আমাজন জঙ্গল ‘আমাজনিয়া’ নামেও পরিচিত। এই বিশাল বনটি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীবিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত। এটি পুরো আমাজন নদীর অববাহিকাকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। এই অববাহিকার এলাকা প্রায় ৭,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (২৭,০০,০০০ বর্গমাইল), যার মধ্যে ৬,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (২৩,০০,০০০ বর্গমাইল) বনভূমি দ্বারা আবৃত। এই অঞ্চলটি ৯টি দেশ এবং ৩,৩৪৪টি আদিবাসী অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
আমাজন বনাঞ্চলের বড় অংশ, প্রায় ৬০ শতাংশ, ব্রাজিলে অবস্থিত। এরপর পেরুতে ১৩ শতাংশ, কলম্বিয়ায় ১০ শতাংশ এবং সামান্য পরিমাণে বলিভিয়া, ইকুয়েডর, গায়েনা, ফরাসি গায়েনা, সুরিনাম এবং ভেনেজুয়েলায় বিস্তৃত। চারটি দেশের প্রথম স্তরের প্রশাসনিক অঞ্চলের নাম ‘আমাজনাস’। তবে ফ্রান্স তাদের ফরাসি গায়ানার সুরক্ষিত বনাঞ্চলের জন্য ‘গায়ানা আমাজনিয়ান পার্ক’ নাম ব্যবহার করে।
আমাজন পৃথিবীর অবশিষ্ট রেইন ফরেস্টের অর্ধেকেরও বেশি অংশ প্রতিনিধিত্ব করে। এটি এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট বা বর্ষাবন। এখানে প্রায় ১৬,০০০ প্রজাতির ৩৯০ বিলিয়ন গাছ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আমাজন অঞ্চলে ৩৫০টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ৩ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করে। এই গোষ্ঠীগুলো ৯টি ভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভক্ত এবং ৩ হাজার ৩৪৪টি স্বীকৃত আদিবাসী অঞ্চলে ভাগ করা। বসবাসকারীর ৯ শতাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং তাদের মধ্যে ৬০টি গোষ্ঠী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
বন উজাড়ের কারণে আমাজন অঞ্চলে বড় পরিসরে ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে এই অঞ্চলে বন উজাড় না করে একটি টেকসই অর্থনৈতিক কর্মসূচি চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদ
আমাজন জঙ্গলে বিরল প্রজাতির প্রাণী ও আদিবাসী মানুষ রয়েছে, যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। আমাজনে ৮৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিপজ্জনক অনেক প্রাণীও আমাজনে বাস করে। আমাজনে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর সাপ অ্যানাকোন্ডা। এ ছাড়া রয়েছে লাল চোখা ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, জাগুয়ার, বানর, বৈদ্যুতিক ইল, পিরানহা, বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগসহ অসংখ্য বিষাক্ত জাতের সাপ ও বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ প্রাণী।
আমাজনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে, যা প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত। নানা রকমের গাছপালা দিয়ে আবৃত এ বনে বেশির ভাগই চিরহরিৎ বৃক্ষ। তাই এ বনকে চিরহরিৎ বনও বলা হয়। পৃথিবীজুড়ে যেসব রেইনফরেস্ট রয়েছে, তার অর্ধেকটাই আমাজন অরণ্য। তাই আমাজনকে রেইন ফরেস্টও বলা হয়। রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়, বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। প্রচণ্ড গরম বলে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি আর সে কারণে আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হয়।