প্রতিষ্ঠার সাড়ে চার দশক পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (ইকসু) গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে এটি অধ্যাদেশ আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। এতেই উচ্ছ্বসিত ছাত্রছাত্রীরা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ইকসু নির্বাচনের পথ তৈরি হওয়ায় তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় পাস হয় ইকসু কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ গঠনতন্ত্র। সে অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং প্রতিটি হল সংসদে ১৫টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি ও হল সংসদের ১৩টি পদে সরাসরি ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ থাকবেন সংসদের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে। হল সংসদের ক্ষেত্রে সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ এবং সহকারী প্রাধ্যক্ষ থাকবেন কোষাধ্যক্ষের ভূমিকায়। অনির্বাচিত পদ ছাড়া অন্য পদগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন।
গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, পূর্ণকালীন স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিল শিক্ষার্থীরা সদস্যপদ ফি পরিশোধের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রার্থী হতে পারবেন। সান্ধ্যকালীন, পেশাগত কোর্সের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতরা ভোটাধিকার থেকে বাদ পড়বেন। তবে এমফিল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ বছর এবং তারা মাত্র একবারই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
গঠনতন্ত্রে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রনেতারা। তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সিন্ডিকেট মেম্বার না হলে ছাত্র সংসদ তার কার্যকারিতা হারাবে।
এদিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এবং ছাত্র নেতারা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর আরো শক্তিশালী করতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয় এটি তাদের প্রধান দাবি। তাদের মতে, কার্যকর ছাত্র সংসদ গঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরো প্রাণবন্ত হবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম পাবে।
গঠনতন্ত্র পাসের খবরে উচ্ছ্বসিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আনিকা ইসলাম অবন্তী নামে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাই, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও ডাকসু বা জাকসুর মতো উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই নির্বাচনের অন্তত একমাস আগে থেকে ক্যাম্পাসে নির্বাচনি আবহ তৈরি হোক, আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। আমরা যেন স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারি। সবশেষে শিক্ষার্থীদের অধিকার, দাবি-দাওয়া তুলে ধরার মতো একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম ও শক্তিশালী ছাত্র সংসদ প্রত্যাশা করি।’
শিক্ষার্থী মিরাজ হাসান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো গঠনতন্ত্র পাস হওয়ার বিষয়টি খুবই পজিটিভ। আশা করছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমরাও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন হবে, এটা আমাদের জন্য অন্যরকম পাওয়া। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য হলেও ইকসু নির্বাচন দরকার।’
সাবেক সমন্বয়ক ও আগ্রাসন বিরোধী শিক্ষার্থী জোটের সদস্য এস এম সুইট বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ছাত্র সংসদ হতে চলছে। সেই ক্ষেত্রে একটা উৎসবমুখর, সহজ এবং সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যেন এই নির্বাচন হয় সেই প্রত্যাশা করছি।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, জুলাই আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীসহ সব ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে আসছিল। সেই জায়গা থেকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ইকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নের সময় সব ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি আমরাও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ছিলাম। তবে খসড়া গঠনতন্ত্রের একটা কপি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে ভালো হতো।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম এই ছাত্র সংসদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছিলাম, এখন সেটা সিন্ডিকেটে পাসের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে যেনো আইন সংশোধন হয়ে যায়। ইউজিসিতে গিয়ে যেন ফাইলটা পরে না থাকে এবং প্রশাসন যেন সব সময় তৎপরতা অব্যাহত রাখে।
ইবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, এটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। আমরাও মোটামুটি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে গঠনতন্ত্রে প্রশাসন এমফিল শিক্ষার্থীরা নির্বাচন করতে পারবে বলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেখানে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম শুধু নিয়মিত অনার্স, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরাই নির্বাচনের প্রার্থী এবং ভোটার করার বিষয়ে। আমাদের দাবি ছিল নির্বাচিত ভিপি এবং জিএসকে যেন সিন্ডিকেট মেম্বার করা হয়, কিন্তু গঠনতন্ত্রে তা রাখা হয়নি।