আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাদারীপুরের জনপদে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনি হাওয়া। প্রাথমিকভাবে মনোনীত বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এতে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তাপ।
মাদারীপুরের তিনটি সংসদীয় আসনের দুটিতেই বিএনপির ভেতরের অনৈক্য প্রকাশ্যে এসেছে। দ্বন্দ্ব, বিভক্তি ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দলটির নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অন্যদিকে কিছুটা চাঙা ও ফুরফুরে মেজাজেই নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আটদলীয় জোটের প্রার্থীরা। এরই মধ্যে আট দলের প্রার্থীরা জোটবেঁধে মাঠে নামার প্রস্তুতিও শেষ করেছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা মাদারীপুরে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে সংসদীয় আসনগুলোয় আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য ছিল। তবে তাদের দুঃশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি আর ক্ষমতার দাপটে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ লোকজন। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর ভিন্ন পরিস্থিতিতে এ জেলার আসনগুলো দখলে নিতে তাই উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল। তাদের প্রার্থীরা মানুষের মন জোগাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন।
মাদারীপুর জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে পাঁচ উপজেলা ও চারটি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত। আড়িয়াল খাঁ, কুমার ও নিম্ন কুমারসহ সাতটি নদ-নদীবেষ্টিত এ জেলায় মোট ভোটার ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৩০ জন। ভোটার সংখ্যার দিক থেকে মাদারীপুর-২ আসন সবচেয়ে বড়।
মাদারীপুর-১ (শিবচর)
এ আসনে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান শিবচর উপজেলা বিএনপির কার্যকরী সদস্য কামাল জামান মোল্লা। কিন্তু পরে তার মনোনয়ন স্থগিত করা হলে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশ, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গরম হয়ে ওঠে শিবচর উপজেলা। অন্যদিকে একই আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীও মনোনয়নের দাবিতে আন্দোলনে সরব হয়ে ওঠেন। তবে এদের কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর এ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরা আক্তারের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন কামাল জামান মোল্লা।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী শিবচর উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেন মৃধাকে বছরখানেক আগেই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি পুরো সময় নির্বাচনি প্রচারে ব্যয় করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা আকরাম হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দুই দলের প্রার্থীই ইসলামী সমমনা আটদলীয় জোটের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদর আংশিক)
এ আসনেও বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। গত ৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহানকে প্রার্থী ঘোষণার পরই তা বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে নামে দলের একাংশ। এতে দলীয় গ্রুপিং আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং অনেকটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিএনপির নির্বাচনি পরিবেশ। এ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি আব্দুস সোবহানকে আটদলীয় জোট সবুজ সংকেত দিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে জেলার সাবেক আমির ও ফরিদপুর অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা আব্দুস সোবাহান খানকে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করে অনেক আগেই। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন চন্ডিবর্দী পীর মাওলানা আলী আহমদ চৌধুরী। এছাড়া মাওলানা কামরুল হাসান সাঈদ আনসারীও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন।
মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের আংশিক)
এ আসনে তুলনামূলকভাবে স্বস্তিতে আছে বিএনপি। দলীয় হাইকমান্ড কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদারকে একক প্রার্থী ঘোষণা করায় কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা যায়নি। ফলে নির্বিঘ্নে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। এ আসনে কালকিনি পৌরসভার আমির রফিকুল ইসলাম মৃধাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী হিসেবে যুব আন্দোলনের নেতা মাওলানা আজিজুল হক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে প্রচার চালাচ্ছেন জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক শহীদুল ইসলাম হাওলাদার।
সব মিলিয়ে মাদারীপুরের তিন আসনের দুটিতেই বিএনপি এখন পর্যন্ত অনৈক্য ও বিভক্তিতে জর্জরিত। তবে সেখানে ইসলামী সমমনা আটদলীয় জোট বেশ আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত একক প্রার্থীর ঘোষণা না এলেও যথাসময়ে একক প্রার্থীর জন্য কাজ করতে প্রস্তুত আটদলীয় জোট।