শিক্ষক আন্দোলন
১১তম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নসহ তিন দাবিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কড়া নির্দেশনা সত্ত্বেও আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিলেও বাকিরা পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বঞ্চনা ও দাবি পূরণে সরকারের কোনো সাড়া না পেয়ে আজ থেকে তিনদিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা। তারাও চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বছরের শেষ সময়ে এসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় চরম বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে একাংশ গতকাল রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। এ কর্মসূচির আওতায় আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি আমার দেশকে বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা বর্জনসহ আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কড়া নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, অধিদপ্তর তাদের কাজ করেছে; আমরা আমাদের কাজ করছি। ফলে তাদের কড়া হুঁশিয়ারিতে আমরা ভয় পাই না। প্রয়োজনে আমরা পরে পরীক্ষা নিব।
অন্য অংশের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা প্রসঙ্গে খায়রুন নাহার লিপি বলেন, তারাও তো আন্দোলনে ছিল, কিন্তু মাঝপথে এসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা রোববার কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবুল কাসেম। তিনি বলেন, আজ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। তবে আমরা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাব। আশ্বাস অনুযায়ী আমাদের ১১তম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
অন্যদিকে তিন দাবি পূরণে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ‘তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি’পালন করে গতকাল থেকে ক্লাসে ফিরেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’অনুসারীরা। তারা আজ থেকে দেশব্যাপী সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হওয়ায় বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করবেন।
এ মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল আমিন বলেন, আমরা তিনদিন লাগাতার কর্মবিরতি পালন শেষে গতকাল থেকে ক্লাসে ফিরেছি। আজ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। আমরা বাচ্চাদের জিম্মি করে কোনো কর্মসূচি নেব না।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাঘাসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন না বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক শাহীনুর আল আমিন। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে আমরা ১১ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করব।
কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তারা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বার্ষিক পরীক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষকদের কড়া চিঠি অধিদপ্তরের
এদিকে শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির মধ্যেই আজ সোমবার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষক, কর্মকর্তার কোনো প্রকার শৈথিল্য-অনিয়ম ধরা পড়লে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। গতকাল রোববার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১ ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা কার্যক্রম বিনা ব্যর্থতায় নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের কমপ্লিট শাটডাউন
দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও দাবি পূরণে সরকারের কোনো সাড়া না পেয়ে কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পেশাগত মর্যাদা ও বেতন-ভাতাসহ চার দফা দাবিতে আজ থেকে তিনদিনের কর্মবিরতি তথা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকরা। এ কর্মসূচি চলাকালে তারা চলমান বার্ষিক পরীক্ষাও গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক রেবেকা সুলতানা।
গতকাল রোববার বিকালে তিনি আমার দেশকে বলেন, সোমবার (আজ) থেকে তিনদিনের পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। এ সময় পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষকরা।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদটি নবম গ্রেডের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করে দ্রুত সময়ে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’-এর গেজেট প্রকাশসহ চার দফা দাবিতে গতকালও আন্দোলন করেছেন শিক্ষকরা।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, অনেক নিচের গ্রেডের পদও নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু ন্যায্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু দশম গ্রেডের সহকারী শিক্ষক পদটির কোনো নড়াচড়া নেই।
দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মোল্লা আমার দেশকে বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার এজন্য আন্দোলন করেছেন। তবে এবার দাবি আদায় করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের চার দফার মধ্যে রয়েছে—এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড ধরে বিসিএস (মাধ্যমিক) পদসোপানসহ স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন, ২০০১-১২ ব্যাচ পর্যন্ত সব শিক্ষকদের টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ প্রদান, সব শূন্যপদে সিনিয়র শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, জেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি ও পদায়ন এবং বিএড-এমএড পেশাগত ডিগ্রি অর্জনের জন্য অবিলম্বে ২-৩টি অগ্রিম বর্ধিত বেতনের মঞ্জুরি আদেশ প্রদান।