হোম > খেলা

একপেশে লড়াইয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ

এম. এম. কায়সার

বাংলাদেশ ২৯৬। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১৭।
এই ব্যবধানেই লেখা ম্যাচের চিত্র। পুরোপুরি একপেশে কায়দায় সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি জয়ের মিশন সম্পন্ন।
মিরপুরে সিরিজের শেষ ম্যাচে আলোচনা এবং প্রশংসার যা কিছু তার পুরোটাই শুধু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে এই ব্যাটিংটা দলের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ ওপেনিং জুটিতে তুলল ২৫.২ ওভারে ১৭৬ রান। আর পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস গুটিয়ে গেল ৩০.১ ওভারে ১১৭-তে। বাংলাদেশ জিতল ১৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। রানের হিসাবে ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জয়। আগেরটা ছিল ১৮৩ রানে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচকে বলা হচ্ছিল ‘অলিখিত ফাইনাল’। সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটে-বলে এমনই ম্যাড়মেড়ে পারফরম্যান্স করলো যে গ্যালারিতে আসা অল্পকিছু দর্শক এই ম্যাচের টিকিট রিফান্ডের দাবি তুলতে পারেন!
জয়ের জন্য ২৯৭ রান তাড়া করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং পাওয়ার মূলত পাওয়ার প্লেতেই শেষ। ৩৯ রানে হারায় তারা ৩ উইকেট। এই তিন উইকেটই শিকার করেন নাসুম আহমেদ। ১৯ ওভারে ৬৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর এই ম্যাচে একটাই অপেক্ষা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ কত রানে হারছে- সেই উত্তর পাওয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই উত্তরের জন্য বেশি অপেক্ষায় রাখেনি। এই সিরিজ জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশেরও অনেক দিনের একটা অপেক্ষা শেষ হলো। প্রায় দেড় বছর পরে চার সিরিজ এবং মাঝে একটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে বাংলাদেশ কোনো ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি জিতল। মিরপুরে এই সিরিজ জয়ের আনন্দে হোম অব ক্রিকেটে গতকাল রাতে রঙিন কনফেত্তির উৎসবও হলো।
বাংলাদেশের ২৯৬ রানের ইনিংসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো ক্ষতি ছাড়াই মিলল ৭৬ রান। দারুণ শুরু! ইনিংসের মাঝে ২৫ ওভারে স্কোরবোর্ডে রান বিনা উইকেটে ১৭৬। এটা তো আরো দুর্দান্ত! পরের ২৫ ওভারে মিলল মাত্র ১২০ রান, পড়ল ৮ উইকেট। তেমন ভালো কিছু নয়!
এই তিন ধাপের সঞ্চয়ে স্কোরবোর্ডে জমা হলো ২৯৬ রান। একটু জানিয়ে দিই আগের দুই ম্যাচে এখানে বাংলাদেশের জোগাড় ছিল মাত্র ২০৭ ও ২১৩। প্রথম ম্যাচের খেলা উইকেটেই হলো এদিনের তৃতীয় ম্যাচ। উইকেটে বল টার্ন করছিল সেই প্রথম ওভার থেকেই। তবে এবার কৌশল বদলে সুফল পেল বাংলাদেশ। প্রথম ওভার থেকেই একটু আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালালেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। দুজনেই প্রপার এবং প্রায় পারফেক্ট কায়দায় ব্যাট চালালেন। খেললেন সোজা ব্যাটে। চোখ বন্ধ করে সুইপ শট খেলার প্রবণতা খানিকটা কম ছিল দুই ওপেনারের। ওভার প্রতি ছয় সাতের ওপর রান নিয়ে সামনে বাড়েন দুজনেই। উইকেটে স্পিন বাঁক নিচ্ছিল বেশ। কিন্তু সোজা ব্যাটে শটস খেলার কারণে কখনোই তেমন ‘ব্যাটিং জটিলতায়’ পড়তে হয়নি সাইফ-সৌম্য জুটিকে।
সময়ের হিসাবে ৩১ মাস এবং ৪৫ ম্যাচ পরে এই ফরম্যাটে ওপেনিং জুটিতে শতরানের দেখা পেল বাংলাদেশ। সাইফ ৪৪ বলে ৫০ রান করলেন। তার চেয়ে ৪ বল বেশি করে সৌম্যও হাফসেঞ্চুরির আনন্দে ব্যাট তুললেন। ১৫.৩ ওভারে ১০০ রানে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। হাফসেঞ্চুরির পর দুই ওপেনার ব্যাটে আক্রমণের তেজ বাড়িয়ে দেন। মনে হচ্ছিল এই জুটির দুজনেই সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছেন। কিন্তু সেঞ্চুরির স্বপ্নটা যে তাদের দুজনেরই পুরো হলো না। সমান ৬ ছক্কা ও বাউন্ডারিতে ৭২ বলে ৮০ রান করে সাইফ যখন ফিরলেন তখন দলের স্কোর ১৭৬। আগের দুই ম্যাচের ব্যাটিং ব্যর্থতা ঘুচিয়ে দিলেন সাইফ সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে। নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে সৌম্য সরকারও বাড়তি টেনশনে পড়েন। ৯১ রানে আটকে থেকে পরের ছয় বলে কোনো রানই করতে পারেননি এবং সেই রানেই তার ইনিংস শেষ। স্পিনার আকিল হোসেনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কানেক্টিংটা তার ঠিক হলো না। বল বাতাসে ভাসতেই সৌম্য ব্যাট ফেলে দিয়ে মাথা নিচু করে দুই হাতে হাঁটু চেপে ধরলেন। সেঞ্চুরি মিসের দুঃখ তার সবটুকু জুড়ে। সেঞ্চুরি না হলেও টার্নিং উইকেটে তার এই ৯১ রানের ইনিংসটা সেঞ্চুরির মূল্যমানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত লম্বা সময়ের জন্য টিকে থাকলেও রান তোলার গতিতে খানিকটা ভাটা পড়ে। ৪৪ বল খেলে ২৮ রানে তাওহিদ হৃদয় আউট হন। নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিসের সুযোগে ৫৫ বলে ৪৪ রান করেন। তার ইনিংসে কোনো বাউন্ডারি নেই। কিন্তু ছক্কা ছিল তিনটি। পরের তিন ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদ ফিরলেন সিঙ্গেল ডিজিটে। পিঞ্চ হিটিংয়ের সুবিধা নিতেই নাসুম আহমেদকে ব্যাটিং অর্ডারে একটু আগেভাগে পাঠানো হয়। তবে ব্যাটিংয়ে জমতে পারেননি নাসুম। সেই দুঃখ অবশ্য বল হাতে পুষিয়ে দিয়েছেন তিনি। মেহেদি হাসান মিরাজ ও নুরুল হাসান সোহান শেষের কয়েক ওভারে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালান। ৩০০-এর স্বপ্ন দেখানো বাংলাদেশের স্কোর থামল ২৯৬ রানে।
পুরোদস্তুর টার্নিং উইকেটে এই রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য খালি পায়ে এবং অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট ডিঙানোর মতোই কঠিন ছিল। ১১৭ রানে শেষ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস সেই প্রমাণেই সিলমোহর দিল। আর বাংলাদেশ পেল ১৭৯ রানের জয়ের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২৯৬/৮ (৫০ ওভারে, সাইফ ৮০, সৌম্য ৯১, হৃদয় ২৮, শান্ত ৪৪, সোহান ১৬*, মিরাজ ১৭*, আকিল হোসেন ৪/৪১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১১৭/১০ (৩০.১ ওভারে, কিং ১৮, নাসুম ৩/১১, রিশাদ ৩/৫৪)।

ফল : বাংলাদেশ ১৭৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : সৌম্য সরকার। সিরিজসেরা : রিশাদ হোসেন। সিরিজ : বাংলাদেশ ২-১ এ জয়ী।

যে সমীকরণে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে পারে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড মুখোমুখি আজ

টিভির পর্দায় শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মেয়েদের ম্যাচ

সাইফ-সৌম্যে খুশি অধিনায়ক মিরাজ

যত রেকর্ড বাংলাদেশ-উইন্ডিজ ম্যাচে

নতুন চুক্তি করে মিয়ামিতেই থেকে গেলেন মেসি

বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়

কোটালীপাড়া সরকারি আদর্শ কলেজে আন্তঃবিভাগ ফুটবলের উদ্বোধন

পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে বাবর

বিপিএলে সম্ভাবনার আলো