দেশে ফিরে প্রেস ব্রিফিং
সংস্কার নিয়ে মতানৈক্য বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে বসে এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের পথ বের করতে জাতির স্বার্থে সরকারের অনুরোধে সবাই সাড়া দেবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, মতানৈক্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হোক, তবে মতবিরোধ যেন না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবেই। কারণ সব দলতো ভিন্ন ভিন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতপার্থক্য থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। আমরা সবার মতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। তবে এতে বিরোধ লেগে গেছে বা দেশ অস্থির হয়ে গেছে-এটা চিন্তা করতে রাজি নই।
জামায়াত আমির বলেন, সরকার অনুরোধ করেছে যে, সবাই বসে যদি একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে তাহলে তাদের জন্য ভালো। আমরাই প্রথম সবাইকে বসে খোলামেলা আলোচনা করে দেশ ও জাতির স্বার্থে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। আশা করি অন্যরা আমাদের এই আহবানে সাড়া দেবেন।
তিনি মঙ্গলবার ভোরে প্রায় দুই সপ্তাহ বিভিন্ন দেশ সফর শেষে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এ সময় সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, আমি শুনেছি-বিএনপি ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে , এটি চূড়ান্ত নয়। এরমধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে। আমরা প্রায় এক বছর আগে প্রার্থীদের নাম স্থানীয়ভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকা সময়মতো কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করব। তবে যেহেতু আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে একা নির্বাচন করবো না, তাই সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা ও দেশবাসী সবাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেখতে চাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৯ অক্টোবর আমির পবিত্র ওমরাহ পালনে যাই। পরে ২২ তারিখে যাই যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে
সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি নিউইয়র্ক, বাফেলো এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের কথা শুনেছি। এরপর যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর শেষে আজ (মঙ্গলবার) দেশে ফিরেছি।
তিনি বলেন, তুরস্কেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। বাংলাদেশি ডায়াসপরাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি আসলে দেশ ও জনগণের প্রয়োজনেই দেশ থেকে বের হয়েছিলাম। যেখানেই গেছি, দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখেই কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বলেছি-দুনিয়ার সবার সঙ্গে আমরা সম্মানজনক সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্ক হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে।
জামায়াত আমির বলেন, প্রবাসীদের আমরা দুটি ম্যাসেজ দিয়েছি। একটি হলো-বাংলাদেশ আমাদের সবার। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ থেকে দেশটি মুক্ত হয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে প্রবাসীদেরও ভূমিকা আছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার ছিল না, আমরা সব জায়গায় কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ-তারা ভোটার তালিকায় প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেখানেও কিছু সমস্যা রয়েছে। অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে সফ্টওয়্যার সমস্যায় অনেকে ভোটার হতে পারেননি। আরো ১৫ দিন সময় বাড়ানো এবং প্রক্রিয়া ও শর্ত সহজ করে ভোটাধিকারের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটা ম্যাসেজ দিয়েছি যে, প্রবাসীদের দায়িত্ব শুধু দেশকে দেয়া নয়, দেশেরও দায়িত্ব তাদের সম্মান দেয়া। আমরা প্রবাসে-দেশে যারা আছে, সব হাত একত্রে করে আগাতে চাই। এজন্য আমরা বলেছি-জাতীয় সংসদসহ সরকার পরিচালনা এবং দেশ শাসনের সর্বক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ জামায়াত আমির বলেন, আপনারা ব্যক্তিগতভাবে জাতির বিবেক, আর মিডিয়া হাউজগুলো দর্পণ। দেশ গড়ার অভিযাত্রায় জামায়াত যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে, দেশ ও জাতির কল্যাণে আপনাদের সঙ্গে চাই। কারণ আপনারা শুধু সাংবাদিক নন, এদেশের নাগরিকও। তাই আমরা নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে যে মানবিক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই-এক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রগণ্য ভূমিকা প্রত্যাশা রাখি।
এ সময় জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওরানা আব্দুল হালিম, হামিদুর রহমান আযাদ ও অ্যাড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, সাইফুল আলম খান মিলন, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের আমির আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত আমির বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানান। ব্রিফিং শেষে নেতাকর্মীদের গাড়ীবহরসহ বসুন্ধরার বাসায় পৌঁছান তিনি। এ সময় নানা স্লোগান দেয়া হয়।