সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে শাশুড়িকে গলা টিপে হত্যার দায়ে পুত্রবধূ আফরোজা খাতুনের মৃত্যুদণ্ড ও অপর আসামি ডাক্তার মো. লিয়াকত হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে আফরোজাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপর আসামি লিয়াকতকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ এর আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ রায় প্রদান করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আফরোজা খাতুন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের স্ত্রী। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ডাক্তার মো. লিয়াকত হোসেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সুবর্ণসাড়া গ্রামের ওসমান ডাক্তারের ছেলে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ এর আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম দুলাল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামি আফরোজা খাতুন পলাতক ছিলেন। অপর আসামি ডাক্তার লিয়াকত আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার প্রধান আসামি আফরোজা খাতুন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার জিধুরী গ্রামের শেখ সুলতানের সৎ ছেলের স্ত্রী। আফরোজা খাতুন ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করা অবস্থায় বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকে। এ নিয়ে আফরোজা খাতুন ও তার স্বামীর পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।
২০০৬ সালে আফরোজার স্বামী আব্দুল মালেক মৃত্যুবরণ করলে আফরোজা খাতুন বেপরোয়া চলাফেরা করে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন সংশোধনের কথা বললে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে।
২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর আফরোজা শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসে। খাওয়া-দাওয়া শেষে সন্ধ্যায় শাশুড়ি রাবিয়া খাতুনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তারা আর ফিরে আসেনি। পরের দিন ১৮ অক্টোবর বাড়ির পাশে ব্রিজের ডোবা থেকে রাবিয়া খাতুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী শেখ সুলতান বাদী হয়ে আফরোজা খাতুন, তার পরকীয়া প্রেমিক ডাক্তার মো. লিয়াকত হোসেন’সহ তিন জনকে আসামি করে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর পুলিশ আফরোজা খাতুনকে গ্রেপ্তার করলে সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই দুই জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আজ আদালতের বিচারক আফরোজা খাতুনকে মৃত্যুদণ্ড ও ডাক্তার মো. লিয়াকত হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।