শিশু শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ সেবা খাতে এবং ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ কৃষিখাতে কাজ করছে। যাদের অধিকাংশই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অবস্থায় শিশুশ্রম প্রতিরোধে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘এডুকো’ বাংলাদেশ ও চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্ম (ক্ল্যাপ) আয়োজিত নীতি শেয়ারিং অনুষ্ঠানে উত্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিপজ্জনক শিশুশ্রমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে শিল্পখাতে ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া সেবাখাতে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কৃষিতে সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালীকরণে প্রস্তাবিত নীতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নীতি প্রস্তাব উত্থাপন করেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেব আকন্দ, চাইল্ড লেবার মনিটরিং কাউন্সিলের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী, এডুকো বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম) আব্দুর রহিম প্রমূখ।
প্রস্তাবনায় ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, আইন ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও লাখো শিশু অনানুষ্ঠানিকভাবে শ্রমে নিয়োজিত। প্রায় ৩৫ লাখ শিশু নানা ধরণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত। তিনি জানান, নানাধরণের কাজের সুযোগ থাকার কারণে শহরে শিশুশ্রম বেশি, তবে গ্রামে শিশুশ্রম কম নয়। কৃষিখাতে ও মৌসুমী কাজে শিশুরা যুক্ত আছে। শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ ও ব্যবহার, শোষণ, পাচার এবং সকল প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতন এবং সকল প্রকার শিশুশ্রমের অবসান ঘটানোর কথা উল্লেখ করেছে। সরকার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিশুশ্রম নিরসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বেশ কিছু উদ্যোগ, প্রকল্প ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্তর্ভূক্ত ও এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেব আকন্দ বলেন, সর্বজনীন শিশু সুবিধাসহ পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষার পেছনে ব্যয় বাড়ানো এবং স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদেরসহ সব শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে হবে। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা, কৃষিজ উন্নয়ন, পল্লী জনসেবা, অবকাঠামো ও জীবন-জীবিকার পেছনে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
আফজাল কবির খান বলেন, শিশুশ্রম নির্মূলের জন্য শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক সুরক্ষার আওতার ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি শিশু শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি সহায়তা জোরদার করতে হবে।