চাকরি বদলানোর ইচ্ছা অনেক সময় জন্ম নেয় হতাশা, বিরক্তি বা অসন্তোষ থেকে। অনেকেই মনে করেন, নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলেই সবকিছু বদলে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন—অনেক ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নতুন সমস্যারও জন্ম দেয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘জেন-জি’ প্রজন্মের মধ্যে চাকরি পরিবর্তনের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে—৫৮ শতাংশ জেন-জি কর্মী তাদের চাকরিকে ‘অস্থায়ী সম্পর্ক’ হিসেবে দেখেন; ৪৭ শতাংশ বলছেন, তারা এক বছরের মধ্যেই চাকরি ছাড়বেন; আর অর্ধেক কর্মী যেকোনো সময় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আছেন।
বাংলাদেশেও তরুণদের মধ্যে চাকরি বদলের প্রবণতা দৃশ্যমানভাবে বেড়েছেÑকেউ বিরক্ত কাজের কারণে, কেউ আবার বেতন বা সুবিধা না বাড়ায়। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো—শুধু অনুভূতি বা আবেগ নয়, বরং যুক্তি, পরিকল্পনা ও বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
কখন সত্যিই চাকরি বদলানোর কথা ভাববেন?
১. প্রেরণা ও মূল্যায়ন হারিয়ে গেলে
আপনার কাজ আর যদি আনন্দ না দেয়, প্রতিদিন শুধুই টিকে থাকার লড়াই মনে হয়—এটি একটি বড় সতর্কবার্তা। ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি আনিকিন বলেন, ‘আপনি ভালো কাজ করেও মূল্যায়ন না পেলে, বেতন না বাড়লে, পদোন্নতির সুযোগ না পেলে—সম্ভবত প্রতিষ্ঠান আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মান ও সম্ভাবনা দিচ্ছে না।’
বাংলাদেশের অনেক তরুণ বিশেষভাবে স্টার্টআপ, এনজিও বা করপোরেট সেক্টরে কাজ করে থাকেন। সেখানে দীর্ঘ সময় পরিশ্রম করেও যদি স্বীকৃতি বা আর্থিক উন্নতি না আসে, হতাশা স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়।
২. উন্নতি ও শেখার সুযোগ থেমে গেলে
একই দায়িত্ব বহু বছর ধরে করলে পেশাগত বৃদ্ধি থমকে যায়। ঢাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘তিন বছর ধরে একই কাজ করছিÑকোনো প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি বা দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ নেই। মনে হয় শুধু বেতন পাওয়ার জন্য কাজ করছি।’
নিজস্ব ক্যারিয়ার রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি। যদি বর্তমান প্রতিষ্ঠানে উন্নতির পথ নেই, তবে অভ্যন্তরীণ বিভাগ বদল, দক্ষতা বৃদ্ধি বা ধীরে ধীরে নতুন সুযোগের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
৩. কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে
অফিসের সংস্কৃতি যদি নিয়মিত মানসিক চাপের উৎস হয়, তা অগ্রাহ্য করা ক্ষতিকর। যোগাযোগহীন ম্যানেজার, অযৌক্তিক ওভারটাইম, টক্সিক টিম—সব মিলিয়ে পেশাগত ক্লান্তি তৈরি করে। প্রতিদিন সকালেই যদি কাজে যাওয়ার চিন্তা ভয় বা বিরক্তির জন্ম দেয়, বুঝতে হবে এটি মানসিকভাবে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ধরনের অবস্থায় বিকল্প পথ বিবেচনা করা যৌক্তিক।
নতুন চাকরি খোঁজার সবচেয়ে নিরাপদ উপায়
ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞদের সাধারণ পরামর্শ—চাকরিতে থাকা অবস্থায়ই নতুন সুযোগ খুঁজুন। এতে থাকে বেশি সময়, বিকল্পের সুযোগ ও ভালো দর–কষাকষির ক্ষমতা। দিমিত্রি আনিকিন বলেন, ‘আপনার সিভি ও লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট রাখুন। বাজারের বেতন কাঠামো ও ট্রেন্ড জানুন। ক্যারিয়ার অগ্রগতি মানেই সব সময় বড় পদ নয়—কখনো পাশের ধাপ বা অস্থায়ী নতুন প্রজেক্টও নতুন অনুপ্রেরণা দিতে পারে।’
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন
চাকরি বদলানোর আগে থেমে ভেবে দেখুন—
আমি কেন যেতে চাই?
নতুন প্রতিষ্ঠানে কী উন্নতি বা সুযোগ পাব?
এখনকার প্রতিষ্ঠানেই পরিবর্তনের সুযোগ আছে কি?
মনে রাখবেন—সব চাকরিতেই কিছু না কিছু অসুবিধা থাকবে। কিন্তু যদি কাজের আনন্দের চেয়ে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ বেশি হয়, তবে এটি একটি সংকেত যে নতুন পথে হাঁটার সময় এসেছে।
কারণ, অনেক সময় একটি চাকরি বদলের সিদ্ধান্তই কর্মজীবনে বড় পরিবর্তন ও বিকাশ নিয়ে আসে।