হোম > ফিচার > স্বাস্থ্য

শিশুর হাঁপানি ও প্রতিকার

ডা. আহাদ আদনান

হাঁপানি বা অ্যাজমা ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই রোগে অ্যালার্জিজনিত কারণে ফুসফুসের নালিগুলো সরু হতে থাকে, আর প্রচণ্ড সংবেদনশীল হয়ে যায়। কাশি, বুক থেকে শোঁ-শোঁ শব্দ, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে চাপ অনুভবের মধ্য দিয়ে হাঁপানি রোগ প্রকাশ পায়। একটানা দীর্ঘ মেয়াদের কাশি হাঁপানির প্রধান লক্ষণ। রাতের বেলা কিংবা ভোরে এই কাশি বাড়তে পারে। অনেকেই কাশতে কাশতে ঘুম থেকে উঠে যায়। আবার অনেক শিশু খেলাধুলা করতে গেলেও কাশি বেড়ে যায়। ধুলাবালি, সিগারেট বা চুলার ধোঁয়া, ফুলের রেণু, গৃহস্থালি পশু বা পাখির পশম, রোঁয়া বা শুঁকিয়ে যাওয়া বিষ্ঠা, বিশেষ কোনো অ্যালার্জিযুক্ত খাবার, এমনকি পরীক্ষার চাপ বা দুশ্চিন্তার মধ্যেও অনেকের কাশির লক্ষণ প্রকট হতে পারে। এদের অনেকেরই সঙ্গে অল্প মাত্রার জ্বরে নাকে বা চোখে পানি, শরীরে চুলকানি বা মাথার তালুতে আঁশের মতো ঘা থাকে। পাশাপাশি পরিবারে অন্য ঘনিষ্ঠ সদস্যের হাঁপানির ইতিহাসও থাকতে পারে। অনেকেই এসে বলেন, কয়েক দিন পরপর কাশির জন্য এলাকা থেকে কাশির সিরাপ বা নেবুলাইজেশন নিলে উপশম হয়েছে বলে অনুভূত হয়। এসব লক্ষণ মিলিয়ে আমাদের হাঁপানি নির্ণয় করতে হয়।

হাঁপানি রোগটি মূলত রোগীর লক্ষণ, ইতিহাস আর শারীরিক নিরীক্ষা করে নির্ণয় করা যায়। এর পাশাপাশি তিনটি সহজ পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় এবং রোগের উন্নতি বা অবনতি বোঝা যায়। একটি হচ্ছে পিক-ফ্লো মিটার, যাতে একটি নলে জোরে ফুঁক দিয়ে রঙ মিলিয়ে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বোঝা যায়। এতে কোনো বিদ্যুৎ ও সফটওয়্যার প্রযুক্তি লাগে না, কোনো ব্যথা বা জটিলতা নেই। খরচ নগণ্য এবং সহজে বহন করা যায়। আরেকটি পরীক্ষা হচ্ছে ফেনো (FeNO)। এটি দেশের কয়েকটি কেন্দ্রে করা হয়। পাঁচ বছরের বেশি বয়সি বাচ্চারা নলে ফুঁক দেয়, যা সফটওয়্যর বিশ্লেষণ করে হাঁপানি নির্ণয় করে। এতেও কোনো ব্যথা বা জটিলতা নেই। আট-নয় বছরের ওপরের রোগীর জন্য আরেকটি ব্যথা বা জটিলতামুক্ত পরীক্ষা হচ্ছে স্পাইরোমেট্রি। এটি অনেক হাসপাতালেই করা যায়। এগুলোর পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে মেথাকোলিন চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা, বুকের এক্সরে, রক্তের অ্যালার্জি পরিমাপ করা লাগতে পারে।

হাঁপানির চিকিৎসার মূল ওষুধ হচ্ছে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ। এগুলো সবচেয়ে কম মাত্রায় এবং সর্বনিম্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ব্যবহারের উপায় হচ্ছে ইনহেলার। যে শিশুরা ইনহেলার ব্যবহার করতে পারে না, তাদের জন্য নেবুলাইজেশন। গুরুতর অবস্থায় স্বল্প মেয়াদের মুখে খাওয়ার স্টেরয়েডও লাগতে পারে। তবে ঘন ঘন এবং দীর্ঘ মেয়াদে মুখে স্টেরয়েড সেবন করলে ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে। স্টেরয়েড একা কাজ না করলে এর সঙ্গে ফুসফুসের সংকুচিত নালিগুলোকে প্রশস্ত আর আলগা করার ওষুধও দিয়ে থাকি। এসব ইনহেলার অবশ্যই স্পেসার দিয়ে একজন প্রশিক্ষিত তত্ত্বাবধায়কের দেখানো নিয়ম অনুযায়ী শিখে দিতে হবে। প্রচলিত ওষুধের পাশাপাশি আধুনিক ইমিউনোথেরাপি দিয়েও জটিল অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানির চিকিৎসা করা হয়।

- জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ এবং দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি খাবার নিশ্চিত করুন।

- কোনো বিশেষ খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না বের করতে হবে। একই খাবারে সবার সমস্যা নাও হতে পারে। প্রমাণিত অ্যালার্জিযুক্ত খাবারের (গরুর মাংস, গরু-ছাগলের দুধ, ইলিশ, চিংড়ি, বেগুন, পুঁইশাক, হাঁসের ডিম ইত্যাদি) যেকোনো একটি খুব অল্প পরিমাণে দিয়ে দেখতে হবে সমস্যা হচ্ছে কিনা। সমস্যা হলে ওই বিশেষ খাবার বাদ দিতে হবে। সমস্যা না হলে সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। লক্ষ রাখবেন, একাধিক অ্যালার্জিযুক্ত খাবার একই দিন না দেওয়াই ভালো।

- কৃত্রিম রঙযুক্ত খাবার (প্যাকেটের জুস, চকলেট, চিপস), কেমিক্যাল দেওয়া ফল, সবজি (বিশেষ করে মাল্টা, আঙুর) পরিহার করবেন। দেশি মৌসুমি ফল (আম, জাম, পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কামরাঙা, কলা, কমলা, পেঁপে, গাব, সফেদা, আতা, লটকন, আমলকী ইত্যাদি) বেশি করে খাওয়ার অভ্যাস করুন। ভিটামিন সি হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট শরীরে রোদ লাগাতে হবে।

- ঘরে মশার কয়েল/স্প্রে করবেন না (অন্তত শিশুর ঘরে)। মশারির ব্যবহার বাড়ান। ধূমপান পরিহার করুন। শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে বাঁচান। শীতকালে কম্বল ব্যবহার না করে কাভার-সহ লেপ ব্যবহার করবেন। কম্বলের সূক্ষ্ম আঁশ শ্বাসনালিতে সমস্যা করে। আঁশযুক্ত খেলনা, কার্পেট, কুশন পরিহার করবেন। ঘর ঝাড় দেওয়ার সময় বাচ্চাকে সরিয়ে রাখুন। টিভি, মোবাইল ও ট্যাব দেখা কমিয়ে ঘরের বাইরে খেলাধুলা এবং হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন। বাচ্চার স্কুলে ধুলাবালিতে মুখোশ (মাস্ক) পরার অভ্যাস করুন।

- বাজারে বা রাস্তায় অনেক সময় শ্বাসকষ্ট ‘নির্মূলের’ টোটকা চিকিৎসা দেওয়া হয়, যেখানে উচ্চমাত্রার হাঁপানির ওষুধ এবং অনেক ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। এগুলো সাময়িকভাবে ভালো লাগার অনুভূতিও তৈরি করে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য এগুলো ভয়ংকর ক্ষতির কারণ। গ্রামের ফসল তোলার সময়টাও হাঁপানির জন্য খারাপ।

- অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানির রোগীদের প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দিতে হবে।

ইনহেলার প্রথম পছন্দ

সারা পৃথিবীর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা শিশুদের হাঁপানির ক্ষেত্রে মুখের ওষুধ, নেবুলাইজেশন নিরুৎসাহিত করছে এবং ইনহেলারকে প্রথম পছন্দ বলছে। এর কিছু কারণ আছে।

১. একটি নির্দিষ্ট ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে একই ওষুধের ডোজ মুখে খেলে (সিরাপ বা বড়ি) সবচেয়ে বেশি লাগে, নেবুলাইজেশনে সেই ডোজ তুলনামূলকভাবে কম লাগে এবং ইনহেলারে খুবই কম লাগে। অর্থাৎ, ইনহেলারে নেওয়া ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবচেয়ে কম।

২. মুখের খাওয়া ওষুধ ফুসফুসের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ ও বৃক্কে প্রভাব ফেলে। সেই তুলনায় ইনহেলারে নেওয়া ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে কাজ করে।

৩. দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ খেলে উচ্চতা বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়ে শিশুরা খর্বকায় হয়। অথচ স্টেরয়েড ইনহেলারে নিলে এসব সমস্যা থাকে না। শুধু স্টেরয়েড ইনহেলারে ব্যবহারের পর কুলি করলে মুখে ঘা ও গলার স্বর পরিবর্তনের মতো সমস্যাও হয় না।

৪. ইনহেলার ব্যবহারে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই অন্যান্য ওষুধ লাগে না। এসব বাচ্চার অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না বললেই চলে।

৫. সারা বছরে বারবার আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় ইনহেলারের খরচ খুবই কম। অর্থাৎ ইনহেলারই আপনার জন্য অর্থসাশ্রয়ী।

লেখক : শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ

আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা

ডেঙ্গুতে আরো ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮

ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

শীতে বাড়ে মানসিক চ্যালেঞ্জ

অ্যান্টিবায়োটিক কেন কার্যকারিতা হারায়

ক্যানসার গবেষণায় পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন

আরো ৫ জনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩৩৬

স্ট্রোকের পর রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা

ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৯২

চোখ রাঙাচ্ছে শীতকালীন রোগ, এখনই নিতে হবে প্রস্তুতি

এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু