ঘনকুয়াশায় মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের ধাক্কায় নিহত ভোলার ৩ জনের বাড়ি লালমোহনে। শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে রাত ২টায় এমভি এডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ১৫ জন যাত্রী।
মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে বরিশাল রুটের এমভি এডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটির মাঝ বরাবর ধাক্কা লাগে।
জানা গেছে, নিহত চারজনের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি ভোলার লালমোহনে। এদের মধ্যে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড কাদিরাবাদ বেপারী বাড়ির সেরাজল বেপারীর ছেলে রাজমিস্ত্রি আব্দুল গনি। একই এলাকার গোলাপ খা বাড়ির কালু খা এর ছেলে মো. সাজু এবং পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড লালমিয়া গাজী বাড়ির মো. হোসেনের মেয়ে সাথী।
বদরপুর ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড কাদিরাবাদ এলাকার মৃত আব্দুল গনির বাড়িতে গেলে দেখায় যায়- স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হওয়ার দৃশ্য। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে চিৎকার করে লাইজু বেগম বলছেন তার তিন সন্তানের কি হবে।
লাইজু বেগম জানান, আমি কালকে তাকে ঢাকা যেতে বারবার নিষেধ করেছি। ঢাকার কাজের কারণে সে কালকেই চলে গেছে। রাতেই মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পাই।
পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামের লাল মিয়া গাজি বাড়ির গার্মেন্ট কর্মী রিনা বেগমের বাড়িতে চলছে আহাজারি। স্বামী মো. হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। ৭-৮ বছর আগে স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে যায় রিনা বেগম। তাদের একমাত্র কন্যা সাথী বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে থাকতো। স্থানীয় কচুয়াখালী মহিলা মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাথী মায়ের করুন মৃত্যুর খবর শুনে বার বার মূর্চ্ছা যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা ও মা একসাথে মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লঞ্চে উঠে কচুয়াখালী ঘাট থেকে। যাবার বেলায় বলে যান রোজার ঈদে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই রাতেই শুনতে পান মায়ের মৃত্যুর সংবাদ। বাবাও গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের বরাতে জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের মাঝ বরাবর সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটির দ্বিতীয় তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহত নারী যাত্রী সংঘর্ষের মুহূর্তে মর্মান্তিকভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ধাক্কার তীব্রতায় বহু যাত্রী নদীতে পড়ে যান। তাদের মধ্যে কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলমান থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহতদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। স্থানীয় জেলে ও নৌযান শ্রমিকদের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মাঝনদীতে ক্ষতিগ্রস্ত জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি ডুবো-ডুবো অবস্থায় ভাসতে থাকলে ভোলা থেকে ঢাকাগামী এমভি কর্ণফুলী-৯ লঞ্চ দ্রুত এগিয়ে এসে অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
ঘটনার পরপরই নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
লালমোহন থানার ওসি অলিউল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী পরিবার সহায়তা চাইলে যথাযথ সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া মৃতদের লাশ এলাকায় আসলে আমাদের ফোর্স সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে।