হোম > সারা দেশ > ঢাকা

খতিব মহিবুল্লাহর অপহরণ নাটক

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী ও গাজীপুর

গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি কলোনি বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মহিবুল্লাহ মাদানীর রহস্যজনক নিখোঁজ এবং পঞ্চগড়ে শিকলবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় নাটকীয় মোড় এসেছে। পুলিশ তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে যে, এটি কোনো অপহরণ নয়, বরং তার নিজের পরিকল্পিত নাটক। আদালতেও তিনি এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

জানা গেছে, ২২ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি ছিল, চার-পাঁচজন ব্যক্তি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে অপহরণ করেছে। এমন ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করা হয়।

তবে সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ট্র্যাকিং ও চিকিৎসকের রিপোর্ট বিশ্লেষণে পুলিশের সন্দেহ তৈরি হলে ঘটনাটির অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুফতি মহিবুল্লাহকে সোমবার পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নেওয়া হলে সেখানে তিনি ‘তাকে কেউ অপহরণ করেনি, নিজেই পঞ্চগড় গিয়েছিলেন’ বলে পুলিশকে জানান। পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এর বিচারক জুবায়ের রশিদের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মহিবুল্লাহ বলেন, তিনি কোনো ব্যক্তি দ্বারা অপহৃত হননি। তার কিডনি, লিভার, হৃদরোগ ও মাথায় নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি মানসিক কিছু জটিলতা এবং ব্যক্তিগত কারণে নিজেই গাজীপুর ছেড়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, যা তাকে অবচেতন মনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে।

জবানবন্দি অনুযায়ী, তাকে কেউ অপহরণ করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নেয়নি বরং নিজেই হেঁটে শিলমুনের একটি সিএনজি পাম্পে যান। সেখান থেকে অটোরিকশায় পূবাইলের মীরেরবাজার, সেখান থেকে সিএনজি অটোতে করে গাজীপুরের জয়দেবপুরে যান। সেখান থেকে গাড়িতে করে যান ঢাকার শ্যামলী। শ্যামলী থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই টিকিট কেটে পঞ্চগড়ে যান। পথে বগুড়ায় নামাজ আদায়ের বিরতিসহ সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল।

পরে পঞ্চগড়ের হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় গিয়ে প্রস্রাব করতে গিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি ভিজে যাওয়ায় তিনি সেগুলো খুলে ফেলেন এবং নিজেই নিজের পায়ের সঙ্গে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন।

১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি আরো জানান, শারীরিক নানা অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও ব্যক্তিগত কারণে আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি গাজীপুর ছেড়েছিলেন। তাকে কেউ অপহরণ করেনি।

বিচারক তার বক্তব্য শোনার পর মামলাটি ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তীতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে তার পরিবারের জিম্মায় বুঝিয়ে দেয়।

মুফতি মহিবুল্লাহ অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক এসএম মেহেদী হাসান বলেন, তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে তোলা হয়েছিল। সেখানে তার জবানবন্দি নেওয়ার পর আদালত তাকে তার স্বজনদের হেফাজতে দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছে।

এ ব্যাপারে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আদালতের নির্দেশে তাকে স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন, একজন আলেমকে ঘিরে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল; কিন্তু তদন্তের মাধ্যমে সত্য এখন স্পষ্ট। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) জাহিদুল হাসান বলেন, খতিবকে নিয়ে কোনো মহল যেন চক্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য গত রাতেই তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মুফতি মুহিবুল্লাহ বর্তমানে পরিবারের জিম্মায় আছেন এবং তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। তদন্ত টিম মামলার প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ হন মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে পঞ্চগড় জেলার হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকলবন্দি অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ও স্বজনরা তাকে টঙ্গীতে নিয়ে আসেন।

তার অপহরণের ঘটনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘ইসকন’ নিষিদ্ধের দাবি তুলে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করে তৌহিদি জনতা।

এ অবস্থায় মুহিবুল্লাহর প্রকৃত বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। টিঅ্যান্ডটি এলাকার এক বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, তাকে যদি কেউ অপহরণ করে না থাকে, তাহলে এমন নাটক সাজিয়ে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তিনি অপরাধ করেছেন। একজন আলেমের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ এমন আচরণ আশা করে না।

মুফতি মুহিব্বুল্লাহ কি পতিত ফ্যাসিস্টদের দাবার গুটি?

অবশেষে বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা নিল পুলিশ

ডিবি হারুনের ক্যাশিয়ার এখন বিএনপি নেতা

আদালতে যে স্বীকারোক্তি দিলেন মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী

জামায়াতের আমিরকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে পুবাইল থানার ওসি প্রত্যাহার

জুতা পায়ে শহীদ মিনারে জামায়াতের নেতাকর্মীরা

বিএনপি নেতার নাম থাকায় মামলা নিতে গড়িমসি, থানায় অনশনে রাজিয়া

ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে তোপের মুখে টিপু

মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী অপহৃত হননি, দাবি পুলিশের

শ্রীপুরে কারখানা খোলার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের অ্যাকশন