কোভিড-১৯ মহামারির স্থবির সময়ে যখন পৃথিবী থেমে গিয়েছিল, তখনো থেমে থাকেননি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার ইভা। ঘরে বসে একঘেয়ে সময়কে সৃজনশীলতায় রূপ দিতে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট তিনি খুলেছিলেন ছোট্ট একটি অনলাইন পেজ ‘কর্ডিয়াল কেকস’। সেই ছোট্ট পদক্ষেপ আজ তার স্বপ্নের ডানা মেলেছে, তৈরি হয়েছে একটি পরিচিত হোম-বেকারি ব্র্যান্ড।
ইভার ভাষায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল, প্রচুর অবসর সময় কাটছিল। মনে হলো কিছু একটা করা দরকার। তখনই কেক বানানোর কথা মাথায় আসে। প্রথম দিকে কেক সেল করতাম। সেই কেকের লাভের টাকাতেই আবার কাঁচামাল কিনতাম। ধীরে ধীরে অর্ডার বাড়তে থাকে। এভাবেই শুরু হয় আমার উদ্যোক্তা জীবন।’
কঠিন সময়ের এই সাহসী সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তার মা। কোভিডের দিনগুলোয় আশপাশের মানুষ যেখানে অনিশ্চয়তায় ছিলেন, ইভা তখন নিজের মায়ের সাহস নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। ‘অনেকে বলতেন, মেয়েমানুষ হয়ে কেক বিক্রি কেন করি? তখন উপলব্ধি করতাম, মা না থাকলে হয়তো এতদূর আসতে পারতাম না,’ আবেগভরা কণ্ঠে বললেন তিনি।
শৈশব থেকেই কেক বানানোর প্রতি ইভার ভালোবাসা। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই তিনি প্রথম কেক বানান, যদিও কেকটা তখন পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই পুড়ে যাওয়া কেকই যেন তার জীবনের মিষ্টি অধ্যায়ের শুরু। পরে মায়ের কেনা একটি ইলেকট্রিক বিটার দিয়ে তৈরি করেন প্রথম স্পঞ্জ কেক। সেই কেকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বন্ধুবান্ধবদের প্রশংসা তার আত্মবিশ্বাসকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
তবে উদ্যোক্তা জীবনের পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল তার প্রথম পেজ ‘কর্ডিয়াল কুকস’ হ্যাক হয়ে যায়। সে সময় একদম ভেঙে পড়েছিলেন ইভা। কিন্তু গ্রাহকদের ভালোবাসা ও যোগাযোগই তাকে আবার সাহস দেয়। তিনি নতুন পেজ ‘কর্ডিয়াল কেকস’ খুলে আবার শুরু করেন তার মিষ্টি যাত্রা।
বর্তমানে কেক বিক্রির পাশাপাশি ইভা পরিচালনা করছেন বেকিং ট্রেনিং কোর্স, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী পেশাদারভাবে কেক তৈরি করতে শিখে আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটছে। তিনি গর্বের সঙ্গে জানান, ‘আমার স্টুডেন্টরা এখন নিজস্ব পেজ খুলে ব্যবসা করছে—এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
কর্ডিয়াল কেকসের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম হলো চকলেট কেক। এর পাশাপাশি কাস্টমাইজড ও থিম কেকের জন্যও বেশ সাড়া পাচ্ছে ব্র্যান্ডটি। পড়াশোনা, ব্যবসা আর ট্রেনিং একসঙ্গে সামলানো কঠিন হলেও ইভার মতে, ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট থাকলে কোনো কাজই অসম্ভব নয়।’
একজন তরুণ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ইভার সবচেয়ে বড় শেখাটা‘কাস্টমার হ্যান্ডলিং, আত্মনির্ভরশীলতা আর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ইভার স্বপ্ন—‘কর্ডিয়াল কেকসকে আমি দেখতে চাই একটি বড় ব্র্যান্ড হিসেবে; এমন একটি একাডেমি হিসেবে, যেখানে অসংখ্য তরুণ-তরুণী বেকিং শিখে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে।’
আয়েশা আক্তার ইভার গল্প শুধু কেকের নয়—এটা অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নে বিশ্বাস রাখার গল্প। ছোট একটা পদক্ষেপও বড় কিছু হয়ে উঠতে পারে, যদি তাতে থাকে পরিশ্রম, ভালোবাসা আর অগাধ বিশ্বাস।