হোম > ফিচার > তথ্য-প্রযুক্তি

শর্ট ভিডিও বনাম লং ভিডিও : কোন ফরম্যাট ভবিষ্যৎ বদলাবে?

আরিফ বিন নজরুল

মোবাইল স্ক্রিনে আঙুল একবার টান দিলেই নতুন ভিডিও। কখনো ১৫ সেকেন্ডের হাসির ক্লিপ। কখনো ৩০ সেকেন্ডের তথ্য। আবার কখনো এক ঘণ্টার গভীর আলোচনা। ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন দুটি ফরম্যাট মুখোমুখি দাঁড়িয়েÑশর্ট ভিডিও ও লং ভিডিও। একদিকে টিকটক, রিলস, শর্টসের দ্রুতগতির দাপট । অন্যদিকে ইউটিউবের দীর্ঘ ভিডিও। পডকাস্ট ও ডকুমেন্টারির গভীর উপস্থিতি। প্রশ্ন উঠছে—ভবিষ্যতে কোন ফরম্যাটই বা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে?

শর্ট ভিডিওর জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে আসেনি। মানুষের মনোযোগের সময় কমে আসছে। এই বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই শর্ট ভিডিওর উত্থান। ব্যস্ত জীবনে মানুষ দ্রুত কিছু দেখতে চায়। অল্প সময়ে বিনোদন বা তথ্য নিতে চায়। ১৫ থেকে ৬০ সেকেন্ডের ভিডিও সেই চাহিদা পূরণ করে। অ্যালগরিদমও এই ফরম্যাটকে জোরালোভাবে এগিয়ে নিচ্ছে, কারণ দর্শক একটির পর একটি ভিডিও দেখে সময় কাটাচ্ছেন। ফলে নতুন নির্মাতাদের জন্য শর্ট ভিডিও হয়ে উঠেছে দ্রুত পরিচিত হওয়ার সহজ রাস্তা।

তবে শর্ট ভিডিও যতটা দ্রুত মনোযোগ ধরে। ততটাই দ্রুত ভুলিয়েও দেয়। একটি ভিডিও শেষ, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি। এভাবে গভীর কোনো বিষয় দর্শকের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারে না। এখানে গল্পের গভীরতা কম। বিশ্লেষণের জায়গা সংকুচিত। ফলে শর্ট ভিডিও অনেক সময় ‘দ্রুত ভাইরাল, দ্রুত হারিয়ে যাওয়া’ কনটেন্টে পরিণত হয়। তবুও ব্র্যান্ডিং, ট্রেন্ড তৈরি এবং নতুন দর্শক টানার ক্ষেত্রে এই ফরম্যাটের শক্তি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

অন্যদিকে লং ভিডিও একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়। ১০ মিনিট, ৩০ মিনিট বা এক ঘণ্টার ভিডিও দর্শককে ধীরে ধীরে বিষয়টির ভেতরে নিয়ে যায়। এখানে থাকে ব্যাখ্যা, গল্প, আবেগ ও বিশ্লেষণ। শিক্ষামূলক কনটেন্ট, ডকুমেন্টারি, সাক্ষাৎকার ও পডকাস্ট। এসবের জন্য লং ভিডিওই সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। দর্শক যখন সময় দিয়ে একটি লং ভিডিও দেখে, তখন নির্মাতার সঙ্গে তার একটি বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্কই লয়্যাল অডিয়েন্স গড়ে তোলে।

তবে লং ভিডিওর চ্যালেঞ্জও কম নয়। সবাই লম্বা ভিডিও দেখার ধৈর্য রাখে না। শুরুটা আকর্ষণীয় না হলে দর্শক প্রথম কয়েক মিনিটেই ভিডিও ছেড়ে দেয়। ফলে লং ভিডিওতে কনটেন্ট পরিকল্পনা, স্ক্রিপ্ট ও উপস্থাপনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শুধু তথ্য দিলেই হয় না। গল্প বলার কৌশল জানতে হয়।

বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ শুধু শর্ট বা শুধু লং—কোনোটার একক দখলে নেই। বরং দুই ফরম্যাট একে অন্যকে পরিপূরক করছে। অনেক নির্মাতা এখন লং ভিডিও থেকে ছোট ছোট অংশ কেটে শর্ট ভিডিও বানাচ্ছেন। শর্ট ভিডিও দিয়ে দর্শককে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। আর লং ভিডিও দিয়ে গভীরভাবে ধরে রাখা হচ্ছে। এটিই হয়ে উঠছে সবচেয়ে কার্যকর কনটেন্ট কৌশল।

ডিজিটাল দুনিয়া মূলত বদলাচ্ছে দর্শকের অভ্যাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কেউ অফিসের বিরতিতে শর্ট ভিডিও দেখে সময় কাটান। আবার রাতে নিরিবিলি সময় লং ভিডিও দেখে শেখেন বা বিশ্লেষণ উপভোগ করেন। এই দুই চাহিদা একসঙ্গে বিদ্যমান। তাই ভবিষ্যৎ বদলাবে কোনো একটি ফরম্যাট নয়। বরং বদলাবে নির্মাতার কৌশল। কে কখন, কোন দর্শকের জন্য, কোন ফরম্যাট ব্যবহার করবেন—এই বোধই নির্ধারণ করবে সাফল্য।

শেষ পর্যন্ত বলা যায়, শর্ট ভিডিও আমাদের দ্রুত থামায়। আর লং ভিডিও আমাদের গভীরে নেয়। একটিতে আছে গতি, অন্যটিতে আছে গভীরতা। ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গড়বে এই দুয়ের সমন্বয়েই। যারা সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন। তারাই এই পরিবর্তিত ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবেন।

শীতে ঝুঁকির মুখে ডেস্কটপ-ল্যাপটপ

জেন-এআই যেভাবে বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তির দুনিয়া

এআই যুগে টিকে থাকতে জনগণকে দক্ষ ও কর্মক্ষম করতে হবে

উসকানিমূলক কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ

২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয়েছে যে অ্যাপ

হোয়াটসঅ্যাপ থেকে টাকা আয়ের উপায়

স্মার্টফোনে সিনেমাটিক ভিডিও

নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিপফেকের ছড়াছড়ি

এআই আবেগ বুঝতে পারে না

কোন সিস্টেমে কম মেইনটেন্যান্স লাগে?