বিপিএলে চিটাগং কিংসের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি সংস্করণে শামীম পাটোয়ারীর জায়গাটা বেশ পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠেন টি-টোয়েন্টির নিয়মিত মুখ। জাকের আলীর সঙ্গে শামীমের অন্তর্ভুক্তিতে মনে হচ্ছিল, লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে সাফল্য। প্রত্যাবর্তনে দারুণ শুরু করা শামীম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে ফেলেন খেই। এতটাই খেই হারিয়ে ফেলেছেন যে, অধিনায়ক লিটন দাস পর্যন্ত সমালোচনা করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে এভাবে দলের একজন খেলোয়াড়ের সমালোচনা করাটা অধিনায়কের জন্য সঠিক কাজ হয়েছে কি নাÑসেই সমালোচনাও উঠেছে।
চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টি হারের পর অধিনায়ক লিটন বলেন, ‘শামীমের ব্যাটিং নিয়ে আমি আশাহত। তার এটা (শট খেলা নিয়ে) নিয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল। আপনি সব সময় ব্যাটিং উপভোগ করতে পারবেন না। আপনার দায়িত্ব নিতে হবে।’
লিটন কেন আশাহত সেটা স্পষ্ট শামীমের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে। চলতি বছর ২৩ টি-টোয়েন্টি খেলা এই বাঁহাতি ২০ ইনিংসে ১২২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৬০ রান। স্ট্রাইক রেট দেখে মনে হবেÑবেশ ভালোই খেলেছেন তিনি। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। দলের প্রয়োজনের সময় আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ ছিলেন। এমনকি দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সে পথে হাঁটতে পারেননি। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৮ রানে তিন উইকেট পতনের পর মাঠে নেমে দায়িত্ব নেওয়ার কাজটি করতে পারেননি শামীম। তাতেই আশাহত হন অধিনায়ক লিটন দাস। যে কায়দায় বাজে শট খেলে শামীম আউট হন, তাতে অধিনায়কের মেজাজ খারাপ হতেই পারে।
পেছনের ২৩ টি-টোয়েন্টিতে ২০ ইনিংসে ব্যাট করা শামীম পাটোয়ারী ১১ ইনিংসেই আউট হয়েছেন সিঙ্গেল ডিজিটে। এর মধ্যে তিনটি শূন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পুল খেলার মতো লেন্থে বল না থাকলেও সেই শটই খেলেন শামীম। ফিরলেন বোল্ড হয়ে। এর আগের ম্যাচে অর্থাৎ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুজিব উর রহমানের করা ক্যারম ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে শট খেলার চেষ্টা করেছিলেন। তবে বল-ব্যাটের ফাঁক গলে বল স্টাম্পে, বোল্ড!
পেছনের এক ডজন ইনিংসে শামীম লোয়ার অর্ডারে দলে চাহিদা পূর্ণ করতে ব্যর্থ। কেন তার এই ব্যর্থতা? এ নিয়ে সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ‘শামীম মূলত ফিনিশার। ওকে আগে নামতে হলে সেটা অবশ্যই বাড়তি চাপের। সে কারণেই মূলত শামীম ব্যাটে রান পাচ্ছে না।’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের তুলনা প্রসঙ্গ হিসেবে এনে তিনি বলেন, ‘শামীম মূলত ম্যাক্সওয়েলের স্টাইলের খেলোয়াড়। টানা ১০-১১ ম্যাচ পারফর্ম করতে পারবে না। তারপর এক ম্যাচে হয়তো পারফর্ম করবে। তবে যেহেতু টপ অর্ডার ধসে পড়ার ফলে মাঝে মাঝে আগে নামতে হয়, শামীমকে বুঝতে হবে এ সময় তাকে ধরে খেলতে হবে। শামীম যত দ্রুত বুঝতে পারবে, ৬-৭ ওভারের সময় নেমে ওর ইউনিক শটগুলো খেলা যাবে না, তত ভালো। ফিনিশার রোলে যখন শেষদিকে নামবে, তখন এই ধরনের শটগুলো চেষ্টা করা উচিত। টপ অর্ডার কলাপ্স করার পর এমন শট খেললে ও রান পাবে না, ব্যর্থ হতেই থাকবে। এটা পুরোটাই ওর জন্য মানসিক ব্যাপার। বাড়তি চাপের কারণে এই রকম করে ফেলে।’
সাম্প্রতিক সময়ে শামীমের এই পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনো মন্তব্য করার সুযোগ আসেনি। ভালো খেললে যেমন রিওয়ার্ড আছে, ভালো না খেললে সেই পরিস্থিতিতেও আমাদের করণীয় আছে। দলে ঢোকা-বের হওয়া একটা সাধারণ বিষয়। সিরিজ চলাকালে ওর পারফরম্যান্স নিয়ে আসলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’