুন এ মেরূকরণের ঘোষণা দেন। এ সময় অলি আহমদসহ অন্য দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সময় ও সুযোগের অভাবে সেখানে এনসিপির নেতারা উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির বলেন, এটা আমাদের একটা মজবুত নির্বাচনি সমঝোতা। এটা জোটের চেয়েও মজবুত। সারা দেশে ৩০০ আসনে আমরা বসে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আসন আমরা নির্ধারণ করেছি। আসন সমঝোতা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটা নমিনেশন জমার পরপরই সুন্দরভাবেই সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, আরো অনেকের আগ্রহ থাকলেও তাদের আর এই সমঝোতা প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। তবে জাতিকে গড়ার জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দেন তিনি।

সূত্রমতে, জুলাই বিপ্লবের কিছু দিনের মাথায় দেশের প্রায় সব ইসলামি দলের নেতা ও শীর্ষ আলেমদের নিয়ে বৈঠক করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেখানে তিনি আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব করলে প্রায় সবাই তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট মহলে নানা তৎপরতার পর গত সেপ্টেম্বরে আট দলের ঐক্যবদ্ধ যাত্রা শুরু হয়। জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও অন্য দলগুলো হলো—চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।

সংস্কার, বিচার, গণভোট, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ বিভিন্ন দাবিতে এসব দল ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে ব্যাপক সাড়া পায়। জোরদার হয় আন্দোলনরত দলগুলোর ঐক্য। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সব দলের তৃণমূল থেকে জোর মতামত আসে। সে অনুযায়ী গত ৯ ডিসেম্বর থেকে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে বেশ জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে এমনই সময়ে নতুন করে আলোচিত দুটি দলের যুক্ত হওয়ার কারণে এ প্রক্রিয়ায় আরো বিলম্ব হচ্ছে। তবে জামায়াতের নির্বাচনি জোটের কলেবর বৃদ্ধির খবরে সবার মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ১০ দলীয় নির্বাচনি সমঝোতার বিস্তারিত তুলে ধরেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জাতীয় জীবনের একটি কঠিন বাঁকে বাংলাদেশ যখন এসে দাঁড়িয়েছে, সে সময় প্রিয় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, একটি শোষণ-বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তির ওপর সমাজকে দাঁড় করানোর জন্য অঙ্গীকার নিয়ে আমরা আটটি দল এতদিন কাজ করে আসছিলাম। আজ আরো দুটি দল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দল দুটি হলো—এলডিপি ও এনসিপি। একটু আগেই এনসিপির সঙ্গে আমাদের বৈঠক শেষ হয়েছে। তারা এ বৈঠকে আসার সময় ও সুযোগটা পাননি। তাছাড়াও দলীয় পরিসরে তারা একটি মিটিং করে রোববার রাতেই তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পরিষ্কার করে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেবেন। তাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরাসরি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের অবহিত করেছেন। তারা আরেকটি প্রেস কনফারেন্স করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

মুক্তিযুদ্ধে সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসা কর্নেল অলি আহমদ ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দলটি ছেড়ে ২০০৬ সালে এলডিপি প্রতিষ্ঠা করেন অলি। সম্প্রতি তার দলের মহাসচিবের দায়িত্ব ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন রেদোয়ান আহমেদ। তিনি দলটির প্রার্থী হচ্ছেন।

এসব দলের একত্রিত হওয়ার ভিত্তি ও লক্ষ্য সম্পর্কে জামায়াত আমির বলেন, এটা আমাদের একটি মজবুত নির্বাচনি সমঝোতা। যেহেতু দুটি দল শেষপর্যায়ে এসে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, আরো অনেকগুলো দল আগ্রহী ছিল। অনেকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আমরা সেভাবে তাদের সম্পৃক্ত করতে পারছি না। এজন্য আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু জাতীয় জীবনে এ জাতিকে গড়ার জন্য ইনশাল্লাহ আমরা তাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করব।

তিনি বলেন, আমাদের আসন সমঝোতা প্রায় শেষ। সামান্য কিছু বিষয় যা রয়েছে, নমিনেশন জমার পরপর সেটাও ইনশাল্লাহ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সুন্দরভাবেই সমাধান করতে পারব। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না, এ ব্যাপারে আমরা খুবই আস্থাশীল।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা কোন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম, তা সবাই জানি। আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানি চব্বিশের গণআন্দোলন, গণবিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কার্যত জাতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে এবং নতুন করে আজাদির একটি আশা অন্তরে পোষণ করছে।

তিনি বলেন, এ বিপ্লব চব্বিশে পরিপূর্ণতা পেলেও ত্যাগ ও কোরবানি শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। পিলখানায় যে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা জীবন দিয়েছিলেন। এরপর একের পর এক বিভিন্ন দল, আলেম-ওলামা, সিভিল সোসাইটি, সাংবাদিক সমাজÑসবার ওপরই নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে। এখন জাতি দীর্ঘস্থায়ী উন্নতির দিকে এগোতে চায়, সামনের দিকে এগোতে চায়, একটি সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। আমাদের যুবসমাজ যেজন্য জীবন দিয়েছিল, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব।

জামায়াত আমির বলেন, আজ জাতি যে জায়গায় উপনীত হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেড় মাসেরও কম সময় আমাদের হাতে রয়েছে। এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা চাই কোনো হেরফের না হয়ে ঘোষিত তারিখেই নির্বাচন হোক। আমরা আশা করছি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি বলেন, এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। এখনো সবার জন্য সমতল মাঠ তৈরি হয়নি। সে মাঠ তৈরির কাজ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। যেকোনো ধরনের লোভ-লালসা, ভয়ভীতি এবং কারো প্রতি কোনো ধরনের আনুকূল্যের ঊর্ধ্বে উঠে তারা তাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করবেনÑজাতি এটা প্রত্যাশা করে। এর যেকোনো ধরনের ব্যতিক্রম জাতি মানবে না। কারণ এ ব্যতিক্রমটাই তো আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো বছর কেড়ে নিয়েছে। তিনটি নির্বাচনে অধিকাংশ মানুষ ভোট দিতে পারেননি। এভাবেই আমাদের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছিল। আগামীতে ওই ধরনের কোনো প্রক্রিয়া কেউ করতে চাইলে আমরা বরদাস্ত করব না। সবার ভোটের জন্য আমাদের লড়াই হবে ইস্পাত কঠিন।

তিনি বলেন, এ ঐক্য জাতীয় ঐক্য। বর্তমান জেনারেশনের সঙ্গে মিলেমিশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে চাই। এজন্য গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা চাই।

জামায়াত আমির বলেন, এ সমঝোতাকে জোট বলুন আর নাই বলুন, আমার কিন্তু জোটের চেয়েও মজবুত, আরো ঐক্যবদ্ধ। এটা নিয়ে আমরা এগোবো। দেশ, জাতি, মানবতা ও দ্বীনের স্বার্থে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, আসন সমঝোতার বিষয়ে অল্প একটু বাকি আছে, অতিসত্বর সব স্পষ্ট করে দেব ইনশাল্লাহ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা দেশ গঠনের জোট, নির্বাচনের জোট, রাজনৈতিক জোট। এটাকে জোট বলুন আর সমঝোতা বলুন, এটা সব ধরনের উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য। আমরা দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতেও একত্রে আন্দোলন করব।

আসন বণ্টন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, এখানে একক কোনো দল আসন বণ্টন করবে না। আমরা যেখানে যার ন্যায্যতা, তার ভিত্তিতেই আসনগুলো তাদের হাতে তুলে দেব। সবাই সবাইকে তুলে দেবে, এখানে নির্দিষ্ট কোনো দল তুলে দেবে না। আমরা সবাইকেই কবুল করব কিন্তু এ সময়ে আর কাউকে অ্যাকোমোডেশন করাটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তারপরও বিশেষ কোনো বিষয় থাকলে আমরা আলোচনা করব।

জামায়াত কতটি আসনে নির্বাচন করবেÑএমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

এদিকে ১০ দলের কে কতটি আসন পাচ্ছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ কৌতূহল বিরাজ করছে। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও জামায়াত অন্তত ১৯০টিতে এবং অন্য ৯টি দল ১১০টিতে একক প্রার্থী দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে এনসিপির ৩০টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনও ৩০টির বেশি আসন পাচ্ছে। এছাড়া এলডিপি পেতে পারে ছয়টি আসন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেনÑএলডিপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বিডিপির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

এনইআইআর বাস্তবায়ন নিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জে সরকার

অভিযুক্ত আল আমিনের উত্থান আওয়ামী আমলে

থার্ড টার্মিনালের নকশায় ত্রুটি, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক

সীমান্তে অস্ত্র পাচারের নেটওয়ার্ক, নির্বাচনে নাশকতার প্রস্তুতি

জামায়াত ও সমমনাদের নির্বাচনি জোট অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা

হিন্দুত্ববাদী ভারতের কপট মাইনরিটি কার্ড

সাজানো চার্জশিটে বছরের পর বছর জেলে ধুঁকছেন বহু আলেম

কামালের দাপটে ছেলে জ্যোতিরও বিপুল অবৈধ সম্পদ

মেট্রোস্টেশনে মেলে প্রাথমিক চিকিৎসা, জানেন না যাত্রীরা

পাঠ্যবই পরিমার্জনে গুরুত্ব পেল জুলাই বিপ্লব