সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর কাঠামোগত ঝুঁকি যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ক্ষতি এড়াতে ক্লাস ও পরীক্ষা পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী চলবে। তাই সতর্কতামূলক কোনো ছুটিও মিলছে না রাজশাহীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার। প্রথম ধাপে মন্নুজান হলে ঝুঁকি মূল্যায়ন কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকম্প নিয়ে সর্বশেষ যে সিদ্ধান্ত তা হলো— ক্লাস ও পরীক্ষা চালু রেখেই এই সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরা প্রথমে ৫–৭ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ করে কোন কোন রুম বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখনকার ছাত্ররা অনেক সচেতন। তাদের অনেকেই এটির বিরুদ্ধে ছিল। তাই শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই এই সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করবো এবং সমাধান করবো। মন্নুজান হল দিয়ে প্রশাসন আগে কাজ শুরু করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন বলেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে আজ একটি জরুরি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে হলের প্রভোস্টগণ, হল সংসদের প্রতিনিধিরা এবং রাকসুর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যেহেতু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস ও পরীক্ষা চলমান এবং তারা হল বন্ধ চায় না, তাই তাদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে হলগুলো খোলা রেখেই ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ইন্সপেকশন করা হবে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্প নিয়ে যে সমস্যার তৈরি হয়েছে তা ক্লাস ও পরীক্ষা চালু রেখেই সমাধান করা হবে। এতে কিছু শিক্ষার্থীর সাময়িক অসুবিধা হলেও সবার মতামতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ৫–৭ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ করে কোন কোন রুম বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা পরীক্ষা করতে চেয়েছিল প্রশাসন, তবে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।
শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে যারা শেরে বাংলা হল ছেড়ে নতুন হলে গেছেন, তারা সেখানে তেমন কোনো সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ সেখানে পানির লাইন, বিদ্যুৎ কিংবা প্রাথমিক সুবিধাগুলো এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। সেখানে তারা মূলত ছাদ খসে পড়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকবেন। পুরাতন হলে তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেতেন তার ১০ শতাংশও নতুন হলে তারা পাবেনা বলে মনে হয়। তবে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্তকে ভালো মনে করবেন, সেখানেই তারা থাকবেন—যদিও এটি তাদের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে রাবির শেরে বাংলা হলের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়, যার ফলে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নবনির্মিত হলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গতকাল ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন ১৫ দিনের জন্য সকল একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করলে রাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দেয়।