হোম > ফিচার > তথ্য-প্রযুক্তি

স্মার্টফোনে সিনেমাটিক ভিডিও

আরিফ বিন নজরুল

একসময় সিনেমাটিক ভিডিও বানানো মানে ছিল ভারী ক্যামেরা, লাইট, ট্রাইপড ও ব্যয়বহুল গিয়ার। সেই দিন বদলে গেছে। এখন স্মার্টফোন হাতে থাকলেই যে কেউ গল্প বলতে পারে। তৈরি করতে পারে সিনেমার মতো দৃশ্য।

উন্নত সেন্সর, অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন, AI প্রসেসিং সব মিলিয়ে স্মার্টফোন এখন এক ধরনের ক্ষুদ্রাকৃতির ফিল্ম স্টুডিও। তবে শুধু ভালো ফোন থাকলেই সিনেমাটিক ভিডিও হবে না। প্রয়োজন কিছু কৌশল, চোখ ও গল্প দেখার ক্ষমতা। আর সে কারণেই স্মার্টফোন ভিডিওগ্রাফি তরুণদের মধ্যে আলাদা একটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠছে।

সিনেমাটিক ভিডিওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো নরম আলো, গভীর রঙ, ধীর গতির চলন এবং চোখকে গল্পের ভেতর নিয়ে যাওয়ার মতো ফ্রেমিং। স্মার্টফোনে এটি অর্জন করা কঠিন নয়। দিনের সফট লাইট, সূর্যাস্তের আলো বা মেঘলা দিনের পরিবেশ। এসবই ভিডিওকে প্রাকৃতিকভাবে সিনেমাটিক করে তোলে।

বেশির ভাগ স্মার্টফোনেই এখন ম্যানুয়াল মোড বা প্রো-ভিডিও মোড থাকে। যেখানে আইএসও, শাটার স্পিড ও হোয়াইট ব্যালান্স নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এগুলো ঠিকভাবে সেট করলে সাধারণ ক্লিপও সিনেমার দৃশ্যের মতো নরম ও প্রাণবন্ত দেখা যায়।

স্থিতিশীলতা সিনেমাটিক লুক তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ কাঁপা ভিডিও যত ভালো ক্যামেরাই হোক, দৃষ্টিকটু লাগে। গিম্বল থাকলে ভালো, না থাকলে ট্রাইপড বা এমনকি ফোনকে শক্তভাবে ধরে ধীরে চলাই যথেষ্ট। পেশাদাররা যে ‘ডলি ইন’, ‘ট্র্যাক শট’, ‘প্যান’—এসব কৌশল ব্যবহার করেন। স্মার্টফোন দিয়েও তা অনায়াসে করা যায়। হাঁটার সময় পা নরম করে ফেলা বা দুই হাত দিয়ে ফোনকে ধরে কোমরের কাছ থেকে চালানো। এসব ছোট কৌশল ভিডিওতে বড় পরিবর্তন আনে।

সিনেমাটিক ভিডিওর আরেকটি রহস্য হলো—গল্প বলা। কোনো দৃশ্য বড় জায়গা দখল করলেই তা সিনেমাটিক হয় না। বরং ছোট মুহূর্তগুলোকেই দক্ষভাবে ধরা সিনেমার সৌন্দর্য। একটি কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে। নদীতে সূর্যের আলো পড়ছে। রাস্তায় হাঁটছেন কেউ। বাচ্চার হাসি। সবই হয়ে উঠতে পারে সিনেমার অংশ। স্মার্টফোনের পোর্ট্রেট ভিডিও মোড বা টেলিফটো লেন্স মানুষ বা বস্তুকে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আলাদা করে এনে দিতে পারে, যা সিনেমাটিক ভিডিওর হৃদয়।

সিনেমাটিক রঙই (Color Grading) হচ্ছে ভিডিওর আসল জাদু। স্মার্টফোনে শুট করা ফুটেজ সাধারণত কনট্রাস্ট ও স্যাচুরেশনে বেশি থাকে। কিন্তু যেকোনো ভিডিও এডিট অ্যাপে ফিল্ম টোন, গ্রিনিশ, ওয়ার্ম বা টিল অ্যান্ড অরেঞ্জ লুক লাগালেই ফুটেজ বদলে যায়। অনেক ফোন এখন LOG বা Flat Profile-এ ভিডিও রেকর্ড করতে পারে, যা পেশাদার কালার গ্রেডিংয়ে অসাধারণ ফল দেয়। মাত্র ৫ মিনিটের রঙ-সেটিং ভিডিওটিকে সিনেমার মতো করে তুলতে পারে।

সাউন্ডও সিনেমাটিক ভিডিওর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফোনের মাইক্রোফোন শব্দ ধরলেও পরিবেশের আওয়াজ থাকে বেশি। ছোট একটি ল্যাভালিয়ার বা শটগান মাইক ব্যবহার করলে সংলাপ হবে পরিষ্কার। ব্যাকগ্রাউন্ড হবে নিয়ন্ত্রিত। আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক—এটাই ভিডিওকে জীবন্ত করে তোলে। গল্পের মুড অনুযায়ী নরম, আবেগী বা ছন্দযুক্ত সাউন্ড ব্যবহার করলে দর্শকের মনোযোগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে এখন ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম রিলস—সব জায়গাতেই সিনেমাটিক ভিডিও জনপ্রিয়। ভ্রমণ ভিডিও, ফুড রিভিউ, বিয়ের অনুষ্ঠান, ছোট গল্প—সবই করা হচ্ছে স্মার্টফোনে। পেশাদারদের একটি বড় অংশও ব্যাকআপ ক্যামেরা হিসেবে ফোন ব্যবহার করছেন।

অনেক নির্মাতা স্মার্টফোন দিয়েই পূর্ণাঙ্গ শর্ট ফিল্ম তৈরি করছেন, যা আন্তর্জাতিক উৎসবেও প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় ফোন ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা কমেছে। সৃজনশীলতার সীমা বাড়ছে।

দিনের শেষে, সিনেমাটিক ভিডিও মূলত যন্ত্রের নয়। চোখের কারুকাজের শিল্প। আপনার ফোন যাই হোক, যদি আলো বুঝতে পারেন, গল্প বলতে পারেন এবং একটু ধৈর্য নিয়ে শট সাজাতে পারেন—তাহলে আপনার ভিডিও সিনেমার মতোই ফুটে উঠবে। স্মার্টফোন হয়ে উঠবে আপনার ব্যক্তিগত ক্যামেরা। আর আপনার ভিডিও হবে নিজের গল্প বলার মাধ্যম।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিপফেকের ছড়াছড়ি

এআই আবেগ বুঝতে পারে না

কোন সিস্টেমে কম মেইনটেন্যান্স লাগে?

উদ্ভাবন ও দক্ষ প্রকৌশলীদের অবদান অনস্বীকার্য: ফয়েজ তৈয়ব

অস্ত যাওয়ার সময় সূর্য কেন কমলা-লাল রং ধারণ করে

ফেসবুক অ্যাপে আসছে বড় পরিবর্তন

সরকার সারা দেশে দ্রুতগতিতে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করছে

আনঅফিশিয়াল ফোন ব্যবসায়ীদের এক ছাতার নিচে আনছে বিটিআরসি

এআই ভিডিও এডিটিং

মোবাইল ফোনের জন্মকথা