বিএনপি নেতাদের অভিযোগ
কারাগারে থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিভিন্ন সময় দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ দাবি করেছেন।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মির্জা ফখরুল প্রথমবারের মতো ‘স্লো পয়জনিং’ নিয়ে কথা বলেন। সে সময় তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে স্লো পয়জন দেওয়া হয়েছিল কি না?
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে যুবদলের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ প্রশ্ন তুলেছিলেন।
সেখানে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স ৭৫ বছরের বেশি। তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটক রাখা হয়েছিল। স্যাঁতসেঁতে কারাগারের কক্ষে ইঁদুর ঘোরাঘুরি করত। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এখন অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সেই সময়ে খালেদা জিয়াকে কোনো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই। তাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। ডাক্তাররা বলছেন আমাদের সব বিদ্যা, জ্ঞান শেষ; আমরা এখানে আর কিছু করতে পারব না।
এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়নের পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপির সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, তিনি ওই কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারপরে তার শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। ভয়াবহ অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও রেহাই পান নাই। তাকে মিথ্যা সাজা দিয়ে মিথ্যা মামলাতে সাজা দিয়ে ছয় বছর বন্দি করে রেখেছে। দুই বছর পুরনো ঢাকার সেই কারাগারে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখেছিল। তারপর দুই বছর হাসপাতাল রেখেছিল বন্দি করে। আর দুই বছর বাড়িতে বন্দি করে রেখেছে।
এ বছরের ২৯ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল বলে দাবি করেন। রাজধানীতে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, ভারতীয় এক সাংবাদিক ঢাকায় এসেছিলেন। যখন আমার সঙ্গে দেখা হয় তখন তিনি বলেন, আমরা কী নিয়ে লাফালাফি করছি, উনি (খালেদা) তো বাঁচবেন না দুই বছরও। আমি বললাম কেন? তিনি বললেন, ওভাবেই ডিজাইন করা আছে। অর্থাৎ এমন করে ডিজাইন করা হয়েছে, উনি ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করবেন।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার আজকের অসুস্থতা স্বাভাবিক কিছু নয়। তিনি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে এমন অসুস্থ হয়েছেন। বিগত সরকারের সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল
গত ৪ ডিসেম্বর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনও একই দাবি করেন। তিনি নরসিংদী শিশু একাডেমিতে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ অবস্থায় কারাগারে গিয়েছিলেন। তাকে ব্রিটিশ আমলের জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত কারাগারে নিয়ে রাখা হয়। যেখানে মানুষ থাকার কোনো পরিবেশ ছিল না, পোকামাকড়ের আশ্রয়স্থল ছিল। সেখানে রেখে তাকে স্লো পয়জনিং করে ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে ছয়টি বছর বিনা অপরাধে জেলে আটকে রাখা হয়েছে।