রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে শারমিন খানম (৪০) এসেছেন ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা ক্যাম্পে। ৩০ অক্টোবর সরেজমিনে কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপচারিতায় শারমিন বলছিলেন, ‘নিজের শরীরের যত্ন নিজেকেই নিতে হবে। সুস্থতা আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ক্যানসার এমনটি একটি রোগ, যা মারণব্যাধি।
আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো আছি। তবুও কোনো রোগ যদি বাসা বেঁধে থাকে, তবে শুরুতে শনাক্ত হলে চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাবে। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। এ ধরনের ক্যাম্প আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনেক নারী মারাত্মক এ রোগটির ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
‘আমি বিজয়িনী কন্যা-জায়া-জননী—আমার হাতেই ব্রেস্ট ক্যানসারের পরাজয়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীর গুলশান এলাকায় ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা ক্যাম্প।
ঢাকার গুলশান ২-এর ডিসিসি নর্থ সুপার মার্কেট পার্কিং জোনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি ড. নুরুন্নিসা সিদ্দীকা।
ক্যাম্পে আগত মহিলাদের উদ্দেশে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. নাঈমা মোয়াজেম, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবীবা চৌধুরী সুইট, বিএমইউরন সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সামিয়া মুবিনা প্রমুখ।
বক্তারা তাদের আলোচনায় ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পর্কে নারীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বক্তারা আরো বলেন, ব্রেস্ট ক্যানসার কেবল একটি রোগ নয়, এটি নারীর মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস ও সময়োপযোগী সচেতনতারও পরীক্ষা। তাই প্রত্যেক নারীকে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন হয়ে প্রতি মাসে একবার ‘Self Breast Examination’ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাস ‘ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে আয়োজিত এ ক্যাম্পে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১২ হাজার নারী প্রতিবছর ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অথচ নিয়মিত ‘Self Breast Examination’-এর মাধ্যমে সময়মতো লক্ষণ শনাক্ত করতে পারলে এ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব।
নূরুন্নিসা সিদ্দীকা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের এ আয়োজনের মাধ্যমে আশা করি নারীদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। যদি তারা নিজেদের চেষ্টায় শুরুতেই এই রোগ শনাক্ত করতে পারেন, তাহলে মারাত্মক রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। এটা এমন এক মরণব্যাধি, যা অসচেতনতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়; আর সচেতন থাকলে শুরুতেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নী, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আইন বিভাগ; কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সুফিয়া জামাল, সেক্রেটারি, ঢাকা মহানগরী উত্তর; কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আয়েশা সিদ্দিকা পারভীন, সেক্রেটারি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ; কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য নাজমুন নাহার নীলু, প্রচার ও সাহিত্য, সাংস্কৃতিক বিভাগ; আমেনা বেগম, সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা মহানগরী উত্তর; জলি ইয়াসমিন, সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা মহানগরী উত্তর; নাসরিন আক্তার, অফিস সেক্রেটারি জান্নাতুল কারীম সুইটি, সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ; আকলিমা ফেরদৌসী, আইটি ও মিডিয়া বিভাগ, ঢাকা মহানগরী উত্তর।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, নারীরাই হবে এই লড়াইয়ের অগ্রভাগে—নিজের হাতেই ব্রেস্ট ক্যানসারের পরাজয় ঘটিয়ে হবে ‘বিজয়িনী’। অনুষ্ঠান শেষে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করা হয়।