অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ড সবশেষ অ্যাশেজ জিতেছিল ২০১০-১১ মৌসুমে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৪ বছর। অজিভূমে আর রাজত্বের সুযোগ পায়নি ইংলিশরা। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বাজবলের যুগেও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখল ইংলিশরা। অ্যাডিলেডে ৮২ রানে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই চলতি অ্যাশেজ বগলদাবা করল প্যাট কামিন্সের দল।
অ্যাডিলেডে পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২২৮ রান। হাতে অবশিষ্ট ছিল ৪ উইকেট। এই সমীকরণ দেখে চতুর্থ দিনের শেষেই বাজিটা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। শেষদিনের সকালে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারলেন কামিন্স-স্টার্করা। তাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাটিতে ১৪ বছরেও অ্যাশেজ আক্ষেপ আরও বাড়লো ইংলিশদের। ১১ দিনে অজিদের এই সিরিজ জয় অ্যাশেজ ইতিহাসে এত কম সময়ে সিরিজ শেষ হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা।
অ্যাশেজ টেস্টের শুরু হয়েছিল পার্থে। মাত্র দুই দিনেই শেষ হয় প্রথম টেস্ট। ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২০৫ রানে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ১-০ এগিয়ে যাওয়ার পর ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত হয় দিবা-রাত্রির টেস্ট। ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে।অ্যাডিলেডেই কেবল যা একটু লড়াই হলো।
আজ সপ্তম উইকেটে উইল জ্যাকস ও জেমি স্মিথ ৯১ রানের জুটি গড়েন। স্মিথের প্রতিরোধ ভাঙে ৮৩ বলে ৬০ রান করে। এরপরই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। এরপর জ্যাকস কিছুটা লড়াই করেন, আর শেষ দিকে উইকেটে ছিলেন ব্রাইডন কার্স, যা দলের কোনো কাজে এলো না।
দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়ায় নেমে দ্বিতীয় ওভারেই বেন ডাকেটকে হারায় ইংল্যান্ড, তাকে ফেরান কামিন্স। এরপর ওলি পোপকেও শিকার ধরে টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে ১৫০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন অজি দলপতি। অধিনায়কদের এই তালিকায় শীর্ষে পাকিস্তানের ইমরান খান (১৮৭)। এরপর জো রুটকে (৩৯) আউট করে কামিন্স সে পথেও এগিয়েছেন আরো এক ধাপ। এরপর পাল্টা প্রতিরোধ শুরু করেন জ্যাক ক্রলি। তিনি আউট হন ১৫১ বলে ৮৫ রান করে। এরপর ফিরে যান হ্যারি ব্রুকও (৩০)। এবারের অ্যাশেজে ওলি পোপ ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। বড় সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছে তার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার।
ব্রুকের আউটের পর স্টোকস এসে ক্রলির সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করলেও শেষ সেশনে দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টোকসকে (৫) ফেরান লায়ন। স্টোকস ফেরার পরের ওভারেই ক্রলিকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন লায়ন। তাতে শেষ সেশনে ৩৬ ওভারে ১০১ রান তুলে চারটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শেষবেলায় অবিচ্ছিন্ন ১৩ রানের জুটি গড়ে দিনের খেলা শেষ করেন স্মিথ ও জ্যাকস।
এর আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬ ওভারে চার উইকেটে ২৭১ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ ১৮.৪ ওভার টিকেছে তারা। ১৪২ রানে আগের দিন অপরাজিত থাকা ট্রাভিস হেড ১৭০ রানে আউট হন। আলেক্স ক্যারি করেন ৭২ রানে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার এই উইকেটকিপার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিও করেছিলেন। উইকেটের পেছনেও অ্যাডিলেড টেস্টে দারুণ সুখকর সময় কাটছে তার। ৮৪.৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৩৪৯ রানে অলআউট হওয়ার পর জয়ের জন্য ৪৩৫ রানের লক্ষ্য পায় ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৩৭১ ও ৩৪৯ (হেড ১৭০, ক্যারি ৭২; টাং ৪/৭০, কার্স ৩/৮০)।
ইংল্যান্ড: ২৮৬ ও ৩৫২ (ক্রলি ৮৫, স্মিথ ৬০; কামিন্স ৩/৪৮, স্টার্ক ৩/৬২)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮২ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: অ্যালেক্স ক্যারি।
সিরিজ: ৫ টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩–০ ব্যবধানে এগিয়ে।