বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে শক্তিশালী করতে তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা আজ দেশের অন্যতম প্রধান শক্তি। আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে তারা যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, তেমনি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে তুলে ধরছেন। তবে উন্নতির এই যাত্রায় কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা তুলে ধরেছেন দুজন সফল ফ্রিল্যান্সার।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ফ্রিল্যান্সার মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, সরকার যদি পেপাল বা সমমানের আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করতে পারে, তাহলে ফ্রিল্যান্সারদের পেমেন্ট আনা হবে অনেক সহজ, দ্রুত এবং ঝুঁকিমুক্ত। এতে করে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং আউটপুট আরো কয়েকগুণ বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, দেশের তরুণদের বর্তমানে এই সেক্টরে আসার আগ্রহ অনেক রয়েছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সঠিক মেন্টরশিপ না পাওয়া। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিলেও অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ প্রশিক্ষক না থাকায় সেই প্রকল্পগুলো কার্যকর হচ্ছে না। যদি অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো পরিচালনা করা যায়, তাহলে দেশের আইটি খাত অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে ফ্রিল্যান্সিং খাতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে দক্ষতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারে। এআই, অটোমেশন ও ডেটা-ড্রিভেন স্কিল যারা শিখবেন, তারাই বাজারে নেতৃত্ব দেবেন।
পাশাপাশি যারা শুধু সার্ভিস দেবেন না, নিজস্ব ব্র্যান্ড ও এজেন্সি তৈরি করবেন, তারাই ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠবেন। পার্বত্য খাগড়াছড়ির ফ্রিল্যান্সার ও সিইও, খলিল আইটির মো. ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, তরুণদের প্রযুক্তি দক্ষতা গড়ে তুলতে পরিবারের দিকনির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরই প্রথম আগ্রহের জায়গা, সেখানেই শৃঙ্খলা, লক্ষ্য এবং ভবিষ্যৎ গড়ার ভিত্তি তৈরি হয়। বাবা-মা যখন সন্তানকে বোঝান যে আইটি ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তখন তাদের শেখার আগ্রহ অনেকগুণ বেড়ে যায়।
চাইলেই তারা সন্তানদের যেকোনো আইটি ক্যারিয়ার সেমিনারে অংশ নেওয়ার সুযোগ, মানসিক সাপোর্ট এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থাও দিতে পারেন। এতে তরুণরা বাস্তব জ্ঞান পায় এবং নিজের পথ নিয়ে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে তিনি বলেন, আজকের বিশ্ববাজারে ফ্রিল্যান্সিং শুধু অতিরিক্ত আয়ের পথ নয় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যারিয়ার। পৃথিবীর যেকোনো দেশের ক্লায়েন্টের সঙ্গে ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ তরুণদের সামনে বিশাল দিগন্ত খুলে দেয়। যদি তরুণরা সময়মতো দক্ষতা অর্জন করে, তাহলে তারা শুধু নিজের ক্যারিয়ারই বদলাতে পারবে না দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।