বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের সাম্প্রতিককালের ইতিহাসের কয়েকটি মাইলফলক রয়েছে। এসব মাইলফলকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-১৯৪৭-এ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে আজাদি লাভ এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতার আত্মাহুতি, ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের পুরোধা মুসলিম লীগকে সমূলে পরাজিত করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি জয়, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর আদমজী জুট মিল ও চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে বাঙালি এবং বিহারি শ্রমিকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা, ১৯৫৮-এর প্রথমদিকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের প্রাদেশিক পরিষদে প্রতিপক্ষের হামলায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ, ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানব্যাপী সামরিক শাসন জারি, ১৯৬২ সালে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন, পরে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন, ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাক-ভারত যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানিদের ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ, ১৯৬৬ সালের ৭ জুন শেখ মুজিবের ছয় দফা দাবির সমর্থনে ঢাকায় হরতাল ও বেশ কিছুসংখ্যক নিহতের ঘটনা, ১৯৬৯-এ আইয়ুবের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্র-জনতার বিশাল গণঅভ্যুত্থান এবং আইয়ুবী শাসনের পতন এবং নতুন করে দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তন, ১৯৭০-এ ‘এক লোক এক ভোট’ ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় এবং আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কালক্ষেপণ ও ২৫ মার্চ ১৯৭১ কালরাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণহত্যার সূচনা, মেজর জিয়াউর রহমানের একই সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা এবং তার কমান্ডার পশ্চিম পাকিস্তানি কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান, ৯ মাসব্যাপী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে পাকিস্তানি বাহিনী অনেকটা কাবু হয়ে পড়লে ভারত কর্তৃক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকায় ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডার জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর ভূমিকার প্রতি চরম তাচ্ছিল্য প্রদর্শনসহ বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় অনুভূতির প্রতি চরম অবজ্ঞা-প্রদর্শন, যুদ্ধ শেষে আওয়ামী লীগ কর্তৃক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ, ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও তার জায়গায় একটি সত্যিকারের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা না পাওয়া; আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক রক্ষীবাহিনী গঠন করে জনগণের ওপর চরম দমন-পীড়ন এবং নির্বিচার খুন ও হত্যাকাণ্ড সংগঠন, ভারতের সঙ্গে সাত দফা গোপন এবং অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তিতে আবদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর নিদারুণ বৈষম্যমূলক নীতিগ্রহণ, ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশের ১৫ লাখ আদম সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যু, ১৯৭৫-এর জানুয়ারিতে সিরাজ শিকদার হত্যাকাণ্ড ও সংসদে শেখ মুজিবুর রহমানের দম্ভোক্তি ‘কোথায় আজ সিরাজ শিকদার’ এবং একই মাসে মাত্র ১২ মিনিটে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করে একদলীয় বাকশালী শাসনের প্রবর্তন করে গণতন্ত্রের কবর রচনা এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহি জনতার বিপ্লব।
এই পর্যায়ে ইতিহাস নতুন খাত ধরে প্রবাহিত হতে শুরু করে। নদীর মতোই ইতিহাসের গতিধারা। নদীর প্রবাহ যেখানে কঠিন মৃত্তিকায় বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেখানে নদী তার নিজ প্রবাহপথ বেছে নেয়, থেমে থাকে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তা ছিল কঠিন মৃত্তিকা ভেদ করে নদীর এগিয়ে চলার মতো এক প্রবল প্রবাহ। শেখ মুজিব তার দুই কন্যা বাদে আত্মীয়স্বজনসহ নিহত হলেন সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থানে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই অভ্যুত্থানে প্রধান রাজনৈতিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর খন্দকার মোশতাক আহমেদ। ১৯৭৩-এর নির্বাচনে দাউদকান্দিতে খন্দকার মোশতাক জাসদের ইঞ্জিনিয়ার রশিদের কাছে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও হেলিকপ্টারে ব্যালট বাক্সগুলো ঢাকায় নিয়ে এসে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। শেখ মুজিবের জন্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ এতটাই অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়েছিলেন! ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশের কোথাও কোনো ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়নি। উৎফুল্ল জনতা মিষ্টি বিতরণ করেছিল। বাংলাদেশ রুশ-ভারত অপশক্তির বন্ধন থেকে বেরিয়ে এলো। দিনটি ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের প্রথম বিজয়।
খন্দকার মোশতাকের সরকার ও এর মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের দ্বারা। এমনকি আওয়ামী সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়নি।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ এই অভ্যুত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। এই অংশটি অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে প্রশ্ন তুলল সেনাবাহিনীতে ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে। এই চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার করতে হবে। বঙ্গভবন থেকে মেজরদের হুকুমদারি চলবে না। ১৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা অভ্যুত্থান শুরু হয়। এই পাল্টা অভ্যুত্থানের ফলে প্রেসিডেন্ট মোশতাকের ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। বঙ্গভবনে নতুন অভ্যুত্থানকারীরা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে ক্ষমতা পরিত্যাগ নিয়ে দেন-দরবার শুরু করে। তখন সমগ্র দেশে বিশেষ করে ঢাকায় চরম থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে। দেশে কোনো সরকার আছে কি নাÑবোঝা যাচ্ছিল না। জনগণ হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল বাকশালীদের পুনঃপ্রবর্তনের আশঙ্কায়। এমনই এক পরিস্থিতিতে আমি ৪ নভেম্বর ১৯৭৫ সাল সকাল ১০টা বা ১১টার দিকে প্রেস ক্লাবে যাই এবং সেখানে জানতে পারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের বন্দি চার নেতাকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়েছে। কারাবন্দি মানুষকে হত্যা করা ছিল অত্যন্ত মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন। সেখান থেকে আমি বাংলাদেশ টাইমস অফিসে যাই সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খানের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু জানার জন্য। এনায়েতুল্লাহ খান ছিলেন একজন অত্যন্ত ওয়াকিবহাল সম্পাদক। আমি তার সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তখনই খবর এলো সিপিবি ও বাকশালীদের সমন্বয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়েছে। এই মিছিলটির গন্তব্যস্থল শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়ি। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শোকগাথা উচ্চারণের লক্ষ্য ছিল মিছিলটির। আরো খবর এলো এই মিছিলে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মা ও তার ভাই রাশেদ মোশাররফ অংশ নিয়েছেন। ঘটনাটি ছিল খালেদ মোশাররফের জন্য ভয়ংকর রকমর অশনিসংকেত। এনায়েতুল্লাহ খান এই খবরটি পাওয়ার পর ব্রিগেডিয়ার খালেদা মোশাররফকে বঙ্গভবনে ফোন করে জানালেন তার ভাই ও মা বাকশালীদের মিছিলে যোগ দিয়েছেন। এতে খালেদ মোশাররফ বাকশালীদের সঙ্গে ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের সহচররূপে চিহ্নিত হয়ে পড়েছেন। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে এনায়েতুল্লাহ খানের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ও ছিলেন। টেলিফোনে এই ভয়ানক খবরটি শোনার পর খালেদ মোশাররফ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং স্বগতোক্তি করতে থাকেনÑ‘আমার ভাই ও আমার মা আমাকে খুন করলেন’। খালেদ মোশাররফ এনায়েতুল্লাহ খানের কাছ থেকে জানতে চাইলেন, তিনি এখন কী করবেন। এনায়েতুল্লাহ খান পরামর্শ দিলেন, খালেদ মোশাররফকে দেখাতে হবে তার সঙ্গে বাকশালীদের কোনো সম্পর্ক নেই। আর এটা প্রমাণ করার একমাত্র উপায় হলো বাকশালী জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া। এনায়েতুল্লাহ খানের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদ মোশাররফ প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দিয়ে বাকশালী জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তদনুযায়ী ৬ নভেম্বর রাত ৮টার ভাষণে প্রেসিডেন্ট সায়েম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানকালীন সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার বাসগৃহে বন্দি করা হয়। সেনাবাহিনীতে জিয়াউর রহমানের প্রবল জনপ্রিয়তা ছিল। তারা জিয়াউর রহমানকে বন্দি করা ভালো চোখে দেখেননি। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর মধ্যে জাসদ-সমর্থিত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা নামে একটি গোপন সংগঠন তৎপর ছিল। তারা লিফলেট প্রচার করে জানান দিল, খালেদ মোশাররফ ভারতের চর। তারা আরো স্লোগান তুললÑ‘সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই।’ ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ মধ্যরাতে সৈনিকরা বিদ্রোহ করে সিপাহি অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিলেন। জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হলেন। সিপাহিরা ট্যাংক ও সৈনিকবাহী ভ্যান নিয়ে ৭ নভেম্বর ভোর থেকে ঢাকার রাজপথে নেমে এলেন। ঢাকায় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অভ্যুত্থানকারী সৈনিকদের অভিনন্দন জানালেন। ট্যাংকের নলে ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন। সৈনিকরা স্লোগান তুলেছিলেন-‘সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ’। রাজপথের সৈনিকদের মিছিল চলল দিনভর। সাধারণ মানুষ করতালি দিয়ে অভ্যুত্থানকারী সৈনিকদের উৎসাহিত করলেন। এমন সময় সকাল ৯টা বা ১০টার দিকে আমি বায়তুল মোকাররমের সামনে অবস্থান করছিলাম। মাইকে জাসদ অফিস থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, জিয়াউর রহমান শহীদ মিনারে এসে ভাষণ দেবেন। আরো শুনতে পেলাম, জাসদ ছাত্রলীগ নেতা আ ফ ম মাহবুবুল হক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
কর্নেল আবু তাহের চেয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান যেন শহীদ মিনারে এসে তাদের সঙ্গে বিপ্লবের ঘোষণা দেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের শুভানুধ্যায়ী অফিসাররা তাকে শহীদ মিনারে যেতে বারণ করলেন, কেননা ব্যাপারটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারত। জিয়াউর রহমান তাদের পরামর্শ শুনে শহীদ মিনারে যেতে অস্বীকার করলেন। এতে কর্নেল আবু তাহের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হলেন। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুললেন।
এদিকে সেনাবাহিনীতে শুরু হলো এক মহাবিপর্যয়। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা কিছু সৈনিককে সেনা অফিসারদের হত্যা করতে উসকানি দিলেন। এই ভয়াবহ উসকানিতে বেশ কিছু সেনা অফিসার নিহত হলেন। অনেক সেনা অফিসার প্রাণ বাঁচাতে ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেলেন। একটি স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই হত্যাযজ্ঞ ছিল চরম দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ড। জিয়াউর রহমান প্রবল ধৈর্য ও সাহসিকতার ঝুঁকি নিয়ে বিভ্রান্ত সৈনিকদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। অবশেষে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সিপাহি জনতার সুমহান ঐক্য ও অভ্যুত্থানের মূল নির্যাস ছিল জাতীয় স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব যেকোনো মূল্যে সংরক্ষণ। এই অভ্যুত্থান ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সিপাহি জনতার বজ্রনির্ঘোষ ঘোষণা। ব্যতিক্রমী, অনাকাঙ্ক্ষিত যা কিছু এই অভ্যুত্থানকে অজুহাত করে ঘটেছে, তা ইতিহাসের বিচ্যুতি বা Aberration মাত্র। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের জনগণ জানিয়ে দিল তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে কখনোই মাথা নোয়াবে না। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ভারত তোষণকারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসন এবং জুলুমের অবসান হয়। বাংলাদেশের মজলুম জনগণের আরো একটি বিশাল বিজয় অর্জিত হয়। এসব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ঘোষণা করল-
শাবাশ, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয় :
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
৭ নভেম্বরের সিপাহি জনতার অভ্যুত্থান আমাদের এই শিক্ষাই দেয়, ধ্বংসের মুখেও আমরা কখনো মাথা নোয়াব না।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ