দেশ ফ্রিল্যান্সারদের স্বীকৃতি ও সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চালু করে ‘freelancers.gov.bd’ ওয়েবসাইট। সরকারি প্রচারণায় বলা হয়, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের লক্ষাধিক অনলাইনকর্মী এক ছাতার নিচে আসবে এবং তাদের জন্য ইস্যু হবে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড। কিন্তু বাস্তবে সাইটে ঢুকলেই দেখা যায় ‘Website is under construction’ লেখা, অকেজো বাটন, ভাঙা লিংক আর এমন ডিজাইন, যা ২০১৫ সালের অদক্ষ ডেভেলপারদের ওয়েবসাইটকেও হার মানায়।
১. বেটা ভার্সনে বছর পার
সরকারি প্রকল্প মানেই কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই অর্থ কতটা কাজে লাগছে?
freelancers.gov.bd সাইটটি দীর্ঘদিন ধরে বেটা ভার্সনে রয়েছে। সাইটে প্রবেশ করলেই দেখা যায়, ওপরে মাত্র চারটি বাটন Home, Features, Team, About। কিন্তু মজার বিষয় হলো, কোনোটিই ক্লিক করলে কাজ করে না!
২. দায়সারা ডিজাইন
নিচের ‘Follow Us’ অংশে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া আইকনগুলোতেও ক্লিক করলে কিছুই আসে না। একজন ওয়েব ডেভেলপারের দৃষ্টিতে, এমন একটি ডিজাইন Fiverr-এর একজন জুনিয়র ফ্রিল্যান্সার মাত্র ২০ ডলারে করে দিতে পারবে। অথচ এখানে সরকারি বাজেটে ব্যয় হয়েছে লাখ নয়, সম্ভবত কোটি টাকায়।
৩. আইডি কার্ডে কোনো উপকার মেলেনি
সরকার বলেছিল, এই ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড পেলে ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ, এমনকি সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই কার্ড ৭০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের কোনো কাজে আসেনি।
ব্যাংকগুলো এখনো এটিকে সরকারি আইডি হিসেবে গ্রহণ করছে না। তাছাড়া অনেকেই আবেদন করেও মাসের পর মাস কার্ড পাননি বা পেলে তা দিয়ে কোনো সুবিধা মেলেনি।
৪. উদ্দেশ্য ভালো, বাস্তবায়ন দুর্বল
সরকারের উদ্দেশ্য প্রশংসনীয় ছিল তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ করা, অনলাইন আয়ের স্বীকৃতি দেওয়া; কিন্তু বাস্তবতা হলো, ফ্রিল্যান্সারদের মূল সমস্যাগুলো যেমন : আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে (PayPal, Payoneer, Wise ইত্যাদি) না থাকা, কাজের টাকা দেশে আনার জটিলতা ও করনীতির অস্পষ্টতাÑএসব জায়গায় এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর পরিবর্তে কোটি টাকা ব্যয়ে এমন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে, যা চালু অবস্থাতেই ব্যবহার অনুপযোগী।
৫. সমাধান কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রিল্যান্সারদের প্রকৃত সহায়তা দিতে হলে সরকারের উচিতÑ
পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করা (যেমন : PayPal, Stripe) রেমিট্যান্সের স্বচ্ছতা ও কর সুবিধা নিশ্চিত করা। টেকনোলজিক্যাল প্রজেক্টে বাস্তব ফ্রিল্যান্সারদের সম্পৃক্ত করা। বেটা সাইট নয়—সম্পূর্ণ কার্যকর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। জনপ্রতি বরাদ্দ টাকার স্বচ্ছ হিসাব প্রকাশ করা।
দেশে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তারা দেশের রেমিট্যান্সে বড় অবদান রাখছেন; কিন্তু এখনো মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। freelancers.gov.bd-এর মতো প্রকল্প যদি বাস্তবিকভাবে কার্যকর করা যেত, তাহলে এটি হতে পারত তরুণদের জন্য একটি মাইলফলক। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয়—এটি আরেকটি অসম্পূর্ণ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্বপ্ন, যার মেরামত দরকার কাগজে নয়, বাস্তবে।