হোম > সারা দেশ > খুলনা

ভৈরব তীরে ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস, আছে সংকটও

এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা

শতাব্দীর সাক্ষী দক্ষিণবঙ্গের সরকারি বিএল কলেজ। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশে ভূমিকা রেখে চলছে এ বিদ্যাপীঠ। জাতির সংকটের মুহূর্তে এই বিদ্যাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠতে দ্বিধা করেননি।

শতবর্ষী এ আলোকবর্তিকার অবস্থান কোলাহলমুক্ত ভৈরব নদের তীরে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে। প্রায় ৪০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার। আর তাদের জ্ঞানদান করছেন দু-শতাধিক শিক্ষক। সুষ্ঠু পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ, নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার আর সহশিক্ষা কার্যক্রমের ফলে সার্বিক মূল্যায়নে অনেক অগ্রসর এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে প্রাপ্তির ডামাডোলে কিছু অপ্রাপ্তি আছে বিষাদের সুর হয়ে। কলেজের নিজস্ব সম্পদের একটি বড় অংশ বেদখল হয়ে আছে। আর ছাত্র হলগুলো একেবারে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় দূরের শিক্ষার্থীদের চরম আবাসন সংকট পোহাতে হচ্ছে।

দুই একর জমির ওপর দুটি টিনশেড ঘর নিয়ে ১৯০২ সালের ২৭ জুলাই ‘হিন্দু একাডেমি’ নামে প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তন করেন শিক্ষানুরাগী ব্রজলাল চক্রবর্তী। এখানে মন্দির ও টোল ছিল। ছাত্রদের খাবার, পড়া ও আবাসন খরচ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহন করা হতো। ১৯০৬ সাল পর্যন্ত এখানে মুসলমান ছাত্ররা ভর্তির সুযোগ পায়নি। ১৯০৭ সালে প্রথম মুসলিম ছাত্র ভর্তি হয়, ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ১৯১২ সালে খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দানবীর হাজী মুহম্মদ মোহসীনের সৈয়দপুর এস্টেট থেকে ৪০ একর জমি কলেজকে দান করা হয়।

১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা ব্রজলালের মৃত্যুর পরে কলেজের নাম করা হয় ব্রজলাল হিন্দু একাডেমি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫১ সালে গভর্নিংবডির প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ব্রজলাল কলেজ। ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই এটি সরকারি কলেজে পরিণত হয়।

সংগ্রাম ও সমৃদ্ধিতে আলোকিত যারা

১৯৪৮ সাল থেকে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় ও সোচ্চার ছিলেন ব্রজলাল একাডেমির ছাত্ররা। মিছিল, সমাবেশ, ধর্মঘট পালন, পিকেটিং, পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও মূল নেতৃত্বে ছিলেন তারা। মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একঝাঁক বীর সেনানী ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সি আর দত্ত (বীর উত্তম), লে. কর্নেল এইচ এম এ গফফার (বীর উত্তম), গাজী রহমতউল্লাহ দাদু (বীর প্রতীক) অন্যতম। রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছিলেন— ইউনুস আলী ইনু, স ম বাবর আলী, ফ ম সিরাজ, কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, সৈয়দ ঈসা, সালাহউদ্দিন ইউসুফ, এম এ গফুর, স ম আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট এনায়েত আলী প্রমুখ। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও বিএল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথ কর্মসূচি পালন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বর্ষিয়ান শিক্ষাবিদ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান জানান, পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীরা মন্ত্রী হিসেবে দেশের সেবা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন— এস এম আমজাদ হোসেন, সৈয়দ দিদার বখত, লে. কর্নেল এইচ এম এ গফফার, অ্যাডভোকেট মোমিন উদ্দিন আহমেদ, এম মুনসুর আলী, সালাহউদ্দিন ইউসুফ। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন অ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলী।

খুলনা প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সিনিয়র সদস্য শেখ দিদারুল আলম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপি নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন, জহিরউদ্দিন স্বপন এই কলেজের সাবেক ছাত্র।

একাডেমিক কার্যক্রম

এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২১টি বিষয়ে স্নাতক এবং ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। পাশাপাশি রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক পাস কোর্স। বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন এবং কলা ও মানবিক অনুষদের অধীনে এসব কোর্সে লেখাপড়া করছেন প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের জন্য রয়েছেন দু’শতাধিক শিক্ষক। আধুনিক, উন্নত ও মানসম্মত একাডেমিক ভবন ও ল্যাব রয়েছে। সুবিশাল চারটি একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য পৃথক ভবন হয়েছে। ফলে এককালে পরীক্ষার সময় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংকট দূর হয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

সহশিক্ষা কার্যক্রমে বিএল কলেজ থিয়েটার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। নিয়মিত চর্চা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে এর সুনাম ছড়িয়েছে বহুদূর। আবৃত্তি সংগঠন বায়ান্না, ক্যারিয়ার ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাবে বহু শিক্ষার্থী যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়া রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, গার্লস গাইড, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি তো রয়েছেই।

বিএল কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ইলমী জানান, তাদের নিয়মিত সদস্য প্রায় ৬০ হলেও অনিয়মভাবে জড়িত আছেন তিনশজন। সপ্তাহে তিন দিন প্রাকটিস চলে। বিভিন্ন কম্পিটিশনে তাদের রেজাল্টও ঈর্ষণীয়।

সংকট আবাসনে

এ প্রতিষ্ঠানে চরম আবাসন সংকট রয়েছে। ছেলেদের পাঁচটি হলই পরিত্যক্ত। ফলে দূর-দূরান্ত পথ পাড়ি দিয়ে তাদের আসতে হয়। মেয়েদের দুটি হলের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো।

যা বলছেন অধ্যক্ষ

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ হুমায়ুন কবির বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর দুটি একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে হাজী ফয়জুল্লাহ একাডেমিক ভবন এবং আগা মোতাহার ভবন নামকরণ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলছে। ছাত্র হলগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আমরা সরকারের কাছে ছাত্রদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১০ তলা আবাসিক হল দাবি করেছি।

তিনি আরো বলেন, পর্যাপ্ত একাডেমিক বিল্ডিং, সুপরিকল্পনা এবং শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদানের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফলাফলে আমাদের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে।

কলেজের বিপুল সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে অভিযোগ করে অধ্যক্ষ বললেন, অন্য নামে কয়েক একর সম্পত্তি রেকর্ডও হয়ে গেছে। এ নিয়ে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির সমাধান হয়নি।

ভারতে অনুপ্রবেশকালে বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে নারী আটক

মুক্তিযুদ্ধের কল্পকাহিনী ৯০ ভাগই মিথ্যা: আমির হামজা

ভেড়ামারায় পিকআপের ধাক্কায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত

কপ সম্মেলনে সুন্দরবন সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরার আহ্বান

চুয়াডাঙ্গায় ৫ বছরের শিশুর প্রাণ কেড়ে নিলো ট্রলি

মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির সর্বোচ্চ সতর্কতা

বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, বাজারে দাম কমার ইঙ্গিত

বিজয় দিবসে বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, স্বাভাবিক যাত্রী চলাচল

বিজয় দিবসে গদখালীতে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

খুলনায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা