‘পৃথিবীর প্রকৃত কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার; মানুষের বানানো মতবাদ কখনোই মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারে না’ এ মন্তব্য করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, গত ৫৪ বছর ধরে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদসহ মানুষের তৈরি মতবাদই বাংলাদেশ শাসন করেছে, কিন্তু জনগণের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে ইসলামপন্থী ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আখন এবং সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, মানুষের ব্যথা-বেদনা দূর করার মতো কোনো ব্যবস্থা মানুষের তৈরি আইন দিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ কষ্টে ৫৪ বছর পার করেছে। এখন থেকে জাতীয় সংসদ, সচিবালয় ও দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল্লাহর আইন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমাদের হাত দুটি দিয়েছেন আল্লাহ; তাহলে আমরা সিল মারবো মানুষের আইনের পক্ষে, না আল্লাহর আইনের পক্ষে? আমরা প্রতিজ্ঞা করছি- যত দিন বেঁচে থাকবো, আল্লাহর আইনের সাথেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশ মুসলমান। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ইসলামের পতাকার নিচে একত্রিত করার লক্ষ্যেই ৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেবল ৮ দল নয়, বাংলাদেশের সব দলই ইসলামের পতাকার নিচে সমবেত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারাও আল্লাহকে মানেন, কোরআনকে মানেন। তাই শরীয়তের আইনে বিশ্বাস করি না- এ মন্তব্য ভুলক্রমে এসেছে বলে আমি মনে করি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তি চেয়েছি, কিন্তু ৫৪ বছরে শান্তি পাইনি। ইসলাম মানে শান্তি এবং পূর্ণ আনুগত্য। মানুষ যখন আল্লাহর আইনের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য করবে, তখনই দেশে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।”
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, জুলাই গণহত্যার অভিযুক্তদের বিচার কার্যকর এবং ভোটের আগে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে ইসলামী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদি।
এছাড়া বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুফতি মোহাম্মদ উল্লাহ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন খন্দকার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল করিম, নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, মহানগর আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল, মহানগর নায়েবে আমীর আসাদুজ্জামান সোহেল, মহানগর সেক্রেটারি শহীদুল্লাহ কায়সার, সহ-সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজন, মাহবুবুল হাসান শামীম, অর্থ সম্পাদক গোলাম মহসীন খান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা নুরুল করিম আকরাম, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু তাহের খান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, সাধারণ সম্পাদক নেজামুল হক নাঈম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ খান প্রধান, খেলাফত মজলিসের ময়মনসিংহ জোন পরিচালক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে নেতারা ঘোষণা দেন-দেশের কল্যাণ, ন্যায়বিচার এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই ৮ দলীয় জোটের মূল লক্ষ্য।