হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

ঝুঁকিপূর্ণ কুমিরা ঘাটের মায়া ছাড়তে পারছে না বিআইডব্লিউটিসি

শামসুল আজম মুন্না, সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম)

চীনের দুঃখ যেমন হুয়াংহো নদী, তেমনি সন্দ্বীপবাসীর দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌরুট। সম্প্রতি বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া রুটে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ ও সহজ হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এখনো কুমিরা পয়েন্টের মায়া ত্যাগ করতে পারছে না। যাত্রীদের প্রবল আপত্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নতুন সি-ট্রাক ‘এসটি নিঝুম দ্বীপ’ ঝুঁকিপূর্ণ কুমিরা রুটেই চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সন্দ্বীপকে উপকূলীয় নৌ-বন্দর ঘোষণার পর বাঁশবাড়িয়া ও গুপ্তছড়া—উভয় পয়েন্টেই নিরাপদ ল্যান্ডিং স্টেশন বা পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। এই রুটে নাব্যতার সংকট নেই, ফলে জাহাজ, ফেরি বা সি-ট্রাক সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারে। যাত্রীরা নিরাপদে ওঠানামা করতে পারেন।

অন্যদিকে, কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটের কুমিরা পয়েন্টে নাব্যতার তীব্র সংকট রয়েছে। ভাটার সময় তো বটেই, অনেক সময় জোয়ারেও জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে না। জেটি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাহাজ নোঙর করতে হয়। তখন উত্তাল সাগরে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট লাল বোট বা অননুমোদিত বোটে করে জাহাজে উঠতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় অতীতে বহুবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং অনেকেরই সলিল সমাধিও হয়েছে।

২০০৬ সালে কুমিরা পয়েন্টে দুই শিশু সন্তানসহ বড় বোন খালেদা ইয়াসমিনের মৃত্যুর দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে স্থানীয় বাসিন্দা মনির হায়দার মুঠোফোনে আমার দেশকে বলেন, এত এত দুর্ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না, কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা জনিত কারণে আর কারও যাতে মৃত্যু না ঘটে।

গত সোমবার বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সি-ট্রাক চলাচলের সুসংবাদ দিয়ে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে এটি শিগগিরই বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া রুটে চলাচল শুরু করবে। কিন্তু উপদেষ্টার এই ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।

সংস্থাটি বলছে, এই রুটে পূর্বে চলাচলকারী জাহাজ ‘এমভি মালঞ্চ’ প্রত্যাহার করে তার পরিবর্তে ‘এসটি নিঝুম দ্বীপ’ নামক সি-ট্রাকটি চালু করা হচ্ছে এবং সেটি বাঁশবাড়িয়া নয়, চলবে কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটেই।

বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক (যাত্রী ও প্রশাসন) গোপাল চন্দ্র মজুমদার ‘আমার দেশ’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিআইডব্লিউটিসি কেন পন্টুন যুক্ত বাঁশবাড়িয়া বাদ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কুমিরাকেই বেছে নিল, সে বিষয়ে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই নতুন সি-ট্রাকটিতে প্রায় ৪টি যানবাহন উঠতে পারবে এবং যাত্রীদের বসার জন্য ৩১৯টি আসন রয়েছে। সন্দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা আশংকা করছেন, এতো সুন্দর একটি আয়োজনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের মতে, সি-ট্রাকটি কুমিরা রুটে দিলে যাত্রীশূন্যতার কারণে অচিরেই তা বন্ধ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে আমরা সন্দ্বীপবাসী সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব খাদেমুল ইসলাম ‘আমার দেশ’কে বলেন, একটি চক্র চায় এ রুটে নৌ-ভোগান্তি থাকুক। সেই ভোগান্তিকে পুঁজি করে তারা নিজেদের পকেট ভারি করবে। নিরাপদ রুটে সি-ট্রাক চললে তাদের অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

স্থানীয়রা বলছেন, কুমিরা ঘাট দিয়ে যাত্রীরা স্পিডবোটে যেতে রাজি থাকলেও, জাহাজে চড়তে আগ্রহী নন। কারণ, মাঝসমুদ্রে ছোট বোটে বদল করার ঝুঁকি কেউ নিতে চায় না। অতীতে এই কারণে জাহাজগুলোকে লোকসান গুনতে হয়েছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের উপজেলা সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই নৌরুট।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা নিয়াজ মাহমুদ আমার দেশকে বলেন, এই ঘাটে একমাত্র সন্দ্বীপের মানুষই যাতায়াত করে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সন্দ্বীপের যাত্রীদের সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টিই সবার আগে বিবেচনা করা উচিত।

এবি কলেজের অধ্যক্ষ এসএম আবুল হাশেম কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমার দেশকে বলেন, “যেখানে বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া রুটের উভয় পাশে পন্টুন আছে এবং নিরাপদে ওঠানামা করা যায়, সেখানে যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নেওয়ার চিন্তা বিআইডব্লিউটিসির লোকজনের মাথায় কিভাবে আসে বুঝি না!

নিরাপদ যাতায়াতের পাশাপাশি সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিতে স্থানীয়রা একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি, বর্তমানে চলাচলকারী ফেরি যখন গুপ্তছড়া থেকে ছাড়বে, তখন সি-ট্রাকটি যেন বাঁশবাড়িয়া থেকে ছাড়ে। এভাবে সমন্বয় করা হলে যাত্রীরা সার্বক্ষণিক ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ নৌ যাতায়াতের সুবিধা পাবে।

সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষের দাবি অত্যন্ত স্পষ্ট—তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর যাতায়াত করতে চান না। যেহেতু বাঁশবাড়িয়া রুটে নিরাপদ অবকাঠামো প্রস্তুত আছে, তাই বিআইডব্লিউটিসি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জনস্বার্থে সি-ট্রাকটি বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া রুটে পরিচালনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা দ্বীপবাসীর।

কুড়িগ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

নৌ পরিবহন উপদেষ্টাকে চট্টগ্রামে ঢুকতে দেবেন না চসিক মেয়র

আমি যা বলবো তাই আইন, আল্লাহর হুকুম: বিএনপি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম

যে আসনে শাপলা কলি প্রতীকে লড়বেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

পঞ্চগড়ে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

ঈশ্বরদীতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক

এ প্রজন্মকে দাবায় রাখতে চাইলে পরিণতি ভয়াবহ হবে: শিবির সভাপতি

৫০ প্রতিবন্ধীর মাঝে মাওলানা আফেন্দীর হুইলচেয়ার বিতরণ

রায়গঞ্জে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস