হোম > ফিচার > স্বাস্থ্য

তোতলামি : চিকিৎসা ও ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

তোতলামি বা Stuttering হলো এক ধরনের বাকবিকলতা, যেখানে কথা বলার সময় ধ্বনি, শব্দ বা বাক্যাংশ পুনরাবৃত্তি হয়। দীর্ঘায়িত হয় বা হঠাৎ থেমে যায়। যেমন : কেউ বলতে চায়Ñ‘আমি স্কুলে যাব’। কিন্তু বলতে গিয়ে বলছে—‘আ… আ… আমি স্কু…স্কু…স্কুলে যাব।’ এটি শুধু উচ্চারণ সমস্যা নয়, বরং মস্তিষ্কের ভাষা নিয়ন্ত্রণ ও পেশি-চালনার অসামঞ্জস্যের ফল।

সাধারণত দুই-সাত বছর বয়সে যখন শিশুরা কথা শেখে, তখনই এর শুরু হয়। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এটি বয়সের সঙ্গে নিজে থেকেই কমে যায়, তবে কারো ক্ষেত্রে তা প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—তোতলামি কোনো বুদ্ধির ঘাটতি নয়। এটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য বাকসমস্যা, যা সঠিক অনুশীলন, সহানুভূতি ও চিকিৎসায় অনেকাংশে কমানো যায়।

তোতলামির প্রধান কারণ

তোতলামির কারণ একক নয়—এটি জৈবিক, মানসিক ও পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদানের ফল। বংশগত কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর পরিবারে তোতলামির ইতিহাস থাকে। স্নায়ুবিক কারণে মস্তিষ্কের ভাষা নিয়ন্ত্রণ অংশে ভারসাম্যহীনতা থাকলে তোতলামি হয়। মানসিক চাপ ও ভয়ের কারণে লজ্জা, ভীতি বা আত্মবিশ্বাসের অভাব তোতলামি বাড়ায়।

পরিবেশগত কারণে ‘ঠিক করে বলো’ ধরনের চাপ শিশুর মনে ভয় ও অনিরাপত্তা তৈরি করে।

এছাড়া আঘাত বা স্ট্রোকের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে আঘাতজনিত তোতলামিকে Acquired Stuttering বলা হয়।

লক্ষণ ও প্রকার

তোতলামির সময় কথার ধারাবাহিকতা ভেঙে যায়। দেখা যায় শব্দ বা অক্ষর পুনরাবৃত্তি (যেমন : মা-মা-মা-মানুষ)।

ধ্বনি টেনে বলা বা কথা শুরুতে দেরি হওয়া।

ঠোঁট, গলা বা মুখের পেশি টান ধরা।

চোখের পলক ফেলা, মাথা নাড়ানো।

কথা বলার সময় ভয়, ঘাম বা হৃৎকম্পন।

প্রকারভেদ

১️. বিকাশজনিত তোতলামি (শৈশবে ভাষা শেখার সময়)।

২️. নিউরোজেনিক তোতলামি (স্নায়ুবিক আঘাত বা স্ট্রোকে)।

৪. সাইকোজেনিক তোতলামি (মানসিক ট্রমা বা ভয়াবহ ঘটনার পর)।

জটিলতা

তোতলামি মানসিকভাবে বেশি কষ্টদায়ক।

আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান কমে যায়।

সামাজিক যোগাযোগে অনীহা দেখা দেয়।

স্কুল, পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারে ভয় পায়।

দীর্ঘদিনে হতাশা ও একাকিত্বে ভোগে।

রোগ নির্ণয়

চিকিৎসক সাধারণত কথার ধরন, পুনরাবৃত্তির মাত্রা, শ্রবণ ও স্নায়ুবিক মূল্যায়নের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করেন। মানসিক চাপ থাকলে সাইকোলজিক্যাল মূল্যায়নও জরুরি।

প্রতিকার ও সহায়তা

তোতলামি পুরোপুরি নিরাময় নাও হতে পারে, কিন্তু সঠিক যত্নে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব।

স্পিচ থেরাপি সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত অনুশীলনে কথার ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।

পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—

শিশুকে কখনো তিরস্কার বা উপহাস করা যাবে না।

ধৈর্য ধরে তার কথা শুনতে হবে।

আয়নার সামনে ধীরে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা উপকার।

গভীর শ্বাস নিয়ে কথা শুরু করলে ছন্দ বজায় থাকে।

স্কুলে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।

সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো—আত্মবিশ্বাস।

পরিসংখ্যান

বিশ্বে প্রায় ১ শতাংশ মানুষ তোতলামিতে ভোগে।

শিশুদের মধ্যে হার প্রায় ৫ শতাংশ, তবে ৭৫-৮০ শতাংশ বয়সের সঙ্গে ভালো হয়।

পুরুষদের মধ্যে হার মহিলাদের তুলনায় চারগুণ বেশি।

বাংলাদেশে আনুমানিক ২০-২৫ লাখ মানুষ তোতলামিতে আক্রান্ত।

সচেতনতার বার্তা

তোতলামি লজ্জার নয়—এটি বোঝার বিষয়।

বিশ্বখ্যাত তোতলা ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন—উইনস্টন চার্চিল, আইজ্যাক নিউটন, ব্রুস উইলিস, টাইগার উডস, জো বাইডেন প্রমুখ। তাদের জীবন প্রমাণ করে—তোতলামি কোনো ব্যর্থতা নয়। এটি এক চ্যালেঞ্জ, যা সাহস, ভালোবাসা ও অনুশীলনে জয় করা সম্ভব। চলুন, আমরা তোতলা মানুষকে সহানুভূতির চোখে দেখি, তাদের কণ্ঠে ফিরিয়ে দিই সাহস ও সম্মান।

প্রতিটি কণ্ঠস্বরই মূল্যবান, প্রতিটি শব্দই অর্থবহ।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিয়ে মিথ

নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস

শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন

ডেঙ্গুতে আরো ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৬১৫

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৩৩

আইসিইউতে ৪১% রোগীর শরীরে কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ডেন্টাল ইউনিট চালু

ডেঙ্গুতে একদিনে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৭৮

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৯৩