বাংলাদেশে প্রতিবছর শীতকালের শুরু থেকে যশোর, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, গাজীপুরসহ আরো অনেক অঞ্চলে খেজুরের রস পাওয়া যায়। কাঁচা খেজুরের রস অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই কাঁচা খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাস নামের এক প্রাণঘাতী সংক্রমণ দেখা যায়, যা মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস করে থাকে।
সংক্রমণের উৎস ও বিস্তার
● ফলখেকো বাদুড় হলো নিপাহ ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক।
● কাঁচা খেজুরের রস পান করা।
● মানুষ থেকে মানুষে, বিশেষ করে আক্রান্ত রোগীর শ্বাসতন্ত্রের নিঃসৃত পদার্থের মাধ্যমে।
লক্ষণগুলো
নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ৪-১৪ দিনের মধ্যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমনÑ
● জ্বর, মাথাব্যথা ও দুর্বলতা।
● শ্বাসকষ্ট।
● মানসিক বিভ্রান্তি।
● খিঁচুনি।
● চেতনা হারানো।
● কোমা।
রোগ নির্ণয়
● রক্ত ও শরীরবৃত্তীয় তরলে RT-PCR.
● সেরোলজিক্যাল টেস্ট (IgM, IgG Elisa)।
● MRI of Brain.
চিকিৎসা
● বর্তমানে নিপাহ ভাইরাসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা টিকা নেই।
● চিকিৎসা মূলত সাপোর্টিভ কেয়ারনির্ভর, যেমন : জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ, অক্সিজেন সাপোর্ট এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
● কাঁচা খেজুরের রসপান থেকে বিরত থাকা।
● বাদুড়ের সংস্পর্শ এড়ানো। বাদুড় খাওয়া ফল না খাওয়া।
● সংক্রমিত রোগীর যত্ন নেওয়ার সময় গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
● আক্রান্ত এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি।
নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস একটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী সংক্রমক রোগ। যার মৃত্যুর হার ৪৫-৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতাই এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সময়মতো শনাক্তকরণ ও আইসোলেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব।
লেখক : মেডিকেল অফিসার
অরোরা স্পেশালাইজড হসপিটাল