হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, আবার হঠাৎ এসে পড়া। বাংলাদেশের ঘরোয়া বাস্তবতায় খুবই পরিচিত ঘটনা। কিন্তু এই বিদ্যুৎ ওঠানামার মধ্যেই নীরবে বড় ঝুঁকিতে পড়ে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার। অনেক সময় দেখা যায়, এক মুহূর্তের বৈদ্যুতিক শকেই নষ্ট হয়ে যায় মাদারবোর্ড, পাওয়ার সাপ্লাই বা চার্জার। ব্যবহারকারী তখন বুঝতেই পারেন না সমস্যা কোথা থেকে শুরু হলো। অথচ একটু সচেতন হলেই এই ক্ষতি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
ইলেকট্রিক শকের সবচেয়ে বড় কারণ হলো, হঠাৎ ভোল্টেজ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া। যাকে বলা হয় পাওয়ার সার্জ। বজ্রপাত, ট্রান্সফরমারের সমস্যা, জেনারেটর বা ইনভার্টার অন-অফ—এসব সময় লাইনে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত ভোল্টেজ সরাসরি কম্পিউটারে ঢুকে পড়লে সংবেদনশীল সার্কিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে সরাসরি ওয়াল সকেট ব্যবহার করা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাসগুলোর একটি।
এই ঝুঁকি কমানোর প্রথম ও সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ভালো মানের সার্জ প্রটেক্টর ব্যবহার করা। সাধারণ মাল্টিপ্লাগ নয়। বরং সার্জ প্রটেকশনযুক্ত মাল্টিপ্লাগ অতিরিক্ত ভোল্টেজ শোষে নেয়, কম্পিউটারে পৌঁছাতে দেয় না। বিশেষ করে ডেস্কটপ কম্পিউটার, মনিটর ও রাউটার। এই তিনটি ডিভাইস সবসময় সার্জ প্রটেক্টরের মাধ্যমে সংযুক্ত রাখা উচিত। ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরাও চার্জারটি সরাসরি দেয়ালে না লাগিয়ে সার্জ প্রটেক্টর ব্যবহার করলে চার্জার ও ব্যাটারি দুটিই নিরাপদ থাকে।
ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের জন্য ইউপিএস আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা। ইউপিএস শুধু বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ দেয় না। বরং ভোল্টেজ ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ডেস্কটপ আচমকা বন্ধ হয়ে গেলে হার্ডডিস্ক ও অপারেটিং সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইউপিএস সেই ঝুঁকি কমায়। তবে মনে রাখতে হবে, সব ইউপিএস সমান নয়। ভোল্টেজ রেগুলেশন সুবিধাযুক্ত ইউপিএস হলে সুরক্ষা আরো ভালো হয়।
আরেকটি অবহেলিত বিষয় হলো গ্রাউন্ডিং। অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক লাইনের সঠিক আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং থাকে না। এর ফলে লিকেজ কারেন্ট তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে কম্পিউটারের ক্ষতি করে। কখনো কখনো ধাতব কেসে হাত দিলে হালকা শক লাগার অনুভূতিও হয়। এটি খুবই বিপজ্জনক সংকেত। এমন অবস্থায় দ্রুত একজন ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে লাইনের গ্রাউন্ডিং ঠিক করা জরুরি।
ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের একটি সাধারণ ভুল হলো—বজ্রপাত বা ভারী বৃষ্টির সময় চার্জে রেখে ব্যবহার করা। এ সময় লাইনে সার্জের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। সম্ভব হলে এমন সময় চার্জ খুলে ব্যাটারিতে কাজ করাই নিরাপদ। একইভাবে, চার্জার, পাওয়ার শুধু বা প্লাগ যদি ঢিলা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে তা অবিলম্বে পরিবর্তন করা উচিত। পুরোনো বা নকল চার্জার থেকেও শর্টসার্কিট ও শকের ঝুঁকি থাকে।
পরিবেশগত বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। ভেজা হাত, ভেজা মেঝে বা পানির কাছাকাছি বসে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ব্যবহার করা বিপজ্জনক। অনেক সময় চা, পানি বা কফি পড়ে গিয়ে শর্টসার্কিট হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ডিভাইস নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাজের টেবিল শুকনো রাখা। তারগুলো গুছিয়ে রাখা এবং শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বলা যায়, ইলেকট্রিক শক এমন একটি ঝুঁকি, যা চোখে দেখা যায় না কিন্তু ক্ষতি করে মুহূর্তেই। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের দাম অনেক সময় মাসের আয়ের বড় অংশের সমান। সেই যন্ত্রটি বাঁচাতে প্রয়োজন খুব সাধারণ কিছু অভ্যাস। ভালো সার্জ প্রটেক্টর, মানসম্মত ইউপিএস, সঠিক গ্রাউন্ডিং এবং একটু সচেতনতা। প্রযুক্তি যত আধুনিকই হোক, নিরাপত্তার বিষয়টি অবহেলা করলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে।