আন্তর্জাতিক ইসলামি বই মেলা ২০২৫
আন্তর্জাতিক ইসলামি বইমেলা-২০২৫-এর ২১তম দিন শুক্রবারে 'নাস্তিকতার ইতিকথা'সহ ৯টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের দক্ষিণ ও পূর্ব চত্বরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইসলামি বই মেলার মঞ্চে বইগুলো মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে মেলায় যুক্ত হয়। এদিন বিকেলে ও সন্ধ্যায় মেলার মূল মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উন্মোচন করা হয় মোট ৯টি বইয়ের মোড়ক।
লেখক-পাঠকের উপস্থিতিতে জমকালো বিভিন্ন আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন হওয়া গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে— নাস্তিকতার ইতিকথা, বাংলা-ভারত-পাক : লুটপাটের ইতিহাস, আফ্রিকা লুটপাটের ইতিহাস, মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, দি ইম্পসিবল স্টেইট, রক্তাক্ত ফিলিস্তিন ও মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব, চর্যাপদ : না বলা কিছু কথা, কিতাবুল আকাইদ এবং ঈমান ও কুফর।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর নানা সঙ্কট ও বিভাজনের কথা উল্লেখ করে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে এবং ইসলামি ইতিহাস, সাহিত্য ও গবেষণার প্রতি তাদের অনুরাগ বাড়াতে এ ধরনের বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ করে ‘নাস্তিকতার ইতিকথা’ গ্রন্থটি তরুণদের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণে বিশেষ প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
প্রকাশক ও লেখকরা জানান, ইতিহাস, দর্শন, সমকালীন রাজনীতি ও ইসলামি চিন্তাধারাভিত্তিক এই বইগুলো পাঠকদের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। পাশাপাশি এগুলো ইসলামি জ্ঞানের আলোকে নৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
চিকিৎসক রাফান আহমেদ বলেন, বয়ান নির্মানে এই বইগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নিজেদের বয়ান পশ্চিমা লেন্সে না দেখে ইসলামের ইতিহাসের লেন্সেই দেখা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুস্তফা মানজুর বলেন, ইসলামের একটা সার্বজনীন আবেদন আছে। এটাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এরজন্যে এই বইগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।
লেখক জাকারিয়া মাসুদ বলেন, বাংলা সাহিত্য ও চর্যাপদ অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। এই ইতিহাসকে সেক্যুলার গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধামত কাজে লাগিয়েছেন গত শতাব্দী ধরে। আমরা এই ন্যারেটিভ ভেঙে ফেলতে চাই। আমরা নতুন বয়ান বিনির্মাণ করতে চাই। এই লড়াই বিজয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত চলবে।
লেখক ও এক্টিভিস্ট ডা. শামসুল আরেফীন বলেন, আমাদের বয়ান নির্মানের এই লড়াই নিজেদেরকেই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের পথ বেয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের এই লড়াই বিজয়ের লড়াই। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে এই বিজয়ে অংশগ্রহণ করবো ইনশাআল্লাহ।
সিয়ান পাবলিকেশন প্রকাশক আহমেদ রফিক বলেন, সত্যিকার অর্থে বুদ্ধি ভিত্তিক জাতি বিনির্মান করতে চাইলে, জাতীয় পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে চাইলে এবং সুস্থ-সবল-শক্তিশালী জাতি গঠন করতে চাইলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। এর বিকল্প নেই। বইকে জীবনের মূল অনুষঙ্গে পরিণত করেন।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক ইসলামি বইমেলায় মোট ১৯৯টি স্টল রয়েছে। অংশ নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, নেতৃস্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ী ছাড়াও মিশর, লেবানন ও পাকিস্তানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলায় লেখক কর্নার, কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা এবং ফুড কর্নারেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা এবং ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।