বৃহত্তর ময়মনসিংহ এখন ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। হিমালয়ের পাদদেশে সঞ্চিত চাপের কারণে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ময়মনসিংহ অঞ্চল খুব দ্রুতই একটি বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হতে পারে। ভূমিকম্প বিশ্লেষক ও ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলছেনÑইতিহাস, ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং সাম্প্রতিক ভূকম্পন পর্যবেক্ষণের তথ্য—সবটার ইঙ্গিতই একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক কাঠামোয় প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বছর পরপর ৭ মাত্রার এবং ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পরপর ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে থাকে। সেই হিসাবে বাংলাদেশে বড় একটি ভূমিকম্প এখন আসন্ন। গত পাঁচ-ছয় বছরে ভূমিকম্পের হার যেমন বেড়েছে, তা ভূগর্ভে শক্তি সঞ্চয়ের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। এর কেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশ ২৩.৮৯৪ ডিগ্রি এবং পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ৯০.৫৭৯ ডিগ্রি এবং ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। এই কম্পন ময়মনসিংহ, ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, মাদারীপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, বগুড়া, বরিশাল, মৌলভীবাজার ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত হয়।
ময়মনসিংহ নগরীর আলীয়া মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সকালে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে, মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় বের হয়ে আসে।
ঘন ঘন ভূকম্পন বাড়াচ্ছে শঙ্কা
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে রিখটার স্কেলে ২-এর উপরে এবং সর্বোচ্চ ৫.৭ মাত্রার মোট ৪৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুক বলেন, ময়মনসিংহ এখন দেশের শীর্ষ ঝুঁকির অঞ্চলে (জোন-১) অবস্থান করছে। ময়মনসিংহ শহরে বিল্ডিং কোড মেনে বেশিরভাগ ভবনই নির্মাণ হয়নি। যদি কখনো ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলেই শহরের অধিকাংশ বহুতল ভবন ধসে পড়বে এবং ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটবে।
তিনি আরো বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল একটি সক্রিয় ফল্ট জোনে অবস্থান করছে। এর যে কোনো স্থানে সৃষ্ট ভূমিকম্প পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশের সিসমিক জোন মানচিত্রে
ময়মনসিংহ শীর্ষে
সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত সিসমিক জোন মানচিত্র অনুযায়ী বাংলাদেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে জোন-১ হচ্ছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এই জোনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট। জোন-২ এ রয়েছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও দিনাজপুর অঞ্চল। জোন-৩ এ আছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, যেখানে ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
বাংলাদেশে বেশকিছু ফল্ট বা চ্যুতি রয়েছে যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনকটির নাম ডাউকি ফল্ট। ময়মনসিংহ ও শেরপুরের সীমান্ত এলাকা এই সক্রিয় ফল্ট জোনের অন্তর্গত। ৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই ফল্টের নামকরণ করা হয়েছে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সীমন্তবর্তী ভারতের মেঘালয়ের শহর ডাউকি থেকে। পূর্বদিকে এই ফল্ট ভারত থেকে বিস্তৃত হয়ে পশ্চিমে চলে এসেছে বাংলাদেশের দিকে। এই ডাউকি ফল্ট ছাড়াও যমুনা ফ্লাড প্লেইনের সংযোগস্থলে মধুপুর গড়ের পশ্চিম প্রান্তে ১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত মধুপুর ফল্ট আছে যা জামালপুর থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।
অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুক আমার দেশকে বলেন, মধুপুরে ছোট ছোট তিনটি ফাটল আছে। যেহেতু ফাটল রয়েছে সেহেতু যদি ভূগর্ভে শেকিং হয় তবে নিঃসন্দেহে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে দক্ষিণ মিয়ানমার হয়ে আন্দামান পর্যন্ত চলে গেছে আরেকটি ফল্ট লাইন।
এই গবেষক বলেন, দুশ্চিন্তার বিষয় হলো সব ফল্ট লাইনই সক্রিয়, যে কোনো সময় ভূমিকম্প ঘটতে পারে এই এলাকাগুলোতে। তবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণটি হলো ডাউকি ফল্ট। ডাউকি ফল্ট এলাকাতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফল্ট জোনে জমে থাকা শক্তি যে কোনো সময় বিপুল ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র নদ ও ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ময়মনসিংহের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ব্রহ্মপুত্র নদ ফিরে পেতে পারে তার হারানো গতিপথ। এতে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলÑময়মনসিংহ সদর, জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে। ইতিহাস বলছে, ১৭০০ শতকের শেষ দিকে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পেই ব্রহ্মপুত্র তার গতি বদলে আজকের যমুনা নদে পরিণত হয়।
১৮৯৭ সালের ১২ জুন সংঘটিত ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এই অঞ্চল ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শিলং প্লেটে উৎপত্তি হওয়া সেই ভূমিকম্পে ময়মনসিংহ, সিলেট, আসাম ও মেঘালয়ের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা অমূলক নয়।
হিমালয়ের চাপ এবং ওভারডিউ ভূমিকম্প
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রজার বিলহ্যামের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, হিমালয়ের নিচে ভারতীয় প্লেট প্রতি বছর প্রায় ৫ সেন্টিমিটার করে এশীয় প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই ধীরগতির চাপ এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গবেষণায় বলা হয়, হিমালয়ের ১২০০ মাইল এলাকাজুড়ে জমে থাকা এই চাপ ৮.১ থেকে ৮.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে রূপ নিতে পারে যা বাংলাদেশকেও মারাত্মকভাবে আঘাত করবে।
একইভাবে জিওলজিক্যাল অবজারভেটরি অব কলম্বিয়ার দুই ভূকম্প বিশারদ ড. লিওনার্দো সিবার ও জন আর্মব্রাস্টারের গবেষণায়ও বলা হয়, হিমালয় অঞ্চলে প্রায় ৩০ বছর অন্তর একেকটি বড় ভূমিকম্প ঘটে। সেই হিসাব অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই একটি ভয়াবহ কম্পন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
প্লেট টেকটনিক সংঘর্ষ এবং
বাংলাদেশের অবস্থান
পৃথিবীতে সাতটি প্রধান ও বহু ক্ষুদ্র টেকটনিক প্লেট রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান তিনটি সক্রিয় প্লেট ভারতীয়, ইউরেশিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে। এই তিনটি প্লেট পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। ভারতীয় প্লেট ক্রমান্বয়ে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে ঢুকে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছে, আর বার্মা প্লেটের সংঘর্ষে গঠিত হয়েছে আরাকান রেঞ্জ। এই সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ ক্রমাগত ভূকম্পন প্রবণ হয়ে উঠছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এসব প্লেটে শত শত বছর ধরে সঞ্চিত শক্তি হঠাৎ নির্গত হলে ৮ বা ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে যার ফলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গোটা মধ্যাঞ্চল ভয়াবহ ধ্বংসের মুখে পড়বে।
ময়মনসিংহ শহরের ঝুঁকি ও নির্মাণ বিপর্যয়
ময়মনসিংহ শহরে বর্তমানে অসংখ্য বহুতল ভবন, মার্কেট ও আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু এদের বেশিরভাগই নির্মাণ আইন ও জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ ছাড়াই তৈরি। ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই বহু ডেভেলপার প্রকল্প চালু করেছে। পুরোনো ও নড়বড়ে ভবনের সংখ্যা এত বেশি যে বড় ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হবে।
ময়মনসিংহের সড়কগুলো সরু এবং অপরিকল্পিত, ফলে উদ্ধারকারী যানবাহন ঢোকাই কঠিন হবে। অধিকাংশ ভবন জলাশয় ভরাট করে নির্মিত, যা ভূমিকম্পে ‘লিকুইফিকেশন’(মাটি তরল হয়ে যাওয়া) প্রক্রিয়ার কারণে দ্রুত ধসে পড়তে পারে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের বসতবাড়িগুলোতে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
শহরের বাসিন্দা নিয়ামুল কবীর সজল বলেন, ময়মনসিংহ শহরে প্রতিদিনই নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে, কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগই ঠিকমত পরিকল্পনা বা বিল্ডিং কোড মেনে বানানো হচ্ছে না। সরকার বা সিটি করপোরেশন যদি নিয়ম মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি না করে, তাহলে একদিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবেই। আমরা চাই, প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা নিক।
সরকারি উদ্যোগ ও সচেতনতার ঘাটতি
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই ময়মনসিংহকে উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করেছে। তারা ভূমিকম্প প্রতিরোধে জাতীয় বিল্ডিং কোড-২০২০ অনুসারে ভবন নির্মাণ, পুরনো ভবনের রেট্রোফিটিং, গ্যাস–পানি–বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়ার পরামর্শ দিয়েছে। তবে বাস্তবে এ অঞ্চলে সচেতনতার অভাব প্রকট। সরকারি কোনো দপ্তর নিয়মিতভাবে ভূমিকম্প তথ্য বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। শহরের অধিকাংশ মানুষই জানে না ভূমিকম্পের সময় কীভাবে আত্মরক্ষা করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ইক্যুইপমেন্ট থাকলেই হবে না। প্রয়োজন সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং কাঠামোগত শক্তিশালীকরণ। অন্যথায়, বড় ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকাজও ব্যর্থ হবে।
ভয়ংকর বাস্তবতা ও সতর্কবার্তা
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা টেকটনিক প্লেট অতিক্রম করছে যেগুলো এখনো সক্রিয় এবং পরস্পরের দিকে সরছে। এই প্রক্রিয়ায় সঞ্চিত চাপ হঠাৎ নির্গত হলে ধ্বংসের মাত্রা হবে অকল্পনীয়।
বুয়েট ও সরকারের যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে যেখানে সৃষ্টি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ। ময়মনসিংহের নির্মাণ কাঠামো ঢাকার চেয়ে দুর্বল হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হবে আরো ভয়াবহ।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় অবস্থান করায় আমরা জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বাজার এলাকায় ভূমিকম্প মোকাবিলায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
ভূমিকম্প বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি সীমান্ত এলাকায় হয়, তবে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিপুল প্রাণহানি এবং অবকাঠামোগত ধ্বংস হবে। এমন পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহবাসীর জন্য এখন সবচেয়ে বড় করণীয় হলো সচেতনতা ও প্রস্তুতি। প্রতিটি পরিবারকে জানতে হবে ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, কীভাবে নিরাপদে থাকতে হবে এবং কীভাবে উদ্ধারকারীদের সহায়তা করতে হবে।