রাজবাড়ীর পাংশায় স্থানীয়দের গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট (২৯) নামের এক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মোহাম্মদ সেলিম নামে তার এক সহযোগীকে দুটি অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী।
নিহত সম্রাট কলিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামে মৃত অক্ষয় মণ্ডলের ছেলে এবং আটক সেলিম শেখ একই ইউনিয়নের ইসলাম শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্রাট তার নিজ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় ও আশপাশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি করে আসছিল। আওয়ামী সরকারের আমলে ভারতে পালিয়ে থেকেও তার সহযোগী দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও চাঁদাবাজি করত।
দীর্ঘদিন ভারতে পলাতক থাকার পর সম্প্রতি সে এলাকায় ফিরে আসে এবং কয়েকদিন আগে হোসেনডাঙ্গা পুরোনো বাজার এলাকার শহীদ শেখের বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বুধবার রাতে সম্রাট তার সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ আবারও ওই বাড়িতে যায়। পরে স্থানীয়রা ‘ডাকাত, ডাকাত’ বলে চিৎকার শুরু করে।
এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সম্রাটকে ধরে ফেলে এবং গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সম্রাটের মৃত্যু হয়। এ সময় তার সহযোগী সেলিমকে দুটি অস্ত্রসহ ধরে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। তাকেও গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শহীদ শেখ ও তার পরিবার কিছু বলতে রাজি হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, পাংশা মডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার বলেন, সম্রাট কলিমহর ইউনিয়নের শহীদ শেখের কাছে ইতিপূর্বে চাঁদা দাবি করেছিলেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে সেই দাবিকৃত টাকা নিতে গিয়ে শহীদ শেখকে বাড়িতে পায়নি। এ সময় তার ছেলেকে মারপিট করে। শহীদ শেখের বাড়ির লোকজনের চিৎকারে এলাকার লোকজন এসে সম্রাটকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরো বলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনার সময় তার সহযোগী সেলিমকেও গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে একটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগানসহ সেলিমকে আটক করে। নিহত সম্রাটের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান সরকারের
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।
পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতোপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।
সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।