শীতকালে শিশুদের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়। এ সময় সর্দি, কাশি, জ্বর, পেট খারাপ বা ডায়রিয়ায় শিশুরা আক্রান্ত হয়। শীতে ভাইরাসজনিত জ্বরও বেশি হয়। তাই শীতকালে শিশুদের জন্য দরকার বাড়তি যত্নের ও সতর্কতার।
নবজাতকের যত্ন
নবজাতক অল্প শীতেই কাবু হয়ে যায়। বিশেষ করে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ২ দশমিক ৫ কেজির কম ওজনের শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। এজন্য রুমের তাপমাত্রা ২৭-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখতে হবে। ঘরের বাইরে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। জানালার পাশে থেকে গায়ে রোদ লাগান। অবশ্যই হাতমোজা, পা-মোজা ও কানটুপি পরাবেন। ভারী সুতি জামা পরাবেন।
ত্বকের যত্ন
শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ ও খসখসে। এ সময় শিশুর কোমল ত্বকে ব্যবহার করতে হবে ভালো মানের বেবি অয়েল, অলিভ অয়েল, গ্লিসারিন বা লোশন।
শিশুর খাদ্য
যেসব বাচ্চা চিবিয়ে খেতে পারে না, তাদের ডিমের কুসুম, স্যুপ, খিচুড়ি ও ফলের রস খাওয়ান। ছয় মাস বয়স থেকে পেঁপে, কমলা, মাল্টা, কলা ও লেবু খাওয়াতে পারেন।
কোন কাপড় পরাবেন
ভেতরে সুতি কাপড় পরাবেন, এর ওপর সোয়েটার/জ্যাকেট ব্যবহার করবেন। কয়েক স্তরে ড্রেস পরাতে পারেন শীতের প্রকোপ বুঝে। কম্বল ব্যবহার না করে কাঁথা বা লেপ ব্যবহার করবেন।
শিশুর শরীর মালিশ
তেল মালিশ রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং পেশির বিকাশে ভূমিকা রাখে। জন্মের এক মাস পর থেকে নিরিবিলি উষ্ণ পরিবেশে মোবাইল ও টিভি বন্ধ রেখে শিশুর পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত ম্যাসেজ করবেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন, গান গাইতে পারেন। ম্যাসেজ ১৫-২০ মিনিট ধরে গোসলের আগে এবং রাতে ঘুমানোর আগে করতে পারেন।
ঠান্ডা কাশি থেকে মুক্তির উপায়
সরষের তেলে রসুনের রস মিশিয়ে হালকা গরম করে বুকে ও হাত-পায়ে ম্যাসেজ করুন। বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে প্রতিদিন ৪০ মিনিট সূর্যের আলোতে খেলতে দিন। এক বছরের ওপরের শিশুদের মধু খাওয়াবেন। বাচ্চাকে খুব জনবহুল স্থানে (মেলা বা পিকনিক) না নিয়ে যাওয়াই ভালো।
শিশুর গোসল
এক দিন পরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে দুপুরে গোসল করান। গোসলের আগে ঘরের দরজা-জানালা লাগিয়ে নিন। গোসলের পর শিশুর গায়ে বেবি লোশন লাগাবেন। শীতকালে শিশুদের ওপর ভালোভাবে নজর রাখুন। বিশেষ করে হাত-পায়ের পাতা ফ্যাকাশে হলো কি না, শীতে কাঁপছে কি না, খাবার ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, তা লক্ষ্য করুন। এরকম কোনো উপসর্গ দেখা দিলে শিশুকে নিয়ে মা-বাবা দ্রুত নিকটস্থ শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
লেখক : নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল