প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অমর একুশে বইমেলা যথা সময়েই হবে। বইমেলা হবে না বলে যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। বইমেলা অবশ্যই হবে। পরিস্থিতির কারনে সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে। আমার মনে হয় না এটা বিশেষ কোনো বিষয়। বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবে। যা সবার জন্যই গ্রহণযোগ্য হবে। আমি মনে করি হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী’র সভাপতিত্বে কেমন বই মেলা চাই বিষয়ক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান, প্রবীণ সাংবাদিক গাজীউল হাসান খান, লেখক গবেষক ফয়েজ আলম, সাংবাদিক লেখক সিরাজুল ইসলাম কাদির, সিনিয়র প্রকাশক গফুর হোসেন, কাজী জহিরুল ইসলাম বুলবুল, বেগম বদরুন্নেসা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আখতার, এআইইউবি’র শিক্ষার্থী দাহেকা আঞ্জুম সাদিয়া ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান।
প্রেস সচিব বলেন আর কেমন বইমেলা চাই যদি বলতে হয়, বলতে হবে আমরা এমন একটি বইমেলা চাই যেখানে সকল শ্রেণীর পাঠকের পছন্দের বই পাওয়া যাবে। আবার সকল লেখকের বইও পাওয়া যাবে। পাঠক তার ইচ্ছে মতো প্রয়োজনীয় বইটি নেবেন। তাকে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। পাঠক যদি তার পছন্দের বইটি বইমেলা থেকে নিতে পারেন তবেই সেই বইটি তার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে।
বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ শ্রেণীর দালাল প্রকাশক ও দালাল লেখকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ পরিবারের নামে বই প্রকাশ, জোর করে বিক্রি করে অনেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ায় পুকুর পাড়ে বসে তিনি কি করেছেন সেটা দিয়েই বই লিখে মানুষকে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। এগুলো জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেনি।
যারা এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই আজ বলছেন আমাদের প্রজন্ম এই পড়ছে না। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এইভাবে বই লিখে ও বিক্রি করে এক সাংবাদিক ১১ কোটি টাকার বই বিক্রি করেছেন। কিছু কিছু প্রকাশনাও এমন করেছে।
গত ১৫ বছর এমনটা হয়েছে আমাদের বই নিয়ে, বইমেলা নিয়ে। তাই আমরা এমন একটা বইমেলা চাই যেখানে যার যা পাঠের প্রয়োজন ঠিক সেই রকম বই সংগ্রহ করুক। কেউ ইতিহাস পড়বেন, কেউ পড়বেন বিজ্ঞান, কেউবা রাজনীতি কেউ সাহিত্য, গল্প, কবিতা ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই কিন্তু প্রাণের বইমেলা।
প্রাণের খোরাক থাকে বলেই বইমেলা প্রাণের মেলা। একই ভাবে কোনো প্রকার বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। আমর চাই এমন একটা মেলা যা হবে বৈষম্যবিরোধী। বই প্রকাশ, বই বিক্রি এমনকি বই পড়ার-স্বাধীনতাটা যেন সকলের থাকে।
তিনি আরো বলেন, এবারের বইমেলাটি যেন আরো সুন্দর হয় সেই প্রত্যাশাও সকলের।
কবি মোহন রায়হান বলেন, বই জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞানই আমাদেরকে সভ্যতা শিখিয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের এমনকি জুলাই আন্দোলনও অঙ্গাঙ্গীভাবে একুশের বইমেলার সাথে যুক্ত। আমাদের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত বইমেলা। বইমেলা অনুষ্ঠিত না হাওয়া মানে জুলাইয়ের অর্জনকে ম্লান করার চেষ্টা। যারা বইমেলাকে বন্ধ করতে চায় তারা জুলাইয়ের আন্দোলন অর্জনকে বিতর্কিত করতে চায়। সুতরাং বইমেলা ফেব্রুয়ারীতেই হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একুশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ এবং একুশে ও জুলাই’র আন্দোলন অর্জনকে একটি শ্রেণী ভুলুন্ঠিত করতে চায়। বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বইমেলা হবেনা একথা বলাই যাবে না। ফেব্রুয়ারী মাসেই বইমেলা হতে হবে।
গাজীউল হাসান খান বলেন, উন্নত জীবন ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতির বিকাশে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে সমাজের এবং মানুষের বিকাশ ঘচবে না। এতে রাষ্ট্রের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার মত বিজ্ঞ এবং উন্নত মানসিকতার নেপথ্যেও রয়েছে বই। সুতরাং আমাদের প্রাণের বইমেলা হতেই হবে। নির্বাচনের সময়েও অতীতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কবি গবেষক ফয়েজ আলম বলেন, বইমেলার জনপ্রিয়তার গন্ডি দেশকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। তাই ফেব্রুয়ারীকে প্রাধান্য দিয়ে ছোট পরিসরে হলেও বইমেলা হওয়া উচিত। বইমেলাকে গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্যের বারোয়ারী মেলায় পরিণত না করে সুসজ্জিত ভাবে করার দাবী জানান তিনি।