প্রায় সাড়ে ৪৬ কোটি টাকার ‘প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পের কোনো সুফল দেখছেন না হালদাপাড়ের মানুষ। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে।
হালদা নদীকে সরকার ‘মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করে এবং এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ২০২৭ সালে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত প্রকল্প কর্মসূচির সিকি ভাগও অর্জিত হয়নি।
জানা যায়, ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার এই প্রকল্পের আওতায় হালদার দুই পাড়ে রাউজান ও হাটহাজারীর ছয়টি পুরোনো হ্যাচারি সংস্কার, মৌসুমি ডিম আহরণকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, হ্যাচারিসহ সংলগ্ন পুকুর সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকল্পের আওতায় ছিল দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান, ডিম সংগ্রহকারী ও মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীর দূষণরোধ এবং যান্ত্রিক নৌযান বন্ধে অভিযান পরিচালনা। কিন্তু প্রকল্প শুরুর দুই বছর অতিবাহিত হলেও এর কোনোটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। হালদাপাড়ের মানুষ ও অংশীজনদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পটি মূলত সুবিধাভোগীদের আর্থিক উন্নতির জন্য। এই প্রকল্প হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ও মৎস্যজীবীদের জন্য সুফল বয়ে আনছে না।
প্রকল্পের টাকায় পশ্চিম তীর হাটহাজারীর কয়েকটি হ্যাচারির নামমাত্র সংস্কার করা হলেও রাউজানের দুটি পরিত্যক্ত কাগতিয়া ও পশ্চিম গহিরা হ্যাচারি দুটি আগের মতোই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। গত সোমবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীর মদুনাঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা থেকে ভাসা জাল (কারেন্ট জাল) ফেলছেন মাছ শিকারিরা। কেউ কেউ নৌকায় বসে বড়শি ফেলছেন। কর্ণফুলী ও হালদার বড় বড় যান্ত্রিক নৌযান মদুনাঘাটের মইশকরম এলাকায় এসে পাম্প দিয়ে বালু তুলে নিচ্ছে (উপরে টেনে উঠাচ্ছে)।
হালদাপাড়ের নৌ-পুলিশ জানায়, হালদায় মাছ শিকারি ও যান্ত্রিক নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য প্রকল্প থেকে কোনো টহল নৌযান দেওয়া হয়নি। নৌ-পুলিশের কাছে থাকা একমাত্র নৌযান দিয়ে দুই উপজেলা হাটহাজারী ও রাউজানের প্রশাসনকে অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করা হচ্ছে।
রাউজান ও হাটহাজারীর দুই সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সওকত আলী ও তোফাজ্জল হোসেন ফাহিম প্রকল্প থেকে কোনো নৌযান না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের মধ্যে ছিল নদীর পাড়ে দুই উপজেলা রাউজান ও হাটহাজারীতে মিনি ল্যাবসহ গবেষণাগার নির্মাণ করার কথা। প্রকল্পের এসব অভিযোগ নিয়ে মুঠোফোনে কথা বললে প্রকল্প পরিচালক নাজিম উদ্দিন স্বীকার করেন, প্রকল্পের সিকি ভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এই প্রতিবেদক তার অফিসে একাধিকবার গেলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তথ্য পেতে ফোনে যোগাযোগসহ খুদেবার্তা পাঠালেও তার কাছ থেকে কোনো রকম সাড়া পাওয়া যায়নি।