শীতকাল এলেই কুয়াশা, ঠান্ডা বাতাস আর ভেজা পরিবেশ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। কিন্তু এ সময়টাতেই নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে ঘরোয়া ও অফিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সহায়ক কম্পিউটার। অধিকাংশ ব্যবহারকারী বিষয়টি বুঝতে পারেন তখনই, যখন হঠাৎ ডিভাইসটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
শীতের ঝুঁকি
শীতকালে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত ঝুঁকি হলো কনভেনশন। ঠান্ডা পরিবেশ থেকে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হঠাৎ উষ্ণ জায়গায় নিলে যন্ত্রের ভেতরে জলীয় বাষ্প জমে যায়। এই অদৃশ্য আর্দ্রতা মাদারবোর্ড, র্যাম বা স্টোরেজ ডিভাইসে শর্ট সার্কিটের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে সকালে বা ভ্রমণের পর সঙ্গে সঙ্গে ডিভাইস চালু করাই এই সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।
ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ
এ সময় ল্যাপটপ ডেস্কটপের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ল্যাপটপে ব্যাটারি থাকে, যার কার্যক্ষমতা ঠান্ডায় দ্রুত কমে যায়। একই সঙ্গে ছোট ভেন্টিলেশন সিস্টেমের কারণে ভেতরের আর্দ্রতা সহজে বের হতে পারে না। অন্যদিকে ডেস্কটপ কম্পিউটার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করা থাকে। এর কেস বড় হওয়ায় বাতাস চলাচলের সুযোগ বেশি এবং হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনের ঝুঁকিও কম। ফলে শীতকালে ডেস্কটপ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
আর্দ্রতা ও ধুলো
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে। এই আর্দ্রতা ধুলোর সঙ্গে মিশে কম্পিউটারের ভেতরে জমে গিয়ে পোর্ট, ফ্যান ও সার্কিটে মরিচা ধরাতে পারে। এর ফলে যন্ত্রের গতি কমে যায় এবং অতিরিক্ত গরম হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
সতর্কতা ও করণীয়
শীতকালে কম্পিউটার সুরক্ষিত রাখতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর সতর্কতা মেনে চলা জরুরি—
ঠান্ডা জায়গা থেকে এনে সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার চালু না করা।
অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করা।
স্যাঁতসেঁতে ঘর এড়িয়ে চলা।
ল্যাপটপ ব্যাগে সিলিকা জেল ব্যবহার করা।
নিয়মিত পোর্ট ও ফ্যান পরিষ্কার রাখা।
সচেতনতাই সুরক্ষা
বর্তমান সময়ে পড়াশোনা, অফিস ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কম্পিউটারনির্ভর। শীতকালে সামান্য অসচেতনতা বড় আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই সময়মতো যত্ন ও সচেতন ব্যবহারই পারে কম্পিউটারকে দীর্ঘদিন কার্যক্ষম রাখতে। শীত যেমন মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ, তেমনি প্রযুক্তির জন্যও—এই বাস্তবতা মাথায় রেখে ব্যবহারকারীদের আরো সতর্ক হতে হবে।