এক যুগ আগে ফ্রিল্যান্সিংকে দেখা হতো তরুণদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগ একটি পূর্ণাঙ্গ পেশায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—Fiverr কিংবা Upwork-এ অ্যাকাউন্ট খুললেই সফলতা আসে না। বরং অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার কিছুদূর এগিয়ে মাঝপথেই থেমে যায়। প্রশ্ন হলো—কেন?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নতুনদের সবচেয়ে বড় সমস্যা শুরু হয় ভুল প্রত্যাশা থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো ডলারের ইনকাম স্ক্রিনশট দেখেই অনেক তরুণ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কোর্সে ভর্তি হয়। তিন মাসের কোর্স শেষে সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া যাবে—এই ধারণা নিয়েই তারা যাত্রা শুরু করে। কিন্তু কয়েক মাস চেষ্টা করেও কাজ না পেলে হতাশা গ্রাস করে আর সেখানেই থেমে যায় বহু সম্ভাবনাময় যাত্রা। বগুড়ার মার্কেটপ্লেসের টপ-রেটেড ফ্রিল্যান্সার মোমিনুজ্জামান মনে করেন, সমস্যাটা দেশের নয়, প্রস্তুতির অভাবে। তার ভাষায়, “আমাদের বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরে অনেক নেতিবাচক কথা শোনা যায়—‘বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা খারাপ’, ‘কোয়ালিটি নেই’, ‘কমিউনিকেশন সমস্যা’। কিন্তু বাস্তবে সমস্যাটা দেশের না, সমস্যাটা সঠিক গাইডলাইন আর প্রস্তুতির অভাবে।”
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইয়াং জেনারেশনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো—দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় অপরিকল্পিতভাবে কোর্স করা এবং অল্প সময় চেষ্টা করেই হতাশ হয়ে পড়া। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশে বসে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করতে হলে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ সামনে আসে, তা হলো যোগাযোগ দক্ষতা।
মোমিনুজ্জামানের অভিজ্ঞতায়, অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজ জানলেও ইংরেজিতে সঠিকভাবে কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না, এমনকি ক্লায়েন্ট আসলে কী চায় সেটাও পুরোপুরি বুঝতে ব্যর্থ হয়। ফলে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তারা কাজের সুযোগ হারায়। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের দিকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে খুব বেশি কথা বলার প্রয়োজন হতো না। দু-একটা মেসেজেই অনেক সময় কাজ পাওয়া যেত। কিন্তু ২০২৬-এ এসে পুরো চিত্র বদলে গেছে। এখন ক্লায়েন্ট আগে কথা বলে, বোঝে, যাচাই করে, তারপর কাজ দেয়।’
এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় শুধু স্কিল শিখে টিকে থাকা সম্ভব নয়। কারণ কাজ জানে এমন মানুষের অভাব নেই। পার্থক্য গড়ে দেয় কে কতটা পেশাদারভাবে নিজের কথা উপস্থাপন করতে পারে এবং ক্লায়েন্টের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য—বাংলাদেশের অনেক মেন্টর এখনো ‘তিন মাসের কোর্স + মার্কেটপ্লেস’ এই সহজ ফর্মুলা বিক্রি করে যাচ্ছেন। কিন্তু কমিউনিকেশন, সেলিং স্কিল কিংবা মানসিক প্রস্তুতির বিষয়গুলো উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মোমিনুজ্জামান মনে করেন, আজকের দিনে নতুন কেউ যদি ফাইভার, আপওয়ার্ক বা আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ শুরু করতে চায়, তাহলে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। যোগাযোগ দক্ষতা, নিজেকে ও নিজের সার্ভিস বিক্রি করার ক্ষমতা, মূল কাজের দক্ষতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ধৈর্য। ফ্রিল্যান্সিংয়ে স্কিল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা হলো—যোগাযোগ দক্ষতা ছাড়া সেই স্কিল অনেক সময়ই কাজ করে না। সফলতা তাই হঠাৎ আসে না; এটি আসে সঠিক প্রস্তুতি, ধারাবাহিক চেষ্টা এবং বাস্তবতা বোঝার মধ্য দিয়ে।