রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ১৫ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত এই আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন, মো. নাইম ইসলাম, মো. সাগর ইসলাম, মো. আহাদ শেখ, মো. বিপ্লব, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল মিয়া, মো. হাসান, মো. রাসেল, মো. আব্দুল বারেক শেখ ওরফে আলামিন, মো. রাশেদুল ইসলাম, মো. সাইদুর রহমান, আবুল কাশেম, মো. প্রাপ্ত সিকদার ও মো. রাজু আহমেদ।
এর আগে, আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক আবদুল হান্নান।
আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, তদন্তকালে এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন ও বিশ্বসন্ত সোর্সদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই আসামিদেরকে একাধিক যায়গায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এক নম্বর আসামি মো. নাইম ইসলামের কাছ থেকে লুণ্ঠিত নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং লুণ্ঠিত অর্থ দিয়ে কেনা ১টি ফ্রিজ, ১টি এলইডি টিভি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়েছে। মামলা তদন্ত অব্যাহত আছে। আসামিদের নাম ঠিকানা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াধীন। এমতাবস্থায় মামলার তদন্ত সমাপ্ত ও আসামিদের বর্ণিত ঠিকানা যাচাই-বাছাই না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন। মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তার আসামিদেরকে জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত।
এদিকে, ১২ জন আসামি পক্ষের জামিন চেয়ে শুনানি করেন তাদের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত সোয়া ১১টার দিকে ২০ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, দাহ্য পদার্থ নিয়ে মিছিল করে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে এসে হামলার চেষ্টা চালায়। পুলিশ বাধা দিলে তারা বে-আইনিভাবে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দেয়। বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তারা লোক জড়ো করে। প্রথম আলোতে হামলার জন্য উসকানিমূলক পোস্ট দিতে থাকে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ জন দুষ্কৃতকারী প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়।
আরো বলা হয়, রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা প্রথম আলো কার্যালয়ের ফটকের কাচ ও শাটার ভেঙে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা ভবনের সামনের কাচ ভেঙে আসবাব, মালপত্র, নথিপত্র নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন তলার দেড় শত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লকারে রাখা টাকা, প্রথমা প্রকাশনের বইপত্র লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। তারা ভবনের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলে। সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। তারা ফায়ার সার্ভিসকেও আগুন নেভানোর কাজে বাধা দেয়। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় শুধু লুটপাট করা সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি টাকা বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ওই ঘটনায় প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠানের হেড সিকিউরিটি অফিসার মেজর (অব.) মো. সাজ্জাদুল কবির বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।