হোম > খেলা

পকপক পরিচালকের মেয়াদে বিসিবি!

এম. এম. কায়সার

সবার আগে শুনি পকপক করা বলতে আসলে কী বোঝায়। এর আভিধানিক ব্যাখ্যা কী?
উত্তরটা এমন—কথার গুরুত্ব বা গভীরতা কম। ফাঁকা বুলি, বেহুদা শব্দের কোলাহল। অযথা অভিযোগ বা বকবক করা। কাজহীন কথার ফুলঝুরি। কম কাজের কথা+ বেশি আওয়াজ= পকপক করা।
আর এই পকপক করা পরিচালকের সংখ্যা বিসিবিতে এখন বেড়েই চলেছে। যে তালিকার সর্বশেষ সদস্য হিসেবে হাজির হয়েছেন আদনান রহমান দীপন। চরম বিতর্কিত, প্রভাবান্বিত এবং ই-ভোটিংয়ের ধাপ্পাবাজি কায়দার নির্বাচনে নির্বাচিত কিছু পরিচালকের এই অযথা পকপক করা নিয়ে বেকায়দায় বিসিবি। কখনো ভরা মজলিসে কখনো মাইক্রোফোন হাতে তারা যেভাবে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে গিয়ে অন্যকে ছোট করার চেষ্টা করছেন তাতে সার্বিকভাবে দেশের ক্রিকেটই লজ্জায় পড়ছে। এদের ক্রিকেটীয় জ্ঞান এবং তাদের হঠাৎ পাওয়া গদির গরম সইতে না পারার বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট অঙ্গনে হাসাহাসি হচ্ছে!
তারা ক্রিকেট বোর্ডের দোহাই দিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু দিনশেষে দেখা যাচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডই তাদের দেওয়া সেই বক্তব্যকে গনায় ধরছে না। উড়িয়ে দিচ্ছে। বাতিল করে দিচ্ছে। জানিয়ে দিচ্ছে এটা ক্রিকেট বোর্ডের ভাষ্য না, এসব নেহাতই ওনাদের ব্যক্তিগত মতামত।
-কী বুঝলেন?
খোদ বিসিবিই ঘোষণা দিচ্ছে এগুলো সব পকপক বক্তব্য!
দেশের ফুটবল এবং ফুটবলারদের নিয়ে বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবরের চরম বাজে মন্তব্যের রেশ না কাটতেই আরেক নতুন পরিচালক আদনান রহমান দীপন ক্রিকেট বোর্ডের নতুন জিরো জিরো সেভেন জেমস বন্ড হিসেবে নিজেকে জাহির করলেন। ক্রিকেটের এক অনুষ্ঠানে আসিফের মন্তব্যটা এতই দায়িত্বহীন ছিল যে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আনুষ্ঠানিকভাবে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিসিবির কাছে চিঠি লিখে জবাবদিহিতা দাবি করে। বিসিবিও দুঃখ প্রকাশ করে সেই চিঠির জবাব দিতে বাধ্য হয়েছিল। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সেই সময় বলতে হয়েছিল, ‘পরিচালক আসিফের বক্তব্যটা তার নিজস্ব মতামত। ওটা বিসিবির বক্তব্য না।’
ঠিক সেই চেনা সুরে গত মঙ্গলবার বিসিবির বারান্দায় একই রকমভাবে আরেকটা ব্যাখ্যা দিতে হলো আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। তিনি বলেন, আগের বোর্ডের সর্বশেষ ছয় মাসের দুর্নীতি সম্পর্কে পরিচালক আদনান রহমান দীপন যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তার (দীপনের) ব্যক্তিগত ভাবনা। আমি এটাকে ডিফেন্ড করছি, মেনে নিচ্ছি না। এরকম কোনো অডিট আমরা করছি না। তার এই সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিচ্ছি না।’
- কী বুঝলেন?
পকপক করে একজন। কিন্তু দায়টা পড়ে পুরো বোর্ডের ঘাড়ে। আর দুঃখ প্রকাশ করতে হয় বোর্ড সভাপতিকে।
এসব বেফাঁস মন্তব্য করে নিজেদের জ্ঞান-গরিমা ও গদির গরম দেখাতে গিয়ে বিসিবির পরিচালকরা সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সহায়তা করার বদলে উল্টো তার সমস্যা বাড়াচ্ছেন। পরিচালক আদনান রহমান দীপন সেদিন যমুনা টিভিতে এসে যা বলেছেন, যে অভিযোগ তুলেছেন—তাতে তো পুরোদস্তুর ফেঁসে যাওয়ার কথা বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলেরই স্বয়ং।
-কীভাবে?
সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে চলুন আরেকবার জেনে নিই সেদিন সাক্ষাৎকারে ঠিক কী বলেছিলেন আদনান রহমান দীপন-
‘নাজমুল হোসেন পাপনের বোর্ডে পেছনের ১৫ বছরে যা হয়েছে, হয়তো তার সমান সমান করাপশন বিসিবিতে না হলে কাছাকাছি করাপশন কিন্তু গত পাঁচ মাসে হয়ে গেছে। বোর্ড পরিচালক হিসেবে আমি এটা গ্যারান্টি সহকারে বলছি। আমরা এটার প্রমাণ আপনাদের দেব ধীরে ধীরে। সময় হয়ে গেছে। তদন্ত চলছে। অডিট বসে গেছে।’
অবাক করার তথ্য হলো বিসিবিতে সর্বশেষ দুর্নীতির যে টাইমফ্রেমের (পাঁচ মাস) কথা বলেছেন আদনান রহমান দীপন সে সময় এই বোর্ডে সভাপতি আর কেউ না, ছিলেন কিন্তু আমিনুল ইসলাম বুলবুলই। আর এটা কে না জানে বিসিবির বড় যত ব্যয় হয় সেই প্রক্রিয়ার নোট শিটে দুজনের স্বাক্ষর থাকাটা বাধ্যতামূলক; একজন বিসিবি সভাপতি এবং অন্যজন বিসিবির প্রধান নির্বাহী। পরিচালক আদনানের দুর্নীতিবিষয়ক মন্তব্যটা যদি সত্য হয় তাহলে কি বিসিবি সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী এর দায় এড়াতে পারবেন?
এই বাস্তবতা টের পেয়েই বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে পরিচালক আদনান রহমান দীপনের মন্তব্যকে বাতিল করে দেন। আর তাতেই প্রমাণিত, দীপন যা বলছেন সেটা স্রেফ বকবক এবং পকপক!
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমানে বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি জানি না উনি (দীপন) কেন এবং কী উদ্দেশে এটা বলেছেন। তার মতো অবস্থানে থাকা কারো কাছ থেকে এটা কাম্য নয়। বিসিবির একজন পরিচালক ঠিক কীভাবে এমন মন্তব্য করলেন, আমি এটা শুনে শকড। ঢালাও একটা অভিযোগ করেছেন তিনি।’
সুন্দর, স্বচ্ছ ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে এখন বিসিবিতে তার সভাসদের এমন সব বকবক বন্ধ করার কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। দায়িত্ব ও পরিমিতবোধ—শব্দ দুটি ছোট, কিন্তু এর ব্যাপ্তি এবং কার্যকারিতা অনেক দীর্ঘ। দুর্নীতি হলে তার কার্যকর তদন্ত হোক, প্রমাণিত হলে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তবে সেই সঙ্গে মনে রাখা উচিত বিসিবির চেয়ারে যারা বসে আছেন তাদেরও জবাবদিহিতা চাই। দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এবং বাস্তবতা বিবর্জিত হুংকার কখনোই সঠিক শাসনদর্শন হতে পারে না।
আজ যারা হুংকার দিচ্ছেন তাদের মনে রাখা উচিত ক্রিকেট বোর্ড ভোট বা রাজনীতির মঞ্চের টকশো নয়। এখানে কথা কম, ক্রিকেট বেশি—এই ফর্মুলায় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এর উল্টোটা হলে বোর্ডের এই মেয়াদ ‘পকপক পরিচালক’-এর যুগ, এই নামে পরিচিতি পাবে!

‘টাকা দিতে পারছে না চট্টগ্রাম’, মালিকানা এখন বিসিবির

জোড়া গোলে রেকর্ড গড়ে আলজেরিয়ার জয়ের নায়ক মাহরেজ

ভঙ্গুর চট্টগ্রাম শেষ মুহূর্তে সংকটে

পরিকল্পিত দলে সাফল্যের খোঁজে সিলেট

ফুরফুরে অজিদের বিপক্ষে মান রক্ষার লড়াই ইংলিশদের

বিপিএলে খেলছেন না কুশল মেন্ডিস

শচীনের পর ১৬ হাজার রানের মাইলফলকে কোহলি

টাইব্রেকারের রোমাঞ্চ শেষে সেমিতে আর্সেনাল

ক্রীড়াজগতকে বিদায় দুলাল মাহমুদের

সেনেগাল, নাইজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও কঙ্গোর জয়