শরীয়তপুরে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে গভীর রাতে বোমা (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫ থেকে ৭ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ঘটনাটি ঘটে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) গভীর রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের গয়ঘর খলিফা কান্দি এলাকায়। এ ঘটনায় রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় মামলা করা হয়।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র ও বোমা (ককটেল) নিয়ে আলাউদ্দিন বেপারীর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাড়ির উঠোনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে একটি টিনের ঘর, ‘আরিশ এগ্রো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড পিটিয়ে ও কুপিয়ে ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা চারটি ফলগাছও কেটে ফেলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন—গয়ঘর খলিফা কান্দি এলাকার বিল্লাল হাওলাদার (৪২), হারুন অর-রশিদ হাওলাদার (৫৫), বিলদেওনিয়া এলাকার আতাহার মাদবর (৩৮), আলমাছ মাদবর (৪০) ও মোতাচ্ছের মাদবর (৪২)।
ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন বেপারীর মেয়ে সাদিয়া ইসলাম এনি বলেন, রাত আড়াইটার দিকে ওয়াশরুমে যেতে ঘর থেকে বের হই। তখন বিল্লাল, হারুন অর-রশিদ, আতাহার, আলমাছ ও মোতাচ্ছেরসহ কয়েকজনকে আমাদের উঠোনে স্পষ্ট দেখতে পাই। তারা বোমা নিক্ষেপ করে এবং রামদা, ছ্যানদা, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। আমি চিৎকার করলে পরিবারের সবাই বের হয়ে আসে। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক হাওলাদার বলেন, রাতে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। পরে জানতে পারি আলাউদ্দিনের বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। এলাকায় ভয় ছড়িয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন বেপারী অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার জমিতে পেঁপে বাগান ও একটি ফার্ম করার জন্য মাটি ভরাট করছিলাম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিল্লাল হাওলাদারসহ কয়েকজন আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমার এক শ্রমিককে মারধর করা হয়। এরপরই গভীর রাতে বোমা হামলা চালানো হয়। এখনো আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
অন্যদিকে অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বিল্লাল হাওলাদারের বোন নাছিমা বেগম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, জমি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাউদ্দিনের বিরোধ আছে। আমরা শুধু বলেছিলাম জমি মাপঝোক ছাড়া এস্কেভেটর না লাগাতে। তারা নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে এখন আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টিও জানা গেছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।