সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারতের দালাল প্রার্থীদের ভোট দেবেন না।
শনিবার বিকালে যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে 'জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই কথা বলেন।
মহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র প্রাচ্যসংঘ আয়োজিত এই সভায় মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে জাতি আশা করছে। এই নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হতে হবে। ফ্রি ফেয়ার নির্বাচনের ব্যবস্থা করার প্রধান দায়িত্ব সরকারের। রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে আপনারা ফেয়ার নির্বাচনে সহযোগিতা করবেন এবং ফলাফল মেনে নেবেন। তাহলে দেশ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারবে। দিল্লিতে বসে করা প্রতিদিনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে।
বক্তব্যের শুরুতেই আমার দেশ সম্পাদক শহীদ জুলাইযোদ্ধা আনাসের কথা স্মরণ করেন। বলেন, ‘আনাস ঠিক কী স্বপ্ন দেখেছিল তা আমাদের পক্ষে বলা মুশকিল। তবে অনুমান করতে পারি, শুধু ক্ষমতাবদলের জন্য না, পুরোনো বন্দোবস্ত বদলে দেওয়ার জন্য আনাসেরা জীবন দিয়েছিল। বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছিল কাম্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনীতিকরা জুলাই বিপ্লবকে বিপ্লব বলতে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, এমনকি জুলাই বিপ্লবের ফসল যে সরকার, তারাও নিজেদের বিপ্লবী সরকার না, অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে পরিচয় দিলো। ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে আমরা ফ্যাসিবাদের দোসরদের তাড়াতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি বলি, এটা অবশ্যই বিপ্লব ছিল। এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া উচিত।’
‘একাত্তরে পাকিস্তানি জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়েছিলাম। কিন্তু প্রকৃত স্বাধীন হতে পারিনি। কারণ, মুজিব দিল্লির নির্দেশে দেশ চালাতেন। পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ প্রকৃত স্বাধীন হয়েছিল। আমিও সেদিন ঢাকার রাজপথে নেমে দিল্লির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিলাম। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে, জুলুমের শিকার হয়ে, নির্যাতিত হয়ে একপর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই। সেই কারণে জুলাই বিপ্লবে সশরীরে অংশ নিতে পারিনি। কিন্তু পঁচাত্তরে আমাদের স্লোগান আর জুলাই বিপ্লবের তরুণদের স্লোগান একই। সুতরাং এই দেশের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে ভারতে প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। ভারতের দালালি করবে যারা, তাদের বিরুদ্ধে আবার লড়াইয়ে নামতে হবে’- বলেন মাহমুদুর রহমান।
‘জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রাচ্যসংঘের সুপ্রিম কাউন্সিল সদস্য আখতার ইকবাল টিয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ আবদাল আহমদ এবং প্রাচ্যসংঘের প্রতিষ্ঠাতা বেনজীন খান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই বিপ্লবের চার ছাত্র প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। এর আগে দুপুরে ওবায়দুল বারী হলে প্রাচ্যসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মাহমুদুর রহমান। সেখানে তিনি বলেন, জুলাই সনদ প্রশ্নে প্রফেসর ইউনূসের সরকার অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। জামায়াতের প্রধান দাবি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মেনে নিয়েছে সরকার। বিএনপির প্রধান দাবি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের সিদ্ধান্তও হয়েছে। যদি এটা না করা হতো তাহলে দেশে ভয়াবহ অবস্থা হতে পারতো।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর হাসিনার সহযোগিতায় এ দেশের স্বাধীনতাকে পদানত করে রেখেছিল ভারত। সেটা এখন অতীত। আপা আর ফিরবে না।
তিনি প্রশ্ন করেন, রাজনীতিকরা কি মানেন ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় থ্রেট? বড় তিন রাজনৈতিক শক্তির কাছে এই প্রশ্ন রাখতে হবে।
মতবিনিময় সভায় মাহমুদুর রহমান উপস্থিতিদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। এই সময় তিনি মন্তব্য করেন, বিএনপি-জামায়াত ভারত-প্রশ্নে দ্বিধাগ্রস্ত। এনসিপিই একমাত্র ভারত-প্রশ্নে সুদৃঢ়। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার মতো অবস্থা এখনও হয়নি। সেই কারণে প্রার্থীদের কাছে প্রশ্ন রাখতে হবে, ভারত প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কী? যদি এটা নিশ্চিত করা যায় ভারতের কোনো দালাল পার্লামেন্টে প্রবেশ করবে না, তাহলে দেশকে আর পদানত করতে পারবে না পাশের শক্তিশালী রাষ্ট্র।
মতবিনিময় সভায় সৈয়দ আবদাল আহমদ ছাড়াও প্রাচ্যসংঘের সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।