চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কলেজ রোড, ভোলাগিরি, সোবাহানবাগসহ পৌরসদরের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত। ফলে পৌরবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পৌর এলাকার অপরিষ্কার নালা-নর্দমা, অযত্নে ফেলা আবর্জনা ও অপরিকল্পিত ডাস্টবিনের কারণে মশার বংশবিস্তার বেড়েছে বহুগুণে। পৌর বাজার এলাকায় নির্ধারিত ডাস্টবিন না থাকায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে ময়লা ফেলছে ড্রেন বা সড়কের পাশে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে শেখপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলার ফলে বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ময়লার পাহাড়। এর দুর্গন্ধে স্থানীয়দের ও যানবাহনের যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। পাশাপাশি ছড়াচ্ছে জীবাণু এবং এই ময়লার ভাগাড়ের স্তূপ এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রেই পরিণত হয়েছে।
নাগরিকদের অভিযোগ, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও তারা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো জীবনযাপন করছেন। পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলমের নেতৃত্বে কেবল তার নিজ ওয়ার্ডে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হলেও অন্যান্য ওয়ার্ডগুলো অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত।
২ নম্বর ওয়ার্ডের পন্থছিলা এলাকার ভাঙা রাস্তার এক বছর আগে কাজের দরপত্র হওয়া সত্ত্বেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। পৌর কর্তৃপক্ষও ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রাস্তার বেহাল অবস্থায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
পৌরসভার নুনাছড়া, বটতলা, শেখপাড়া, নলুয়াপাড়া, দাসপাড়া, শেখনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতের বেলায় রাস্তার বাতি না থাকায় সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে থাকে এলাকা। এতে অপরাধী ও মাদকাসক্তদের কার্যক্রম বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পৌরসভার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মোজাহের উদ্দিন আশরাফ আমার দেশকে বলেন, সীতাকুণ্ড পৌরসভা কর্তৃপক্ষের ঘুম না ভাঙায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সচিব নজরুল ইসলাম দীর্ঘ ১৭ বছর একই পদে থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছেন। লাইসেন্স বই না থাকার অযুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারদের নতুন লাইসেন্স না দেওয়া এবং লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার শামসুল আলম আজাদ আমার দেশকে বলেন, সচিব নজরুল ইসলামের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। পৌরসভার পিছনে কোটি টাকার সরকারি গাড়ি অযত্নে পড়ে আছে। শেখপাড়ার ময়লার ভাগাড় এখন ডেঙ্গুর মূল কেন্দ্র।
তিনি জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সচিব নজরুল ইসলামকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পর তিনি তদবির করে আবারও একই পথে ফিরে এসেছেন।
বর্তমানে পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, মশা নিধনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরানো ডাম্পিং স্থানগুলো সরিয়ে নতুন পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে মহাসড়কের পাশের ময়লার ভাগাড় সরিয়ে পাহাড়ের নির্জন এলাকায় স্থানান্তর করা হবে। সীতাকুণ্ডকে আগামীতে একটি গ্রীন পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন আমার দেশকে বলেন, কলেজ রোড, ভোলাগিরি ও সোবাহানবাগ এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নালা–নর্দমা পরিষ্কার রাখা, পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করা ও নিয়মিত ফগিং (ধোঁয়া দেওয়া) চালু রাখা জরুরি। তিনদিনের বেশি কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।