শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের (৮৪তম ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ‘নবীন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম-২৫’ আয়োজন করে শিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে উপহার সামগ্রী দেয় সংগঠনটি। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষিবিদ গ্রুপের ড. আলী আফজাল, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম।
ড. আলী আফজাল বলেন, এ দেশ কৃষিনির্ভর। কৃষিবিজ্ঞানে উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি চিন্তা করা অসম্ভব। কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করতে না পারলে আমরা নিজ দেশের সম্পদগুলোকে সঠিক ও লাভজনকভাবে ব্যবহার করতে পারবো না। বাংলাদেশে চাকরির জন্য চাকরিপ্রার্থী তৈরি হচ্ছে, তবে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না। যার কারণে দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যুগে যুগে শিক্ষা কমিশনগুলো বারবার গঠিত হলেও তারা ব্রিটিশদের ধার দেয়া শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে পারেনি। ফলে এখনও চাকরিপ্রার্থী তৈরি হচ্ছে কিন্তু চাকরি দেয়ার নতুন জায়গা সৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দেশে অ্যাকাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা প্রদানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ফলে দেশপ্রেমিক লোক তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যর্থ হচ্ছে। যদি দেশপ্রেমিক তৈরি করা যেত তাহলে ২৪-এর জুলাই-আগস্টে এত মানুষকে জীবন দেয়ার প্রয়োজন হতো না।
আবু সাদিক কায়েম বলেন, জুলাই আন্দোলন এবং এর আগে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরের এখনও পর্যন্ত ৭ জন গুম অবস্থায় আছে। ক্যাম্পাসগুলোয় গুন-খুন, হামলা ও নির্যাতনের কারণে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তাদের পরিচয় দিতে পারতো না। ক্যাম্পাসগুলোয় নামাজ পড়ায় শিবির সন্দেহে রাতভর নির্যাতন করা হতো। পাখি হত্যা করলে যেখানে বিচার হতো, সেখানে শিবির মারলে বিচার হতো না। খুনি হাসিনার পতনের মাধ্যমে এখন এসব জায়গায় সে নির্যাতন থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে শেকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুল হাসান বলেন, ছাত্রশিবির ছাত্রদের মধ্য থেকে সবচেয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগঠন। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে। দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে শেকৃবি ক্যাম্পাস থেকে চলমান অন্যায়, দুর্নীতি দূর করে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে ছাত্রশিবির পাশে থাকবে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম নবীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ছাত্রশিবির উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরিতে চেষ্টা করে। আমাদের অভিভাবকরা চলমান পরিস্থিতির কারণে ছাত্রশিবিরকে একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে চিন্তা করেন। তবে আমাদের মূল কাজের মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ গতানুগতিক রাজনীতির সাথে মিলে। বাকি সময়টা একজন ছাত্র, সুনাগরিক এবং মুসলিম হিসেবে যা করা দরকার সেটি আমরা করি। আমরা এখনও শিবিরের সকল সৌন্দর্য তাদের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। অভিভাবকদের কাছে শিবিরকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে পারলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিজ দায়িত্বে শিবির করাতেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মেহেদী হাসান নাঈমের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুল হাসান।