সালমান শাহ হত্যা মামলা
চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার ঘটনায় সাবেক স্ত্রী সামীরা হক এবং খলনায়ক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার ইন্সপেক্টর আতিকুল ইসলাম খন্দকার তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামানের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত সোমবার মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, সামীরা হকের মা লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডেবিট, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আ. ছাত্তার, সাজু, রেজভি আহমেদ ওরফে ফরহাদ।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি।
তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। এরপর সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।
মামলাটি এরপর তদন্ত করে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। এরপর তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এ প্রতিবেদনেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
গতকাল সোমবার ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। এবিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ্কে হত্যা করেছে বলে মামলায় অভিযোগ করেন মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম