হোম > সাহিত্য সাময়িকী > প্রবন্ধ

লেইস ফিতা ও জাদুর বাক্স

খন্দকার ফাহমিদা ফেরদৌস

লেইস ফিতাওয়ালারা কী কারণে হাঁক দেওয়ার সময় ‘এই লেইস ফিতা’ না বলে বলতেন—‘এই লেইস ফি-ই-ই...’, তা আজও আমার বোধগম্য হয় না।

পুরোটা বললে কি তাদের খুব সমস্যা হতো বা কষ্ট কম হতো—কে জানে!

তবে ওই জাদুর বাক্সের প্রতি সবার খুব লোভ ছিল। অলস দুপুরবেলায় মা-খালারা যখন সংসারের সব কাজকর্ম শেষ করে ভাত খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেন, ঠিক তখন লেইস ফিতাওয়ালারা হাঁক ছেড়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতেন।

তখন আলসেমি বাদ দিয়ে বাড়ির মেয়েরা কিছুটা বিনোদন বা কেনাকাটার উদ্দেশ্যে ছুটে যেতেন সেই লেইস ফিতাওয়ালার কাছে। সাধারণত বাসার ছোট ছেলেমেয়েরা দায়িত্ব নিয়ে তাদের ডেকে আনত। সেই বাক্স রাখার জন্য ছোট একটা টুল দিতে হতো। টুলের উপর কাপড়ে মোড়া বাক্সটা রাখা হতো। আর তার উপর থাকত কাচের বাক্সটি।

কী অপার আগ্রহ নিয়েই না সবাই সেই জাদুর বাক্সের দিকে ঝুঁকে থাকত।

তাতে থাকত রকমারি প্রসাধনী এবং জরুরি অনেক কিছু। এটাই ছিল তখনকার মা-খালাদের ফিউচার পার্ক বা বসুন্ধরা সিটি। ছোট্ট একটা জিনিস কিনতে কত দর-কষাকষি!

সেই জাদুর বাক্সতে পাওয়া যেত চুলের ফিতা, কাচের চুড়ি, আলতা, নূপুর, কানের দুল, ন্যাপথেলিন, লিপস্টিক, কাজল, মাথার ফিতা, পুঁতির মালা, নেইল পলিশ, সেইফটি পিন, প্লাস্টিকের পুতুল, মাথার চিরুনি—আরো জরুরি কত কিছু। তবে চিরুনি থাকত দুধরনের। একটা চুল আঁচড়ানোর জন্য আর আরেকটা উকুন মারার জন্য। সেই সময়টাতে মোটামুটি সবার মাথায়ই বছরে দু-একবার উকুন হতো। হয়তো সবাই মিলে মাখামাখি করে থাকা হতো বলেই একজনের কাছ থেকে আরেকজনের হতো।

সেই লেইস ফিতাওয়ালা ছিল বাড়ির মেয়েদের পরম বন্ধু।

সে তার অপার ধৈর্য দিয়ে একে একে সবকিছু সবাইকে দেখাত। তারপর শুরু হতো দর-কষাকষি। একপর্যায়ে হয়তো লেইস ফিতাওয়ালাই হার মানত।

লেইস ফিতাওয়ালার হাতে থাকত একটা কাচের ব্রিফকেস আর পিঠে থাকত মার্কিন কাপড়ে মোড়া জাদুর বাক্স। সেই জাদুর বাক্স বাধা থাকত বিশেষ একধরনের গিট্টু দিয়ে। সেই গিট্টু দেওয়া এবং খোলার একটা আলাদা কায়দা ছিল। দুচোখ ভরে সেই নিপুণ কাজটা দেখতাম আমরা ।

কেনা থেকে কথা হতো বেশি, দর-কষাকষি হতো তার চেয়েও বেশি। মা-খালারা সংসার খরচের বেচে যাওয়া টাকা থেকে কেনাকাটা করতেন। কত ছোট ছোট সুখ আর স্বল্প চাহিদা ছিল সেই সময়টাতে।

সবসময়েরই আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। অলস দুপুরবেলায় চোখ বন্ধ করলে এখনো সেই লেইস ফিতাওয়ালার হাঁক শুনতে পাই।

বাজতে থাকুক মনের গভীরে সেই শব্দগুলো মধুর স্মৃতির শব্দ হয়ে আজীবন, যতকাল বেঁচে থাকি।

‘এই লেইস ফি-ই-ই-ই

লেএইইস...’

‘আবদুল্লাহ্‌’ ও বাঙালি মুসলমান সমাজ

নীল সমুদ্র, প্রাচীন প্রাসাদ আর রঙিন মানুষের গল্প

বাইরে কিছু পুড়ছে

হুমায়ূন আহমেদ ও বাংলা কথাসাহিত্যের ঘরে ফেরা (শেষ পর্ব)

বিশ্বসভ্যতার সংরক্ষণে উদ্বোধন ‘মহান মিসরীয় জাদুঘর’

বুকার প্রাইজ ২০২৫ পেলেন ডেভিড সালাই

বিমূর্ত দোলাচল

হুমায়ূন আহমেদ ও বাংলা কথাসাহিত্যের ঘরে ফেরা

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, সীমান্ত ও আজকের লড়াই

পোয়েটস অ্যাভেন্যু